ময়মনসিংহ , বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ একটি জঙ্গি সংগঠন বললেন সাদিক কায়েম একইসঙ্গে জিতলেন হজের লটারি মিসরের তিন ভাইবোন আপিলের রায়ের তারিখ ঘোষণা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে সেনাপ্রধানের আহ্বান আর্মি সার্ভিস কোরকে লাল কেল্লা তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা ৯৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার মামদানিকে ভোট দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আটক ফেসবুকে ‘১৩ তারিখ ঢাকা যাওয়ার’ পোস্ট, তারেক রহমান যদি চাইতেন ৫ আগস্টই ক্ষমতা নিতে পারতেন বললেন আব্দুস সালাম ১০ম দিনের আপিল শুনানি শুরু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে ঝিনাইদহে মধ্যরাতে মৃদুস্বরে স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মশাল মিছিল
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

শিশু ধর্ষণের চেষ্টা নোয়াখালীতে , সালিশে ৩ লাখ টাকায় দফারফা

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মাদরাসায় পড়ুয়া এক শিশুকে (৯) ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থানায় অভিযোগ না করে এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও তার অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে সালিশে বিষয়টি ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘মিটমাট’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে চরবাটা ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারে এ সালিশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী শিশু স্থানীয় খুরশিদিয়া নুরানী ইসলামিয়া মাদরাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা প্রবাসে থাকেন। অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন একই এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন তার নাতনিকে স্থানীয় খুরশিদিয়া নুরানী ইসলামিয়া মাদরাসা থেকে আনতে গিয়ে ভুক্তভোগী শিশুকে একা পেয়ে ২০ টাকা প্রদান করেন। তারপর ধর্ষণের চেষ্টা করলে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং তার মাকে বিষয়টি জানান। ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন ‘থানা-পুলিশে না যাওয়ার’ পরামর্শ দেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন সঙ্গে নিয়ে সালিশ বৈঠক বসিয়ে ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ‘মিটমাট’ করার সিদ্ধান্ত দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে। একটা মিথ্যা ঘটনাকে আমার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীর বাইরে এসেছি। বিএনপি নেতা খোকন কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজে এমন সালিশ করেছে। সে এটা করতে পারে না।

হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী জোবায়দা বেগম বলেন, আমার স্বামী সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি দুপুরে খেয়ে ঘুমাইসেন। আমাকে বললো খোকন ভাই নাকি আমার স্বামীকে ডাকে তাই আমি উনাকে ঘুম থেকে তুলে পাঠাইসি। শুরুতে আমি কাউকে কিছু বলি নাই। বর্তমানে ওনার শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা ও আঘাতের দাগ রয়েছে। তিনি যদি অন্যায় করতেন তাহলে আমাদের সমাজের লোকজন আছে তাদের বলতো কিন্তু কেনো আঘাত করা হলো? আঘাতের কারণে তিনি সেখানে বমি করে দিয়েছেন।

খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন সালিশের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমন সালিশ আমাদের এলাকায় হয়নি এবং এমন ঘটনাই এলাকায় ঘটেনি।

এদিকে চরবাটা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. গোলাম মাওলা সালিশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টার সময় যে ২০ টাকার নোট দিয়ে প্রলোভন দেখিয়েছে সেটি নিয়ে সালিশে দেখানো হয়েছে। সবার সর্বসম্মতিক্রমে ৩ লাখ টাকা ও ১০ বেত্রাঘাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে সালিশে উপস্থিত থাকার বিষয়টি উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি আছরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় খোকন ভাই আমাকে বসতে বলেছেন। আমি সালিশে ছিলাম। তবে বেশি কিছু আমি জানি না।

এ বিষয়ে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ একটি জঙ্গি সংগঠন বললেন সাদিক কায়েম

শিশু ধর্ষণের চেষ্টা নোয়াখালীতে , সালিশে ৩ লাখ টাকায় দফারফা

আপডেট সময় ১১:০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় মাদরাসায় পড়ুয়া এক শিশুকে (৯) ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থানায় অভিযোগ না করে এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও তার অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে সালিশে বিষয়টি ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘মিটমাট’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে চরবাটা ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারে এ সালিশ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী শিশু স্থানীয় খুরশিদিয়া নুরানী ইসলামিয়া মাদরাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা প্রবাসে থাকেন। অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন একই এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন তার নাতনিকে স্থানীয় খুরশিদিয়া নুরানী ইসলামিয়া মাদরাসা থেকে আনতে গিয়ে ভুক্তভোগী শিশুকে একা পেয়ে ২০ টাকা প্রদান করেন। তারপর ধর্ষণের চেষ্টা করলে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বাড়ি চলে আসেন এবং তার মাকে বিষয়টি জানান। ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন ‘থানা-পুলিশে না যাওয়ার’ পরামর্শ দেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন সঙ্গে নিয়ে সালিশ বৈঠক বসিয়ে ১০ বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পড় ও ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ‘মিটমাট’ করার সিদ্ধান্ত দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার ওপর জুলুম করা হয়েছে। একটা মিথ্যা ঘটনাকে আমার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীর বাইরে এসেছি। বিএনপি নেতা খোকন কাউকে না জানিয়ে নিজে নিজে এমন সালিশ করেছে। সে এটা করতে পারে না।

হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী জোবায়দা বেগম বলেন, আমার স্বামী সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি দুপুরে খেয়ে ঘুমাইসেন। আমাকে বললো খোকন ভাই নাকি আমার স্বামীকে ডাকে তাই আমি উনাকে ঘুম থেকে তুলে পাঠাইসি। শুরুতে আমি কাউকে কিছু বলি নাই। বর্তমানে ওনার শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা ও আঘাতের দাগ রয়েছে। তিনি যদি অন্যায় করতেন তাহলে আমাদের সমাজের লোকজন আছে তাদের বলতো কিন্তু কেনো আঘাত করা হলো? আঘাতের কারণে তিনি সেখানে বমি করে দিয়েছেন।

খাসেরহাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খোকন সালিশের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমন সালিশ আমাদের এলাকায় হয়নি এবং এমন ঘটনাই এলাকায় ঘটেনি।

এদিকে চরবাটা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. গোলাম মাওলা সালিশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টার সময় যে ২০ টাকার নোট দিয়ে প্রলোভন দেখিয়েছে সেটি নিয়ে সালিশে দেখানো হয়েছে। সবার সর্বসম্মতিক্রমে ৩ লাখ টাকা ও ১০ বেত্রাঘাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে সালিশে উপস্থিত থাকার বিষয়টি উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি আছরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় খোকন ভাই আমাকে বসতে বলেছেন। আমি সালিশে ছিলাম। তবে বেশি কিছু আমি জানি না।

এ বিষয়ে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে এমন কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।