কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় দখল করে নিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
রোববার (১১ মে) বিকালে কার্যালয়টি দখলের পর ‘চর উন্নয়ন কমিটি, উলিপুর উপজেলা শাখা’ লেখা সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। রাত ১১টা পর্যন্ত সাইনবোর্ডটি ওই ভবনের সামনের অংশে লাগানো অবস্থায় ছিল।
তবে তাদের দাবি, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনটি পরিষ্কার করে পরিবেশ ভালো রাখার জন্য তারা ভবনটিতে কমিটির সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। এতে করে আশপাশের দোকানদার ও পথচারীরা দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন।
এছাড়াও কমিটির বেশিরভাগ সদস্য বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়টিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়ে যাওয়া কার্যালয়টিতে বর্তমানে দরজা-জানালা নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুড়িগ্রামসহ দেশের ‘চরাঞ্চলের উন্নয়নের লক্ষ্যে’ চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবিতে কুড়িগ্রামে ‘চর উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবুকে আহ্বায়ক এবং সদস্য আশরাফুল হক রুবেলকে সদস্যসচিব করে ‘চর উন্নয়ন কমিটি’ কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠন করে সভা-সমাবেশ করছে সংগঠনটি। বিএনপি ও সমমনা লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও দায়িত্বশীলদের দাবি, এটি অরাজনৈতিক সংগঠন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ও উপজেলা ‘চর উন্নয়ন কমিটির’ আহ্বায়ক সোলায়মান আলী সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভবনটি নোংরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে করে আশপাশের ব্যবসায়ী ও লোকজনের সমস্যা হয়। আমরা এটিকে পরিষ্কার রাখতে চর উন্নয়ন কমিটির অফিস কক্ষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। আইনি কোনও বাধা থাকলে আমরা সরে যাবো।’
একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে এভাবে সাইনবোর্ড লাগানো কতটা গ্রহণযোগ্য—এমন প্রশ্নের জবাবে সোলায়মান আলী বলেন, ‘আমি সেভাবে মনে করছি না। আমরা যতটা জানি এই জায়গাটা কারও নামে নেই। চর উন্নয়ন কমিটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা মনে করি, জায়গাটা যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে আশপাশের পরিবেশটা ভালো থাকবে।’
কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হাবীব নয়ন সাইনবোর্ড লাগানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল, ঠিক আছে। কিন্তু কাগজপত্রে আওয়ামী লীগ অফিস নামে কোথাও হদিস পাবেন না। তারা এটা ব্যবহার করেছে। যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছে দুর্বৃত্তায়ন করে, সেভাবে ব্যবহার করেছে। আমরা এটি অবৈধভাবে ব্যবহার করবো না। প্রক্রিয়া মেনে যেভাবে প্রশাসনের কাছে এটা লিজ নেওয়া যায়, সেভাবে ব্যবহার করবো।’
পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে আপাতত ভবনটিতে উপজেলা ‘চর উন্নয়ন কমিটির’ কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সামনের সারির কোনও নেতাকে পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয় দখল করা নিন্দনীয়। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু করার নেই। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশ্যে কিছু বলতেও পারছি না।’