অনলাইন সংবাদ: হিজরি তৃতীয় সনে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার কুরাইশ মুশরিকরা ৩ হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনার দিকে রওনা হয়। বহু নারীও ছিল ওই বাহিনীতে। তারা কবিতা গেয়ে উৎসাহিত করেছে মুশরিকদের। কবিতার অর্থ ছিল ‘যদি তোমরা যুদ্ধ কর আমরা তোমাদের সঙ্গে কোলাকুলি করব, আর যদি পিছু হটো তবে তোমাদের তালাক দেব।’ হিজরি তৃতীয় সনে ওহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করেন। পাহাড়ি পথের প্রহরায় নিযুক্ত মুসলিম সৈন্যরা বিজয়ে আত্মহারা হয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরবর্তী হুকুমের অপেক্ষা না করে গণিমতের মাল সংগ্রহ করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই অরক্ষিত পাহাড়ি পথে মক্কি সৈন্যরা পুনরায় যুদ্ধের ময়দানে প্রত্যাবর্তন করে মুসলমানদের ওপর প্রচ- আক্রমণ করল। কাফেরদের আক্রমণের তীব্রতা অপ্রস্তুত মুসলমানদের ছিন্নভিন্ন ও বিপর্যস্ত করে দেয়। মুসলমান সৈন্যরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মাত্র ১২ জন আনসার এবং একজন মুহাজির তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ রসুলের সঙ্গে ছিলেন। এ যুদ্ধে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাঁত মোবারক শহীদ হয়। এই মুষ্টিমেয় সাহাবি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারপাশে মানব বর্ম বা প্রাচীর সৃষ্টি করেন। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে একে একে ১২ জন আনসার শাহাদাতবরণ করেন। অতঃপর বীর তালহা তলোয়ার ধারণ করেন। তার শরীরে সত্তরের অধিক আঘাত ছিল এবং তার হাত কাঁধ থেকে ঝুলে পড়েছিল। তিনি বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাফের সৈন্যদের পরাজিত করেন। কাফের সৈন্যদের যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আহত মুজাহিদদের একত্রিত করেন। তাদের সারিবদ্ধ করার হুকুম দেন। পুরুষের পেছনে ১৪ জন মহিলা সাহাবিও সারিতে শামিল ছিলেন। অতঃপর আল্লাহর রসুল মর্মস্পর্শী ভাষায় ভাষণ দান করেন। তিনি ভাষণের প্রারম্ভে বলেন : হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা আপনার। হে আল্লাহ, আপনি যাকে প্রশস্ত করেন তার কোনো সংকোচনকারী নেই এবং আপনি যাকে অপ্রশস্ত করেন, তার কোনো প্রশস্তকারী নেই। আপনি যাকে গুমরাহ করেন, তার কোনো হেদায়েতকারী নেই এবং আপনি যাকে হেদায়েত প্রদান করেন তার কোনো গুমরাহকারী নেই। আপনি যাকে দান করেন না, তাকে দানকারী কেউ নেই এবং আপনি যাকে দান করেন তাকে বাধাদানকারী কেউ নেই। আপনি যাকে দূরে নিক্ষেপ করেন তাকে নিকটবর্তী করার কেউ নেই এবং আপনি যাকে নিকটবর্তী করেন তাকে দূরবর্তী করার কেউ নেই।
অতঃপর তিনি বলেন, অভিশপ্ত শয়তান থেকে শ্রবণকারী এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। কেয়ামতের (ভয়াবহ) দিন মুত্তাকি এবং পরহেজগার ব্যতীত বন্ধুরা পরস্পর দুশমন হয়ে যাবে। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করেছে, সেসব মুত্তাকিকে সেদিন সুস্পষ্টভাবে বলা হবে : হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোনো ভয়ভীতি এবং ব্যথাবেদনা নেই। তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ কর এবং সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাক। তাদের চারপাশে ঘুরতে থাকবে সোনার থালা ও পানপাত্র। যা তারা কামনা করবে এবং যা তাদের চোখ শীতল করবে তাই তারা পাবে। (বলা হবে), তোমরা অনন্তকাল এখানে অবস্থান কর। তোমাদের সৎকর্মের জন্য তোমাদের জান্নাতের ওয়ারিশ করা হয়েছে। এখানে তোমাদের খাওয়ার জন্য অসংখ্য ও অগণিত ফল রয়েছে।
নাফরমান অপরাধীরা অনন্তকাল জাহান্নামের আজাবের মধ্যে অবস্থান করবে। তাদের আজাব কখনো হ্রাস করা হবে না এবং নিরাশার মধ্যে থাকবে। আমরা তাদের ওপর কোনো জুলুম করব না বরং তারা নিজেরাই জুলুমকারী। চিৎকার করে তারা জাহান্নামের রক্ষীকে বলবে, তোমার প্রভুকে বল আমাদের প্রাণ সংহার করতে। সে বলবে, (যেহেতু তোমাদের মৃত্যু হয়ে গেছে) তোমাদের অবশ্যই (এ অবস্থায়) অবস্থান করতে হবে। আমরা তোমাদের নিকট হক উপস্থাপিত করেছি; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যকে অস্বীকার করেছ।
ওহুদের যুদ্ধ প্রমাণ করে মুসলমানদের নেতার নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা প্রদর্শন করা যাবে না। আল্লাহর রহমত পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হুকুম মেনে চলা।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