ময়মনসিংহ , বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

প্রত্যেক শিশুর একটা না একটা প্রতিভা আছে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, প্রত্যেক শিশুর একটা না একটা প্রতিভা আছে। মা বাবা, স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশী সবাই মিলে শিশুদের সেই প্রতিভাকে সামনে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শিশু কিশোরদের মধ্যে প্রেরণা সৃষ্টি করা প্রতিযোগিতার একটি বড় অংশ। এর মাধ্যমে শিশুদের নিজেদের আবিষ্কার করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তারা নিজেকে জানতে শেখে। প্রতিযোগিতা তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যোগায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে এবং তারা যাতে তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে থাকে সে জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শিশু-কিশোরদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে এবং নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করতে পারছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, সে-ই প্রকৃত অর্থে এগিয়ে যেতে পারে। এই প্রতিযোগিতাটি সেই আত্ম-আবিষ্কারেরই সুযোগ করে দিয়েছে। না হলে আমি কখনোই জানতাম না যে আমি ক্লাসে প্রথম হতে পারি।’

প্রতিযোগিতার পেছনে থাকে আরও বহু অনানুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা—পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাঙ্গনে। তাই এটি শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, পরিবার, শিক্ষক ও বিচারকদের জন্যও এক আনন্দের উপলক্ষ।

বিচারকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা তাদের মেধা ও সময় দিয়ে বিচারকার্যে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য এক জোরে হাততালি প্রাপ্য। অভিভাবকরাও প্রশংসার দাবিদার—কারণ তারা সন্তানদের পাশে থেকেছেন, সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই সাফল্যের অংশীদার।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই হাততালিগুলো এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যারা এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা সবাই এই আনন্দের অংশীদার। যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের অভিনন্দন। আবার যারা অংশ নিয়েও জিততে পারেননি, তাদেরও সমান অভিনন্দন— কারণ অংশগ্রহণ করাটাই বড় অর্জন।’

তিনি বলেন, যারা জিততে পারেনি, তাদের মনে একটা জেদ কাজ করবে—‘আমি কেন পারলাম না?’ এই জেদই মানুষকে বদলে দেয়। এই প্রতিযোগিতা সেই প্রেরণাই সৃষ্টি করে। পরের বছর তারা আরও ভালো করবে, আরও এগিয়ে যাবে, এটাই আত্ম-আবিষ্কারের শুরু।

প্রতিযোগিতার তাৎপর্য তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে। না হলে আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থেকে যেতাম। প্রতিযোগিতা আমাদের জানায়— আমারও সক্ষমতা আছে, আমি আরও কিছু করতে পারি।’

মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা নতুনভাবে শুরু করার জন্য আমি উপদেষ্টাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব, কারণ এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রথম আয়োজন, তাই কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। এতে লজ্জার কিছু নেই, বরং এটি পরবর্তী আয়োজনকে আরও পরিপূর্ণ করবে। ভবিষ্যতে যেন আরও প্রতিভাবান অংশগ্রহণকারীকে আমরা আবিষ্কার করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা ফ্যাশন ডিজাইন, খাদ্য প্রস্তুতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নতুন প্রতিভা তুলে আনবে। কেউ ভালো গায়ক না হলেও ভালো বিজ্ঞানী হতে পারে, ভালো উদ্যোক্তা হতে পারে—এই প্রতিযোগিতা সেই সুযোগ তৈরি করে দেবে।’

শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর সীমার মধ্যে নেই— বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেই বিশ্বমানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। আমি সবাইকে আবারও অভিনন্দন জানাই—আয়োজক, অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক, শিক্ষক সবাইকে। আগামী বছর এই প্রতিযোগিতা আরও জাঁকজমকপূর্ণ ও আনন্দময় হোক— এই কামনা করি।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতায় সারা দেশের হাজারো শিশু অংশ নেয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্ব শেষে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। আজ প্রধান উপদেষ্টা ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরাদের  হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন কুঁড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতার ক শাখা চ্যাম্পিয়ন প্রিয়শী চক্রবর্তী ও খ শাখার চ্যাম্পিয়ন শুভমিতা তালুকদারের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও তিন লাখ টাকার পুরস্কার তুলে দেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রত্যেক শিশুর একটা না একটা প্রতিভা আছে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময় ১২:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, প্রত্যেক শিশুর একটা না একটা প্রতিভা আছে। মা বাবা, স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশী সবাই মিলে শিশুদের সেই প্রতিভাকে সামনে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শিশু কিশোরদের মধ্যে প্রেরণা সৃষ্টি করা প্রতিযোগিতার একটি বড় অংশ। এর মাধ্যমে শিশুদের নিজেদের আবিষ্কার করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তারা নিজেকে জানতে শেখে। প্রতিযোগিতা তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যোগায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে এবং তারা যাতে তাদের প্রতিভা বিকশিত করতে থাকে সে জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শিশু-কিশোরদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে, যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারছে এবং নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করতে পারছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, সে-ই প্রকৃত অর্থে এগিয়ে যেতে পারে। এই প্রতিযোগিতাটি সেই আত্ম-আবিষ্কারেরই সুযোগ করে দিয়েছে। না হলে আমি কখনোই জানতাম না যে আমি ক্লাসে প্রথম হতে পারি।’

