সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। বাজারভর্তি লোকজন। কেউ বাজারে আসছেন, কেউ কাজ শেষে বাড়ি ফিরছেন। এমন সময় বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়া মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী একটি বাস। আকস্মিক ধাক্কা দিচ্ছিল একের পর এক যানবাহন আর পথচারীকে। ধাক্কা খেয়ে বাসের চাকার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এক নারী। আহত হন আরও ১৪ জন। এভাবে কিছু দূর গিয়ে একপর্যায়ে থামে বাসটি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পঞ্চগড় জেলা শহরের (পঞ্চগড় বাজার) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নারীর নাম হোসনে আরা মালা (৪২)। তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার পুরাতন পঞ্চগড় এলাকার শামসুজ্জোহা তরুণের স্ত্রী। তিনি বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘আশা’র মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসটি আংশিক ভাঙচুর করেছে। পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে। এ সময় চালক পালিয়ে গেলেও তাঁর সহকারী সুমন ইসলামকে (২২) স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া থেকে পঞ্চগড় জেলা শহরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা নুসাইবা এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি বাস। পঞ্চগড় বাজারের কাছাকাছি এসে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীকে ধাক্কা দিচ্ছিল। এ সময় একজন সহকর্মীর মোটরসাইকেলের পেছনে বসে জেলা শহরের মিঠাপুকুর এলাকার আশা কার্যালয় থেকে পঞ্চগড় বাজারে যাচ্ছিলেন এনজিওকর্মী হোসনে আরা। জেলা প্রাথমিক কার্যালয়ের সামনে বাসটি তাঁদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলচালক এনজিওকর্মী নুর ইসলাম (৪০) এক পাশে ও হোসনে আরা আরেক পাশে ছিটকে পড়েন। এ সময় বাসের চাকা হোসনে আরার ওপর দিয়ে চলে গেলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। স্থানীয় লোকজন নুর ইসলামসহ আহত ১৪ জনকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে লাশটি মহাসড়ক থেকে উদ্ধার করেন। পরে লাশটি পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনার পরপরই উৎসুক ও বিক্ষুব্ধ লোকজনের ভিড়ে কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে লোকজনকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বাসটি ‘ব্রেক ফেল’ করেছিল বলে ধারণা করেন স্থানীয় লোকজন।
আফজাল হোসেন (৩৮) নামের আহত ইজিবাইকের চালক বলেন, ‘আমি যাত্রী নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় বাজারের মুখে যাওয়ামাত্রই পেছন থেকে “এই চাপাও, এই চাপাও” বলে চিৎকার শুনে আমি বাঁ দিকে চাপাচ্ছিলাম। এ সময় ভয়ে আমার যাত্রীরা লাফ দিয়ে নেমে পড়েন। পরে বাসটি আমার ইজিবাইকে ধাক্কা দিলে ইজিবাইকটি বাসের সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় আমাকেসহ ইজিবাইকটিকে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ গজ টেনে নিয়ে বাসটি থেমে যায়। পরে বাজারের লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ঘটনার পর বাসটি জব্দ করা হয়েছে এবং চালকের সহকারীকে আটক করা হয়েছে।