মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান। নিহত আলী আকবরের স্ত্রী এলমুন্নাহার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।
আসামিদের মধ্যে রায়হান কাশেম, মিজান ও আনোয়ার হোসাইন কারাগারে রয়েছেন।
মঙ্গলবার রাইয়ানকে আদালতে তোলা হলে তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন, কক্সবাজার জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাওহিদুল আনোয়ার, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম সিদ্দীকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার।
অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক খান কায়সার জানান, তারা এ ঘটনায় রাইয়ানের সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু আদালত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে আদালত রাইয়ানকে সুচিকিৎসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় কারাগারে থাকা রাইয়ান কাশেম জুলাই অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)রও জেলা সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
এদিকে, রাইয়ান কাশেমের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজারে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে জুলাই আন্দোলনে তার সহযোদ্ধারা। শহরের কালুর দোকান থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এসে মিলিত হয়। এসময় তারা সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা যায়।
এসময় বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, জুলাই বিপ্লবের সম্মুখসারির যোদ্ধা রাইয়ান কাশেমের উপর বর্বরোচিত হামলা হয়েছে এবং তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
রাইয়ান কাশেমের মুক্তির আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠক রবিউল বলেন, আল্লাহওয়ালা হ্যাচারিতে যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে আমরা তার জন্য শোকাহত। তবে নির্দোষ রাইয়ানের জামিন আবেদনের পরও তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাই আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি।
এসময় বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, এ শহরে যুবলীগ নেতা মোনাফের মত মানুষেরা প্রকাশ্যে মিছিল করতে পারে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় না। তবে রাইয়ান কাশেমের মতো বিপ্লবীদের কেন বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করা হবে?
রোববার (৫ মে) রাত ১০ টার দিকে খুরুশকুলের কুলিয়াপাড়া ও মাঝির ঘাট এলাকার ‘আল্লাওয়ালা হ্যাচারি’ নামে মৎস্য ঘেরে আলী আকবর নামের ওই যুবককে হত্যার অভিযোগ ওঠে। নিহত আলী আকবর খুরুশকুলের কুলিয়াপাড়ার মৃত দানু মিয়ার ছেলে।
ঘটনার পর হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাশেম গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, নিহত যুবক তাদের ঘেরে মাছ চুরি করতে এসে ধরা পড়ে। এসময় ওই যুবক নৈশ প্রহরীকে দা দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করলে আত্মরক্ষার্থে পাল্টা লাঠির আঘাত করা হয়৷ এতে আকবর মারা যায়।
তবে এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের দাবি, আকবর এলাকার একটি বিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে নিয়ে এসে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার স্থান ‘আল্লাহওয়ালা হ্যাচারি’তে এলাকাবাসী ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা হ্যাচারির পরিচালক রাইয়ান কাসেমের উপরও চড়াও হয়। এতে রাইয়ানকে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সোহেল। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত হ্যাচারিতে গিয়ে রাইয়ানকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় এবং মঙ্গলবার সকালে পুলিশ পাহারায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।
নিহত আলী আকবরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় সোমবার বিকেলে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাবুক্তগীন মাহমুদ শাহেল জানান, নিহত যুবকের মাথায় ও চোখে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে। হাত পেছনে বাঁধা ছিলো। কিভাবে কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা বিস্তারিত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উঠে আসবে বলে আশা করা যায়।