ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিশু আরাফাত মারা গেছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘন কুয়াশায় নাটোরে ৬ ট্রাকে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ ডলার বাজারে অস্থিরতা, লেনদেনের তথ্য চায় বাংলাদেশ ব্যাংক সাবেক এমপি পোটন রিমান্ডে যুবদল নেতা হত্যা মামলায় টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ,৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ চিরকুট লিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করলেন দুদকের মামলা স্ত্রী-কন্যাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছিল অস্ত্র-মাদক কেনাবেচা
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

ক’জন অজানা মুক্তিযোদ্ধার খন্ড যুদ্ধ’৭১ দিগারকান্দা ডুপির বাড়ীতে পাকসেনা হত্যার ইতিহাস

  • স্বাধীন চৌধুরী
  • আপডেট সময় ১১:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

ক’জন অজানা মুক্তিযোদ্ধার খন্ড যুদ্ধ’৭১ দিগারকান্দা ডুপির বাড়ীতে পাকসেনা হত্যার ইতিহাস ।

দিগারকান্দা- কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝামাঝি পাকিস্তানি পাঞ্জাবীরা অস্থায়ী ক্যাম্প গঠন করেছিল ১৯৭১ সালে। তাদের ভয়ে অনেকেই বাড়ী-ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। সে সুযোগে পাঞ্জাবীরা গরু-ছাগল ধরে নিয়ে জবাই করে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাত আর তারা মজা করে খেতো। মাঝে মাঝে এই এলাকার মা-বোনদের উপরে নির্যাতনের মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করত। দিগারকান্দা এলাকার সে সময়ের সচেতন মুরুব্বীদের পরামর্শে একদল সাহসী যুবক উদ্যোগ নেয় তাদের প্রতিহত করার। দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সারা রাত জেগে জেগে লুকিয়ে লুকিয়ে ঝোপঝাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকা পাহারা দিত। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মোঃ খলিলুর রহমান (পিতা: কাছম আলী মুন্সি), মোঃ আব্দুল সালাম (পিতা: আইনুদ্দিন মন্ডল), মোঃ আব্দুল বারেক (পিতা: ছফর উদ্দীন মন্ডল), মোঃ গিয়াসউদ্দিন (পিতা নেকবর আলী), মোঃ হারুন মিয়া (পিতা: হুসেন আলী বেপারী), মোঃ হেলিম মিয়া (পিতা: আলাউদ্দিন মাস্টার), মোঃ আব্দুর রহিম (পিতা: আব্দুল গফুর),মনাই মিয়া, জবেদ আলী, মোঃ রহমত আলী অরফে বদি মিয়া(পিতা: হবি শেখ), আজমত মুন্সি (পিতা: হবি শেখ),নজিম উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, কাবিল, কদ্দুস, জলু, আলাল, কাশেম, লতিফ সহ আরো অনেকেই ।

দিগারকান্দা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝামাঝি পাক সেনাদের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে প্রায় রাতেই হানা দেওয়ার চেষ্টা করত। রাত জাগা এলাকাবাসীদের সচেতনতায় পাক সেনারা সফল হয়ে উঠতে পারত না। কিন্তু তারা অত্যাচার-নির্যাতনের নেশায় লেগে থেকেছে এলাকার নিরীহ মানুষদের পিছনে।

