একাদশ বিপিএলের ব্যর্থতা থেকে বড় শিক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই আসরে নানামুখী সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বোর্ডকে। তৎকালীন সভাপতি ফারুক আহমেদের ওপরও ব্যর্থতার দায় পড়েছিল, এমনকি বোর্ড থেকে তার বিদায়ের অন্যতম কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিপিএলের হযবরল আয়োজন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পর্যন্ত আক্ষেপ করে বলেছিলেন, বিপিএলের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই মাঠে হাজির হতে পারেননি।
এই অভিজ্ঞতার পর দ্বাদশ বিপিএলকে ঘিরে বিসিবি এখন অনেক বেশি সতর্ক। বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল শুরু থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন, যেন দেশের সর্বোচ্চ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখা যায়। গতকাল টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বোর্ড সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু, নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী জানান, এবারের বিপিএল আয়োজনের প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক রাখা হবে না।
বিপিএল আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপেক্স স্পোর্টস কনসালটিং, আইএমজি, রিয়েল ইম্প্যাক্ট অ্যান্ড অ্যাবসলুট লিজেন্ডস স্পোর্টস্, দ্য আইপিজে গ্রুপ, মাইন্ড ট্রি লিমিটেড ও ট্রান্সপোর্ট গ্রুপ। এ সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রেজেন্টেশন পাওয়ার পর আরও বিস্তারিত জানার জন্য দুই-তিন দিন সময় নিয়েছে বিসিবি।
স্পোর্টস মার্কেটিং কনসালটেন্ট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দুই-তিন দিনের মধ্যেই। গত বছরের বিপিএলে নিলামে থাকা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইফতেখার মিঠু। তবে কিছু দলের কোচ এবং অন্যান্য স্টাফদের বকেয়া এখনো পরিশোধ হয়নি। তিনি এটিকে বিসিবির জন্য ‘লজ্জার’ বলে উল্লেখ করেন। বকেয়া টাকার বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে বোর্ড নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ পরিশোধ করবে এবং পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করবে। পাশাপাশি যারা চুক্তি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেনি এবং ডিফল্টার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নয়নে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে ১৬টি প্রাকটিস টার্ফ মেরামতের কাজ চলছে, যে কাজ শুরু হবে শিগগিরই। বরিশালে আটটি প্র্যাকটিস পিচ এবং ২টি সেন্ট্রাল পিচ ঠিক করার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি বান্দরবানেও নতুন পিচ তৈরির কাজ করছে বিসিবি।
বোর্ড সভায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাতটি আঞ্চলিক কমিটি বাতিল করে নতুন করে গঠন করা হবে। নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে বিসিবি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে পাওয়া চিঠির বিষয়ে লিগ্যাল কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ধাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সঙ্গে বিসিবির পাঁচ বছরের একটি চুক্তি হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) ঢাকা মেট্রোপলিটনের পরিবর্তে নতুন করে ময়মনসিংহ বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সব টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহ বিভাগ খেলবে, আর ঢাকা মেট্রোপলিটন দল আর থাকবে না।
সব মিলিয়ে বিসিবি এবারের বিপিএল আয়োজনকে ঘিরে একদিকে যেমন আয়োজনের মানোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী, অন্যদিকে ডিফল্টারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত- যাতে অতীতের মতো বিতর্ক ও ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি না হয়। এছাড়া গতকাল বোর্ড সভা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ হিসেবে পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু বলেছেন, বিসিবি সভাপতি প্রতিটি বিভাগের উন্নতির গ্রাফ দেখেছেন, এটাই প্রথম। সেজন্য এই সভা দীর্ঘায়িত হয়েছে।