ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

এনসিপি নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে ‘তিনটি জিনিস’ চায়

জুলাই ঘোষণাপত্র ‘পরিপূর্ণ’ হয়নি এবং সরকার এখন পর্যন্ত জুলাই শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলা মোটরের রূপায়ন টাওয়ারে জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দলীয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাইয়ের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে; জুলাইয়ের আন্দোলনকারী, শহীদ পরিবার ও আহতদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে আবারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্রকাঠামো আমরা পাবো।’

তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে, এই ঘোষণাপত্রের আরও পরিপূর্ণতার জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছিলাম, তার কিছু বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার হত্যাকাণ্ড ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকার কারণে ঘোষণাপত্রটি পরিপূর্ণতা পায়নি।

আখতার বলেন, ‘সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর পয়েন্টে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে তফসিলে এই ঘোষণাপত্রকে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এনসিপি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। সে লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি আমরা সরকারের কাছে করে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমতৗ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে বাস্তবায়নের পথ কি হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যখন এই ঘোষণাপত্রকে পরবর্তী সংস্কারকৃত সংবিধানের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আমাদের যে নতুন সংবিধানের দাবি, তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি পুনরায় দাবি জানান, বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে যেন নতুন সংবিধান তৈরি করা হয় এবং সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, ‘জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেসব সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদকে কার্যকর করে, তার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সবার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। আমাদের তাতে আপত্তির কোনো জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বে সরকারের অবশ্য পালনীয় কিছু কর্তব্যের জায়গা রয়েছে। গণহত্যাকারীদের বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য।’

একইসঙ্গে নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন আখতার।

তিনি সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি চান যে, নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করা হবে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

এনসিপি নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে ‘তিনটি জিনিস’ চায়

আপডেট সময় ০২:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই ঘোষণাপত্র ‘পরিপূর্ণ’ হয়নি এবং সরকার এখন পর্যন্ত জুলাই শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বাংলা মোটরের রূপায়ন টাওয়ারে জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দলীয় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাইয়ের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে; জুলাইয়ের আন্দোলনকারী, শহীদ পরিবার ও আহতদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে আবারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্রকাঠামো আমরা পাবো।’

তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে, এই ঘোষণাপত্রের আরও পরিপূর্ণতার জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছিলাম, তার কিছু বিষয় অনুপস্থিত রয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার হত্যাকাণ্ড ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকার কারণে ঘোষণাপত্রটি পরিপূর্ণতা পায়নি।

আখতার বলেন, ‘সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর পয়েন্টে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে তফসিলে এই ঘোষণাপত্রকে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এনসিপি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। সে লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি আমরা সরকারের কাছে করে এসেছি।’

তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমতৗ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে বাস্তবায়নের পথ কি হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যখন এই ঘোষণাপত্রকে পরবর্তী সংস্কারকৃত সংবিধানের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আমাদের যে নতুন সংবিধানের দাবি, তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি পুনরায় দাবি জানান, বাংলাদেশে যে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে যেন নতুন সংবিধান তৈরি করা হয় এবং সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এনসিপি সদস্য সচিব বলেন, ‘জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেসব সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদকে কার্যকর করে, তার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সবার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। আমাদের তাতে আপত্তির কোনো জায়গা নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বে সরকারের অবশ্য পালনীয় কিছু কর্তব্যের জায়গা রয়েছে। গণহত্যাকারীদের বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার নিয়ে এই সরকার যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য।’

একইসঙ্গে নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন আখতার।

তিনি সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি চান যে, নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও বিচার দৃশ্যমান করা হবে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।