এলাকার পাহারাদার যুব সম্প্রদায় নর পিশাচের হাত থেকে গ্রামের মানুষদের বিশেষ করে যুবতী মেয়েদের নিরাপত্তার জন্যে সবসময় আড়াল করে রাখত। গ্রামের নিরাপদ অবস্থানের কয়েকটি বাড়ীতে নারীদেরকে নিরাপদে রাখা হত। ঠিক তেমনি একটি বাড়ী দিগারকান্দা পুরাতন ডুপির বাড়ী। একদিন সে বাড়ীতে অবস্থান করছিল ১০-১৫ জন নারী, তাদের অনেকেই তরুণী-যুবতী। এলাকাবাসী তথা সে এলাকার সংঘবদ্ধ যুবক পাহারাদার দলটি সেদিনের সে রাতে বুঝতে পেরেছিল আজ ডুপির বাড়ীতে পাক সেনারা মা-বোনদের উপর আক্রমণ করবে। এলাকার সংঘবদ্ধ যুবকেরা ডুপির বাড়ীর আশে-পাশে ঝোপাঝাড়-জংলায় এবং পুকুরের পাড়ের পাশে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। ১০-১২ জন পাক সেনা যখন ডুপির বাড়ীতে আসে এবং বিভিন্ন ঘরে ঢুুকে এলাকার যুবতি মেয়েদের সন্ধান করছিল, এমন সময় পাক সেনারা কোন একটি ঘরে প্রবেশ করতেই অর্তকিতভাবে এলাকার যুবক দলটি চারিদিক থেকে সেনাদের ঘিরে ধরে। এসময় গোলাপজান (স্বামী: নজিম উদ্দিন) ও মুকুতুন্নেছা (স্বামী: লেবু মন্ডল) শাবল দিয়ে ঘাঁই দেয়- তাৎক্ষণিকভাবে সকলের সম্মিলিত আক্রমণে তৎক্ষনাত ঘটনা স্থলে ১ জন পাক সেনা মারা যায় এবং ২ জন আহত হয়। পরে ঐ মৃত পাকসেনাকে ১ কিমি দূরে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এসময় পাক সেনাদের এলোপাতারি গুলি বর্ষণে রহমত আলী ওরফে বদি মিয়া মারা যান, আর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন নজিম উদ্দিন এবং আজমত মুন্সি। এসময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ১ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার আক্রোশে পাক সেনারা তীব্র প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে। পাক সেনাদের বৃহৎ টিম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দিগারকান্দা অঞ্চলে ব্যাপক মাত্রায় টহলদারি-নজরদারি শুরু করে। এলাকা ভয়ে জনশূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রহমত আলী ওরফে বদি মিয়া’র লাশ দাফনের কোন লোক যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখন এলাকার কয়েকজন সাহসী যুবক সেদিন নিজেদের মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে শহিদ বদি মিয়া’র লাশ দাফন করেছিল। সেদিনের সেইসব দেশ প্রেমিক যুবকদের নানা জায়গা থেকে খুজে ধরে নিয়ে আসে টহলরত পাকসেনারা । সেনা ক্যাম্পে তাদেরকে হাজির করা হয় এবং তাদের উপর শুরু হয় অমানুবিক নির্যাতন। সেই সব যুবকদের মধ্যে ছিলেন মোঃ খলিলুর রহমান (পিতা: কাছম আলী মুন্সি), মোঃ আব্দুল সালাম (পিতা: আইনুদ্দিন মন্ডল), মোঃ হেলিম মিয়া (পিতা: আলাউদ্দিন মাস্টার), মোঃ আব্দুর রহিম (পিতা: আব্দুল গফুর), মনাই মিয়া, জবেদ আলী। যুবকদের নির্যাতনের ঘটনার এক পর্যায়ে পাক সেনাদের দোসর আব্দুল হান্নান এবং মেহেদী খানের দ্বারস্থ হলে তাদেরকে মুক্তি দিলেও তাদের উপর চরম-নির্মম নির্যাতন করে পাক সেনারা। বিশেষ করে মোঃ খলিলুর রহমানকে পাশবিক নির্যাতন করে ক্যাম্পের পাশে ফেলে রাখে। তাকে মৃত ভেবে পরিবারের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাকসেনাদের আড়ালে আনতে যায়। মৃতপ্রায় বিধ্বস্ত দেহের খলিলুর রহমানকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। তিনি পরিবারের সেবা-শশ্রুষায় সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তী জীবনে তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন বছরের একটি সময় (শীতকাল) তিনি মস্তিষ্কের যন্ত্রণায় অসুস্থ-অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়তেন। সারা জীবন ধরে তিনি শরীরে বহন করেছেন পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহ যন্ত্রণা।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্পের সন্ধানে মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল রচিত “দিগারকান্দা জনযুদ্ধ” কে অনুষঙ্গ করে সরজমিন ঘুরে জানা যায়, দিগারকান্দা যুদ্ধের নির্মম বেদনার বিস্তর কাহিনী আর ইতিহাস। সে সময় কথা বলছিলেন তৎকালীন সময়ের সচেতন তরুণ-যুবক মোঃ গিয়াস উদ্দিন (বর্তমানে বাকৃবি, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি), মোঃ হারুন মিয়া (নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা), দিগারকান্দা বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মালেক ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে

