বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ভাঙচুর হওয়ায় মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন প্রায় তিন মাস পর আবারও চালু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে মেরামত হওয়া মিরপুর-১০ স্টেশন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে চালু করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনটি মেরামত করতে আপাতত খরচ হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। সর্বমোট খরচ হবে প্রায় ১৮ কোটি ৮৬ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে নয়, মেট্রোরেলের ফান্ড থেকে এ টাকা খরচ করা হবে।
মেট্রো স্টেশন আন্দোলনকারী ছাত্ররা ভাঙচুর করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা স্টেশন ভেঙেছে, সিসিটিভি ফুটেজ আইজিপিকে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এসে দ্রুত দুটি স্টেশন চালুর ব্যবস্থা করে।
এর মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশন প্রাথমিকভাবে সংস্কার করে চালু করতে ২২ লাখ টাকা লেগেছে। মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে ব্যয় আরও কিছুটা বেড়েছে। তবে কীভাবে এত অল্প সময়ে ও অল্প খরচে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি চালু করা সম্ভব হয়েছে তার উত্তর দিয়েছেন মেট্রোরেলের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দেশীয় মার্কেট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোর জন্য কিছু সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। যেসব সরঞ্জাম আমদানি করতে হতো সেগুলোর কিছু কিছু তুলনামূলক কম যাত্রীবহুল স্টেশন থেকে এনে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনে লাগানো হয়েছে। এছাড়াও মেট্রোরেল ডিপোতে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণের জন্য রাখা কিছু সরঞ্জামও ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, স্টেশনের পুরো ব্যবস্থাপনা নতুন করে না সাজিয়ে আগে তালিকা করা হয়েছে কোন কোন সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কীভাবে এগুলো সংস্কার বা পুনরায় চালু করা যায়।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কিছু স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কম থাকে। যেমন উত্তরা সাউথ, উত্তরা সেন্টার ও বিজয় সরণি। এগুলো যাত্রী কম থাকলেও ২০৩০ সাল লক্ষ্য করে যথাযথ সরঞ্জাম বসানো আছে। ওখান থেকে কিছু সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে দেখলাম ছয়টা মেশিন আছে। সেখান থেকে তিনটা নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোর যেসব জিনিস নষ্ট হয়েছে সেগুলো বদল করেছি।
দেশীয় উপায়ে কিছু সরঞ্জাম সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু প্রোডাক্ট, যেমন- কম্পিউটার লোকাল মার্কেট থেকে কিনেছি। মেট্রোরেলে যে গ্লাসগুলো আছে সেগুলো অগ্নিসহনীয়। দুই ঘণ্টা পর্যন্ত আগুনে টিকে থাকতে পারবে। এগুলো ইন্ডিয়া থেকে আনা। সেখানে আমরা নাসিরের টেম্পার গ্লাস এনে লাগিয়েছি। কিন্তু আমাদের স্টেশনে কন্ট্রোল রুম আছে, যেখানে সব সিস্টেম আছে। সেখানে পরবর্তীতে আমরা অগ্নিসহনীয় গ্লাস এনে লাগাবো।
স্টেশন সংস্কারের কোনও টাকা সরকার থেকে নেওয়া হবে না বলে জানান মোহাম্মদ আবদুর রউফ। তিনি বলেন, যে টাকা খরচ হয়েছে তা আমরা নতুন সরকারের কাছ থেকে নেবো না। আমাদের যে প্রফিট আছে রানিং, আমাদের প্রজেক্টের জন্য আগে থেকে যে বরাদ্দ আছে, সেখান থেকে ব্যয় করবো।
কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিগত আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, স্টেশন দুটি রক্ষণাবেক্ষণ শেষে চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে, খরচ হবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। তবে এক বছর নয়, দুই মাসের মাথায় কাজীপাড়া মেট্রোস্টেশন, এরপর দুই মাস ২৭ দিনের মাথায় সচল হয় ব্যস্ততম স্টেশন মিরপুর-১০।