যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফা বাণিজ্য সংলাপের প্রথম দিনেই বাংলাদেশ আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে। তবে নির্দিষ্ট হার এখনো বলা সম্ভব নয়। আজ এবং আগামীকাল আমাদের আরও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। পরে ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ৮ জুলাই বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর। নতুন এ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ এ শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য সচিব জানান, ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। সেই কাগজের ভিত্তিতেই ওয়াশিংটনে তিন দিনের এই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে যে, তারা দেশটিতে পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিও বাড়াবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। ভিয়েতনামের ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির এই ব্যবধান তুলে ধরেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত চায়। এ ছাড়া আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আরও পণ্য আমদানি করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনা, ৫ বছরে প্রতি বছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানির সমঝোতা স্মারক, সয়াবিন, এলএনজি, তুলা, সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ।
এ ছাড়া ইউএসটিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। যেমন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইইউয়ের ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্য এ হার কত হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো কঠোর অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
তৃতীয় দফা এই আলোচনা আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। আলোচনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।