নাটকের কথা :
নাটকটি বন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন, শালবনের অস্তিত্ব সংকট এবং শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক গভীর ও মানবিক দলিল। এই নাটকের কাহিনি চলেশ, মেরী ও চলেশের মায়ের মতো চরিত্রগুলোর মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে ওঠে, যেখানে আদিবাসীদের জীবন, সংস্কৃতি, সংগ্রাম ও দীর্ঘ ইতিহাস মিশে আছে। চলেশ, যিনি তার পৈতৃক বনভূমি রক্ষায় নিরন্তর সংগ্রাম করেন, তিনি কেবল একজন ব্যক্তি নন, বরং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় এবং পূর্বপুরুষের ভূমির জন্য অবিরাম লড়াইয়ের প্রতীক। তাকে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত তার মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণ হয়—এটি শোষণের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংগ্রামের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। অন্যদিকে, আদিবাসী তরুণী মেরী তার সম্প্রদায়ের প্রথা ও বনভূমির পবিত্রতা রক্ষায় অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দেয়। যারা বন ধ্বংসের পাঁয়তারা করে, তাদের বিরুদ্ধে সে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ায়। নাটকে আদিবাসীদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে গভীর সম্পর্ক, তাদের প্রাত্যহিক জীবন এবং শিকার উৎসবের মতো সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। চলেশের মায়ের মতো চরিত্রগুলি প্রকৃতির প্রতি মানুষের সহজাত ভালোবাসা ও গভীর সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। শালবনকে এখানে কেবল গাছ হিসেবে নয়, বরং আদিবাসী সম্প্রদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার মৃত্যু বনভূমি ও সেখানকার মানুষের জীবন ও আত্মপরিচয়ের সংকটকে নির্দেশ করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বন ধ্বংসের ফলস্বরূপ কেবল প্রকৃতিই নয়, বরং আদিবাসী মানুষের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং তাদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রাম ও ইতিহাসও হারিয়ে যায়।
*নির্দেশকের কথা :
দূর্বলের উপর ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর অন্যায় অত্যাচার, শাসন শোষণ বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। ক্ষমতা, সম্পদ আর অর্থের জোড়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। এ পৃথিবীর মানবসভ্যতার প্রধান সৌন্দর্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বহুবিচিত্রময় জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য, সভ্যতা – সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে স্বমহিমায় বিরাজমান থাকা। কিন্তু ক্ষমতাশীল ও সম্পদশালী পক্ষ বরাবরই নানাবিধ অত্যাচার, নিপিড়ন ও আগ্রাসন চালিয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছে কোনো জাতিগোষ্ঠীর অগ্রযাত্রাকে। যার ফলে কালে কালে বহু ভাষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার গৌরবময় বৈশিষ্ট্য অধিকারী জাতিগোষ্ঠী ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেছে তাদের স্বকীয়তা এমনকি পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের অস্তিত্ব। বাংলা সাহিত্যের দুইজন খ্যাতিমান লেখক মহাশ্বেতা দেবী এবং সেলিনা হোসেন রচিত দুইটি ভিন্ন গল্প থেকে নির্যাস নিয়ে আমরা বিনির্মাণ করেছি সেই বহমান শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষের কাহিনী নির্ভর নাট্য প্রযোজনা “শালবৃক্ষের মৃত্যু”। পৃথিবীর সকল জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘটে চলা অবিরাম অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে এ হলো আমাদের তীব্র প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি।
ড. সৈয়দ মামুন রেজ
নির্দেশক
*মঞ্চে:
কথক: মনি রানী দে, ঋতু দাস, শ্রেয়সী ভাদুড়ী,
মো. ফয়সাল, লিমন আহমেদ, লিমা রানী ভক্তি
নীলমণি রিছিল: মনি রানী দে
প্রিয়াঙ্কা: অমি সরকার
চলেশ রিছিল: মাহফুজুর রহমান
সন্ধ্যা: জান্নাতুল ফারিয়া প্রীতি
সুবীর: মো. ফিরোজ মাহমুদ
অজয়: মো. মাহফুজুর রহমান (পিয়াস)
জয়া: লিমা রানী ভক্তি
মান্দি আদিবাসী: ঋতু দাস, শ্রেয়সী ভাদুড়ী, লিমা রানী ভক্তি, লিমন আহমেদ
বন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী: রাজন বিশ্বাস,
মো. ফয়সাল
পুলিশ অফিসার: বিপ্তন কুমার বিশ্বাস (বাঁধন)
মেরী ওরাওঁ: মোছা. রেজুয়ানা সুলতানা কনা
প্রসাদ গিন্নী: শ্রেয়সী ভাদুড়ী
প্রসাদ জি: মো. ফয়সাল
চা-ওয়ালা: মো. মাহফুজুর রহমান (পিয়াস)
ক্রেতা: ঋতু দাস
জালিম: লিমন আহমেদ (রিক্ত)
তশীলদার সিং: বিপ্তন কুমার বিশ্বাস (বাঁধন)
বনোয়ারী: মো. ফিরোজ মাহমুদ
লালচাঁদ: মো. মাহফুজুর রহমান (পিয়াস)
বুধনি: লিমা রানী ভক্তি
ওরাওঁ আদিবাসী: ঋতু দাস, শ্রেয়সী ভাদুড়ী, অমি সরকার, মনি মোহন দে, মো: আদনান সানী, সাইদুজ্জামান সজীব, ইমাম মেহেদী হাসান
*নেপথ্যে:
মঞ্চ পরিকল্পনা: নুসরাত শারমিন
রাজন বিশ্বাস, সাইদুজ্জামান সজীব
আলোক পরিকল্পনা: নুসরাত শারমিন, রুদ্র সাওজাল
মোল্লা আলভী মাহমুদ, মো. শাকিল আহমেদ
পোশাক পরিকল্পনা: নুসরাত শারমিন
পিপাসা সাহা গৌরী, হাবিবা আক্তার পিংকি, হৃদিকা ত্রিপুরা ডানা
আবহ সংগীত: সাফফাত ইসলাম শিহাব, অরূপ চৌধুরী রুদ্র, শিহাব হাসান অনিক, ত্রিত্ব ঘাগরা, হরিদাশ অধিকারী কর্ণ
ইমাম মেহেদী হাসান, ফারিয়া নূরুদ্দীন, মৌমিতা মোহন্ত রিয়া, হৃদিকা ত্রিপুরা ডানা, মায়িশাহ আনজুম, প্রিয়া আক্তার, মো: আদনান সানী, সাইদুজ্জামান সজীব
নৃত্য ও চলন বিন্যাস: মনিসা সাহা , মো. শাকিল আহমেদ
রূপসজ্জা: ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, সন্ধ্যা বেগম, সাদিয়া মেহ্জাবিন তিস্তা, অতসি সরকার, পিপাসা সাহা গৌরী, মনিসা সাহা, হাবিবা আক্তার পিংকি, মৌমিতা মোহন্ত রিয়া
দ্রব্য সামগ্রী: মোছা. রেজুয়ানা সুলতানা কনা,
মনি রানী দে, লিমন আহমেদ, রাজন বিশ্বাস
মহড়া ব্যবস্থাপক: মোছা: রেজুয়ানা সুলতানা কনা
প্রযোজনা ব্যবস্থাপক: লিমন আহমেদ (রিক্ত)
পোস্টার ডিজাইন: মো. ফয়সাল
সার্বিক সহযোগিতা: মো. শাহিন আলম, মিটি মৃ, ফাতেমা তুজ যাহরা, শাহরিয়ার সাকিব, নাহিদ হোসেন, মো. মাশফিকুর রহমান, নিশিত, শিশির, অন্তু, প্রান্ত, আবির, হাবিবুল্লাহ, তাহমিদ।