ক’জন অজানা মুক্তিযোদ্ধার খন্ড যুদ্ধ’৭১ দিগারকান্দা ডুপির বাড়ীতে পাকসেনা হত্যার ইতিহাস

আপডেট সময় ১১:২৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ক’জন অজানা মুক্তিযোদ্ধার খন্ড যুদ্ধ’৭১ দিগারকান্দা ডুপির বাড়ীতে পাকসেনা হত্যার ইতিহাস ।

দিগারকান্দা- কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝামাঝি পাকিস্তানি পাঞ্জাবীরা অস্থায়ী ক্যাম্প গঠন করেছিল ১৯৭১ সালে। তাদের ভয়ে অনেকেই বাড়ী-ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। সে সুযোগে পাঞ্জাবীরা গরু-ছাগল ধরে নিয়ে জবাই করে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাত আর তারা মজা করে খেতো। মাঝে মাঝে এই এলাকার মা-বোনদের উপরে নির্যাতনের মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করত। দিগারকান্দা এলাকার সে সময়ের সচেতন মুরুব্বীদের পরামর্শে একদল সাহসী যুবক উদ্যোগ নেয় তাদের প্রতিহত করার। দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সারা রাত জেগে জেগে লুকিয়ে লুকিয়ে ঝোপঝাড়ে অবস্থান নিয়ে এলাকা পাহারা দিত। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম মোঃ খলিলুর রহমান (পিতা: কাছম আলী মুন্সি), মোঃ আব্দুল সালাম (পিতা: আইনুদ্দিন মন্ডল), মোঃ আব্দুল বারেক (পিতা: ছফর উদ্দীন মন্ডল), মোঃ গিয়াসউদ্দিন (পিতা নেকবর আলী), মোঃ হারুন মিয়া (পিতা: হুসেন আলী বেপারী), মোঃ হেলিম মিয়া (পিতা: আলাউদ্দিন মাস্টার), মোঃ আব্দুর রহিম (পিতা: আব্দুল গফুর),মনাই মিয়া, জবেদ আলী, মোঃ রহমত আলী অরফে বদি মিয়া(পিতা: হবি শেখ), আজমত মুন্সি (পিতা: হবি শেখ),নজিম উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, কাবিল, কদ্দুস, জলু, আলাল, কাশেম, লতিফ সহ আরো অনেকেই ।

দিগারকান্দা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝামাঝি পাক সেনাদের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে প্রায় রাতেই হানা দেওয়ার চেষ্টা করত। রাত জাগা এলাকাবাসীদের সচেতনতায় পাক সেনারা সফল হয়ে উঠতে পারত না। কিন্তু তারা অত্যাচার-নির্যাতনের নেশায় লেগে থেকেছে এলাকার নিরীহ মানুষদের পিছনে।

