চালের ভালো ফলন ও আমদানি থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে দাম, চাপে ভোক্তা ও অর্থনীতি। চলতি মাসেই বাজারে চালের মূল্য আরও বেড়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য নতুন করে চাপ তৈরি করেছে।
চালের দাম বৃদ্ধির ধারা শুরু হয় ২০২০ সালের গোড়ার দিকে। তখন মোটা চালের কেজি ছিল ৩০-৩৫ টাকা। পরে ধারাবাহিকভাবে দাম বেড়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের আগে মূল্য নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও তেমন ফল আসেনি।ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, মোটা চালের কেজি এখন ৫৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৫০ টাকা। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায় এবং সরু চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকা পর্যন্ত।চলতি বোরো মৌসুমে দেশে দুই কোটির বেশি মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে, যা বার্ষিক উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি। কিন্তু দাম কমার পরিবর্তে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কিন্তু দেশে আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। বিশেষ অনুমতি ও শুল্কছাড়ের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান জানান, ১৫ এপ্রিলের পর আর কোনো চাল আমদানি হয়নি ।বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬৭.৫% শুল্ককর প্রযোজ্য, ফলে আমদানি-নির্ভরতা কমে গেছে, আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু মুদ্রানীতি নয়, বাজার ব্যবস্থাপনাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদন না হলে ঠিক সময়ে আমদানি নিশ্চিত করতে হবে।’অধ্যাপক সেলিম রায়হান আরও বলেন, চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই আমদানির প্রয়োজন থাকলে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে ঘাটতির কারণে বাজারে সংকট তৈরি না হয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হলে শুল্ক-কর তুলে দিয়ে চাল আমদানি উন্মুক্ত করতে হবে। এতে বাজারে চাপ কিছুটা কমবে, এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত ও সময়োপযোগী নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি শুধু ভোক্তাদেরই নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

ডিজিটাল রিপোর্ট 
























