নওগাঁর ১১টি উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর কাজে স্বচ্ছতা, হয়রানী মুক্ত সেবা প্রদান ও কাজের গতিশীলতা ফেরাতে ব্যাপক রদবদল করেছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে ৩১জন ইউনিয়ন ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তাকে একযোগে জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী/পদায়ন করা হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোয় অনেক বছর পর এই রকম বড় ধরণের রদবদল করায় জেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছে নওগাঁর সচেতন মহল।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহেল রানা মুঠোফোনে জানান ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুসারে ও জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা জুড়ে ৩১জন ইউনিয়ন ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তাদের বদলী করা হয়েছে। বদলীকৃত কর্মকর্তাদের অনেকেরই একই অফিসে ৩বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এছাড়া অনেকের বদলীর আবেদন ছিলো। আবার অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও ছিলো। একজন কর্মকর্তা যখন একই অফিসে দীর্ঘদিন অবস্থান করে তখন সেখানে একটি প্রভাব বিস্তার হয়। ফলে ওই এলাকার সেবা গ্রহীতারা সঠিক ভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। তাই সকল বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফেরাতেই মূলত এমন বড় ধরণের রদবদল করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
জেলার রাণীনগর উপজেলার রাণীনগর-গোনা ইউনিয়ন ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তা মোছা. ফাতেমা খাতুন ছিলেন সবচেয়ে আলোচিত। গত বছর একজন সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ১শত টাকার খাজনার রশিদ প্রদান করতে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি সংবাদকর্মীরা প্রকাশ করলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়া মামুন নামের একজন বহিরাগতকে দিয়ে অফিসের কম্পিউটার বিষয়ে সকল কাজ করার নামে মামুনের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য চালানোর বিষয়টি সংবাদকর্মীরা প্রশাসনের নজরে আনলে উপজেলা প্রশাসন ফাতেমা খাতুনকে খাজনা আদায়ের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। এতে করে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতাদের মাঝে। সেই আলোচিত ফাতেমা খাতুনকে জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম-গনেশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী করা হয়েছে। এই রকমের অনেক আলোচিত ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও বদলী করানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন যখন কোন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী একই স্টেশনে দীর্ঘদিন চাকরী করেন তখন স্বভাবতই সেখানে একটি প্রভাব বিস্তার করেন। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ অফিস ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এই ঘটনাগুলো বেশি হয়ে থাকে। এই অফিসগুলো থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন যে, মানুষগুলোর কাছে সরকারি অফিস মানেই অনেক ভয়ের একটি স্থান হিসেবে বিবেচিত। সেই মানুষদের কারণে-অকারণে বিপদে ফেলে হয়রানী করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। এই কারণে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একজন কর্মকর্তাকে বেশিদিন চাকরী করা উচিত নয়।
তাই আগামীর নতুন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন ভূমি সংক্রান্ত কাজগুলো ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে কোন প্রকারের হয়রানী ও ঘুষ ছাড়াই কর্মঘন্টা নষ্ট না করেই খুব সহজেই সেবা পেতে পারেন ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এমন রদবদল করা হয়েছে। এতে করে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজে অন্তত আগের চেয়ে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফিরে আসবে। এছাড়া সেবাগ্রহীতারা হয়রানী ও ঘুষ ছাড়াই সেবা পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগামীতে যদি ইউনিয়ন ভূমি অফিস পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন প্রকারের হয়রানী কিংবা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠিন বিভাগীয় শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আগামীতেও এই ধরণের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হবে বলে তিনি জানান।