প্রতিযোগিতার পেছনে থাকে আরও বহু অনানুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা—পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাঙ্গনে। তাই এটি শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, পরিবার, শিক্ষক ও বিচারকদের জন্যও এক আনন্দের উপলক্ষ।

বিচারকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা তাদের মেধা ও সময় দিয়ে বিচারকার্যে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের জন্য এক জোরে হাততালি প্রাপ্য। অভিভাবকরাও প্রশংসার দাবিদার—কারণ তারা সন্তানদের পাশে থেকেছেন, সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই সাফল্যের অংশীদার।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই হাততালিগুলো এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যারা এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা সবাই এই আনন্দের অংশীদার। যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের অভিনন্দন। আবার যারা অংশ নিয়েও জিততে পারেননি, তাদেরও সমান অভিনন্দন— কারণ অংশগ্রহণ করাটাই বড় অর্জন।’

তিনি বলেন, যারা জিততে পারেনি, তাদের মনে একটা জেদ কাজ করবে—‘আমি কেন পারলাম না?’ এই জেদই মানুষকে বদলে দেয়। এই প্রতিযোগিতা সেই প্রেরণাই সৃষ্টি করে। পরের বছর তারা আরও ভালো করবে, আরও এগিয়ে যাবে, এটাই আত্ম-আবিষ্কারের শুরু।

প্রতিযোগিতার তাৎপর্য তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা আমাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলে। না হলে আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থেকে যেতাম। প্রতিযোগিতা আমাদের জানায়— আমারও সক্ষমতা আছে, আমি আরও কিছু করতে পারি।’

মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা নতুনভাবে শুরু করার জন্য আমি উপদেষ্টাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব, কারণ এর মাধ্যমেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রথম আয়োজন, তাই কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। এতে লজ্জার কিছু নেই, বরং এটি পরবর্তী আয়োজনকে আরও পরিপূর্ণ করবে। ভবিষ্যতে যেন আরও প্রতিভাবান অংশগ্রহণকারীকে আমরা আবিষ্কার করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতা ফ্যাশন ডিজাইন, খাদ্য প্রস্তুতি, বিজ্ঞান, ব্যবসা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নতুন প্রতিভা তুলে আনবে। কেউ ভালো গায়ক না হলেও ভালো বিজ্ঞানী হতে পারে, ভালো উদ্যোক্তা হতে পারে—এই প্রতিযোগিতা সেই সুযোগ তৈরি করে দেবে।’

শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর সীমার মধ্যে নেই— বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেই বিশ্বমানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। আমি সবাইকে আবারও অভিনন্দন জানাই—আয়োজক, অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক, শিক্ষক সবাইকে। আগামী বছর এই প্রতিযোগিতা আরও জাঁকজমকপূর্ণ ও আনন্দময় হোক— এই কামনা করি।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতায় সারা দেশের হাজারো শিশু অংশ নেয়। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক, গল্প বলা, অভিনয়সহ মোট ১২টি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্ব শেষে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে হয় চূড়ান্ত পর্ব। আজ প্রধান উপদেষ্টা ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের সেরাদের  হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ‘নতুন কুঁড়ি-২০২৫’ প্রতিযোগিতার ক শাখা চ্যাম্পিয়ন প্রিয়শী চক্রবর্তী ও খ শাখার চ্যাম্পিয়ন শুভমিতা তালুকদারের হাতে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও তিন লাখ টাকার পুরস্কার তুলে দেন।