এলাকার পাহারাদার যুব সম্প্রদায় নর পিশাচের হাত থেকে গ্রামের মানুষদের বিশেষ করে যুবতী মেয়েদের নিরাপত্তার জন্যে সবসময় আড়াল করে রাখত। গ্রামের নিরাপদ অবস্থানের কয়েকটি বাড়ীতে নারীদেরকে নিরাপদে রাখা হত। ঠিক তেমনি একটি বাড়ী দিগারকান্দা পুরাতন ডুপির বাড়ী। একদিন সে বাড়ীতে অবস্থান করছিল ১০-১৫ জন নারী, তাদের অনেকেই তরুণী-যুবতী। এলাকাবাসী তথা সে এলাকার সংঘবদ্ধ যুবক পাহারাদার দলটি সেদিনের সে রাতে বুঝতে পেরেছিল আজ ডুপির বাড়ীতে পাক সেনারা মা-বোনদের উপর আক্রমণ করবে। এলাকার সংঘবদ্ধ যুবকেরা ডুপির বাড়ীর আশে-পাশে ঝোপাঝাড়-জংলায় এবং পুকুরের পাড়ের পাশে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। ১০-১২ জন পাক সেনা যখন ডুপির বাড়ীতে আসে এবং বিভিন্ন ঘরে ঢুুকে এলাকার যুবতি মেয়েদের সন্ধান করছিল, এমন সময় পাক সেনারা কোন একটি ঘরে প্রবেশ করতেই অর্তকিতভাবে এলাকার যুবক দলটি চারিদিক থেকে সেনাদের ঘিরে ধরে। এসময় গোলাপজান (স্বামী: নজিম উদ্দিন) ও মুকুতুন্নেছা (স্বামী: লেবু মন্ডল) শাবল দিয়ে ঘাঁই দেয়- তাৎক্ষণিকভাবে সকলের সম্মিলিত আক্রমণে তৎক্ষনাত ঘটনা স্থলে ১ জন পাক সেনা মারা যায় এবং ২ জন আহত হয়। পরে ঐ মৃত পাকসেনাকে ১ কিমি দূরে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এসময় পাক সেনাদের এলোপাতারি গুলি বর্ষণে রহমত আলী ওরফে বদি মিয়া মারা যান, আর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন নজিম উদ্দিন এবং আজমত মুন্সি। এসময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ১ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার আক্রোশে পাক সেনারা তীব্র প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে। পাক সেনাদের বৃহৎ টিম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দিগারকান্দা অঞ্চলে ব্যাপক মাত্রায় টহলদারি-নজরদারি শুরু করে। এলাকা ভয়ে জনশূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় রহমত আলী ওরফে বদি মিয়া’র লাশ দাফনের কোন লোক যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখন এলাকার কয়েকজন সাহসী যুবক সেদিন নিজেদের মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে শহিদ বদি মিয়া’র লাশ দাফন করেছিল। সেদিনের সেইসব দেশ প্রেমিক যুবকদের নানা জায়গা থেকে খুজে ধরে নিয়ে আসে টহলরত পাকসেনারা । সেনা ক্যাম্পে তাদেরকে হাজির করা হয় এবং তাদের উপর শুরু হয় অমানুবিক নির্যাতন। সেই সব যুবকদের মধ্যে ছিলেন মোঃ খলিলুর রহমান (পিতা: কাছম আলী মুন্সি), মোঃ আব্দুল সালাম (পিতা: আইনুদ্দিন মন্ডল), মোঃ হেলিম মিয়া (পিতা: আলাউদ্দিন মাস্টার), মোঃ আব্দুর রহিম (পিতা: আব্দুল গফুর), মনাই মিয়া, জবেদ আলী। যুবকদের নির্যাতনের ঘটনার এক পর্যায়ে পাক সেনাদের দোসর আব্দুল হান্নান এবং মেহেদী খানের দ্বারস্থ হলে তাদেরকে মুক্তি দিলেও তাদের উপর চরম-নির্মম নির্যাতন করে পাক সেনারা। বিশেষ করে মোঃ খলিলুর রহমানকে পাশবিক নির্যাতন করে ক্যাম্পের পাশে ফেলে রাখে। তাকে মৃত ভেবে পরিবারের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে পাকসেনাদের আড়ালে আনতে যায়। মৃতপ্রায় বিধ্বস্ত দেহের খলিলুর রহমানকে বাড়ীতে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। তিনি পরিবারের সেবা-শশ্রুষায় সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তী জীবনে তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন বছরের একটি সময় (শীতকাল) তিনি মস্তিষ্কের যন্ত্রণায় অসুস্থ-অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়তেন। সারা জীবন ধরে তিনি শরীরে বহন করেছেন পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর নির্যাতনের ভয়াবহ যন্ত্রণা।

সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের অজানা গল্পের সন্ধানে মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল রচিত “দিগারকান্দা জনযুদ্ধ” কে অনুষঙ্গ করে সরজমিন ঘুরে জানা যায়, দিগারকান্দা যুদ্ধের নির্মম বেদনার বিস্তর কাহিনী আর ইতিহাস। সে সময় কথা বলছিলেন তৎকালীন সময়ের সচেতন তরুণ-যুবক মোঃ গিয়াস উদ্দিন (বর্তমানে বাকৃবি, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবি), মোঃ হারুন মিয়া (নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা), দিগারকান্দা বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মালেক ।