ময়মনসিংহ , শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

এনবিআর দুই ভাগ করার প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি বললেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:০৯:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

  ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি) , জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করা ঠিক হয়েছে, এটি শ্বেতপত্রে বলা ছিল। কিন্তু দুইভাগের প্রক্রিয়া যেভাবে হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।

আজ সোমবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের বেকারত্ব বেড়েছে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতির তুলনায় শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির হার অনেক নিচে। দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কিনা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। সরকার বিনিয়োগ উপাদানগুলো খুব বেশি উৎসাহিত করতে পারছে না। আগামী প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগ তাড়িত নাও হতে পারে। সেটি হবে ভোগ তাড়িত।

কর আদায় সন্তোষজনক না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে কর আদায় নিয়ে এত সমালোচনার পরও কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কর-জিডিপি অনুপাত এখনও ১০ শতাংশের নিচে আছে। সাম্প্রতিককালে কর আদায়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের তুলনায় এখনো বেশি। বাজেটে ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব ব্যয়ের দুটি খাত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- প্রথমটি সুদ ব্যয় আর দ্বিতীয়টি ভর্তুকি। সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে এডহক ভিত্তিতে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনও প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগনাল পাবো।

দেশের দারিদ্রতার হার বাড়ছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র বাড়ছে এটা বলা বাহুল্য।

দেশের আমলাতান্ত্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চোরতন্ত্রে ছিলেন আমলারা, ব্যবসায়ীরা আর রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ আর আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরীজ্জীবিত।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের অর্থনৈতিক ধস এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের স্বর্ণ মান পরিত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো বৈশ্বিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে দেখান, কিভাবে ইতিহাসের পরিবর্তন আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

“বাস্কেট কেস” ধরণের পুরনো, নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি, স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরেন, যা আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসলামী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাসঙ্গিক অংশীদারিত্বের মডেল অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি দেখিয়েছেন—নীতিগত সংস্কার শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কৌশল নয়, এটি একটি নৈতিক ও টেকসই কাঠামো গঠনের মাধ্যম। বাংলাদেশ যখন ২০৪১ সালের ভিশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এমন চিন্তাধারাপূর্ণ ও প্রেক্ষাপটসমৃদ্ধ বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অর্জন যতই হোক, ভবিষ্যতের পথ আরও সংস্কার, উদ্ভাবনী নীতি ও নৈতিক সুস্পষ্টতার দাবি রাখে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

এনবিআর দুই ভাগ করার প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি বললেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপডেট সময় ০২:০৯:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

  ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি) , জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করা ঠিক হয়েছে, এটি শ্বেতপত্রে বলা ছিল। কিন্তু দুইভাগের প্রক্রিয়া যেভাবে হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।

আজ সোমবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের বেকারত্ব বেড়েছে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতির তুলনায় শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির হার অনেক নিচে। দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কিনা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। সরকার বিনিয়োগ উপাদানগুলো খুব বেশি উৎসাহিত করতে পারছে না। আগামী প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগ তাড়িত নাও হতে পারে। সেটি হবে ভোগ তাড়িত।

কর আদায় সন্তোষজনক না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে কর আদায় নিয়ে এত সমালোচনার পরও কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কর-জিডিপি অনুপাত এখনও ১০ শতাংশের নিচে আছে। সাম্প্রতিককালে কর আদায়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের তুলনায় এখনো বেশি। বাজেটে ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব ব্যয়ের দুটি খাত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে- প্রথমটি সুদ ব্যয় আর দ্বিতীয়টি ভর্তুকি। সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে এডহক ভিত্তিতে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনও প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগনাল পাবো।

দেশের দারিদ্রতার হার বাড়ছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র বাড়ছে এটা বলা বাহুল্য।

দেশের আমলাতান্ত্র আরও শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চোরতন্ত্রে ছিলেন আমলারা, ব্যবসায়ীরা আর রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ আর আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরীজ্জীবিত।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের অর্থনৈতিক ধস এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের স্বর্ণ মান পরিত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো বৈশ্বিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে দেখান, কিভাবে ইতিহাসের পরিবর্তন আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

“বাস্কেট কেস” ধরণের পুরনো, নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপর তিনি জোর দেন। পাশাপাশি, স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরেন, যা আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসলামী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাসঙ্গিক অংশীদারিত্বের মডেল অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি দেখিয়েছেন—নীতিগত সংস্কার শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কৌশল নয়, এটি একটি নৈতিক ও টেকসই কাঠামো গঠনের মাধ্যম। বাংলাদেশ যখন ২০৪১ সালের ভিশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এমন চিন্তাধারাপূর্ণ ও প্রেক্ষাপটসমৃদ্ধ বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অর্জন যতই হোক, ভবিষ্যতের পথ আরও সংস্কার, উদ্ভাবনী নীতি ও নৈতিক সুস্পষ্টতার দাবি রাখে।