শিল্প সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, ১৯টি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের মধ্যে বাংলা পত্রিকাগুলোর (প্রথম আলো বাদে) বকেয়া ১২২ কোটি টাকা এবং ইংরেজি দৈনিকগুলোর বকেয়া প্রায় ৮৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশে পত্রিকার প্রধান আয়ের উৎস বিজ্ঞাপন। সরকারি মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় সংস্থা, ব্যাংক, টেলিকম কোম্পানি ও রিয়েল এস্টেট খাত থেকে আসে বড় অংশের বিজ্ঞাপন। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে এসব বিল বছরের পর বছর আটকে থাকে। ফলে পত্রিকাগুলোর নগদ প্রবাহে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিকের সম্পাদক শুক্রবার ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বকেয়া বিজ্ঞাপন বিলের কারণে পত্রিকা সবসময় আর্থিক চাপে থাকে, যা সামগ্রিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে বিজ্ঞাপন বিতরণের প্রক্রিয়া শক্তভাবে তদারকি করতে হবে। যেসব পত্রিকার বাস্তব সার্কুলেশন নেই, তারা যেন অযৌক্তিকভাবে বিজ্ঞাপন না পায়।’
ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সংবাদপত্রগুলো এত আর্থিক সংকটে আগে কখনো পড়েনি। সরকারি বিজ্ঞাপন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে, পাশাপাশি বেসরকারি বিজ্ঞাপনও কমছে।’
তিনি জানান, কমিশনের প্রতিবেদনে বিজ্ঞাপন বিলের নিম্ন হার এবং গত এক দশকে হার পুনর্বিবেচনা না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার জন্য আলাদা হারে বিজ্ঞাপন মূল্য নির্ধারণের সুপারিশও করা হয়েছে।
বকেয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে সংবাদপত্র মালিকরা বলেন, সরকারি সংস্থার বিল প্রদানের ধীরগতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) কাছেই ৩৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে, যার বেশির ভাগ ২০১১ থেকে ২০২২ সালের সম্পূরক বিজ্ঞাপনের। চলতি বছরের জুনে সংস্থাটি প্রায় অর্ধেক বকেয়া পরিশোধ করেছে।
তবে সমস্যা হলো, ডিএফপি বাদে অন্য কোনো সরকারি বিজ্ঞাপনের কেন্দ্রীয় হিসাব নেই। উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ের অফিসগুলো আলাদাভাবে বিজ্ঞাপন দেয়, আবার সেই বিল শুধু তারাই জানে। ফলে বছরে বাজেট ছাড় হলে কিছু বকেয়া মেটে, আবার নতুন করে বকেয়া জমতে থাকে।
একটি দৈনিকের বিপণন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ভুয়া সার্কুলেশনের কারণে প্রকৃত প্রচারসংখ্যা থাকা পত্রিকাগুলোও বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতিযোগিতায় পড়ে যায়। অনেক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত না হলেও সরকারি তালিকাভুক্ত থাকায় সমান সুবিধা পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি বিজ্ঞাপন যথেষ্ট নয়। অথচ ডিএফপির তালিকায় অনেক অনিয়মিত পত্রিকাও বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বকেয়া বিজ্ঞাপন বিলের কারণে পত্রিকার মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে। কেউ কেউ আর নিয়মিত প্রকাশও করতে পারছে না। সরকারকে প্রকৃত সার্কুলেশন ও পত্রিকার মান অনুযায়ী বিজ্ঞাপন বণ্টন করতে হবে।’