বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে সেই দায়ভার প্রধান উপদেষ্টাকেই নিতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঐকমত্য কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কমিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তিসূচক মন্তব্যগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঐকমত্যের উদাহরণ হতে পারে না।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যে পরিমাণ সংস্কার প্রয়োজন, সেটুকু সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন। জনগণ সেই নির্বাচনের ফল মেনে নেবে। কিন্তু যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়, তার দায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, গতকাল ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং তাতে তাঁর স্বাক্ষরও রয়েছে। অথচ বিএনপি যেসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিল, সেগুলোর কোনো উল্লেখ প্রতিবেদনে নেই। এটি জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি সত্যিকার অর্থে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের সংকটের সমাধান সম্ভব। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্টই সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবে। তিনি মনে করিয়ে দেন, বিএনপি আগে থেকেই আগস্টের পর নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। তখন অনেকে বলেছিলেন, বিএনপি তাড়াহুড়ো করছে কারণ তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এখন প্রমাণ হচ্ছে, নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, ততই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী শক্তিগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন তৈরি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার প্রবণতা বাড়ছে। অথচ এই সময়টি হওয়া উচিত ছিল ঐক্যের সময়—ন্যূনতম বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছে জাতির জন্য একটি স্পষ্ট পথনির্দেশ তৈরি করার সময়। কিন্তু বিভাজনের এই রাজনীতি জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করছে।
বিএনপি সংস্কার চায় না—এমন প্রচারণাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে ’৭৫-পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল বিএনপি। অথচ পরিকল্পিতভাবে একটি প্রচার চালানো হচ্ছে যে বিএনপি সংস্কারবিরোধী—এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বক্তৃতার শেষাংশে তিনি বলেন, “আমরা জাতি হিসেবে আসলে কোথায় যেতে চাই, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। এত ত্যাগ, এত প্রাণের বিনিময়ে যে পরিবর্তন এসেছে, আমরা কি সেটিকে সত্যিই জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারছি? দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা যত দিন এগোচ্ছি, ততই বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এই বিভাজন কারা তৈরি করছে, কেন করছে—এটা আমাদের গভীরভাবে বুঝতে হবে।”

অনলাইন ডেস্ক 






















