প্রতি বছর 12 ডিসেম্বর সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় । কিন্তু , কেন প্রয়োজন এই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ? আর এই সুরক্ষার লক্ষেই বা কীভাবে পৌঁছানো যাবে বা এর উপকারীতাই বা কী সেই ব্যাপারে বিশদে জেনে নেওয়া যাক ।রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুইতেরেস বলেন, ‘‘প্যানডেমিকের প্রেক্ষিতে আমরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা ও সুরক্ষার দিক থেকে নানা নতুন ধরনের পদ্ধতি দেখতে পেয়েছি । আর প্রস্তুতির দিকেও অগ্রগতি হয়েছে । আমাদের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত । সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবসে চলুন আমরা শপথ নিই যে এই সংকটকে আমরা শেষ করব । আর সুরক্ষিত ও স্বাস্থ্য সম্মত ভবিষ্যতের লক্ষে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে এখনই সকলকে সুরক্ষা দেওয়া যায় ।’’
প্রতি বছর 12 ডিসেম্বর সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয় । এই দিনেই প্রথমবার রাষ্ট্রসঙ্ঘে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব পাস করানো হয় । তাতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য সহজলভ্য ও যথাযথ গুণমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা করতে সমস্ত দেশকে আবেদন করা হয় । রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে নেওয়া সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি-তেও এটাকে যুক্ত করা হয় । আর এই বছরের থিম হল, ‘‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য : সবাইকে সুরক্ষা প্রদান করা’’ ।
কেন প্রয়োজন সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ?
ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতি, লিঙ্গ এবং সামাজিক অবস্থান ব্যতিরেকে এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ তাঁদের আর্থিক অবস্থা ও কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও যাতে সেরা চিকিৎসা পরিষেবা পায় , সেটা নিশ্চিত করাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্য । কোনও দেশের জনসংখ্যা যদি স্বাস্থ্যকর হয়, তাহলে সেই দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথ সুগম হয় । বিশেষ করে এখন, যখন আমরা একটা বিশ্বব্যাপী প্যানডেমিকের মধ্যে রয়েছি, তখন আমাদের অবশ্যই এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, সকলেই যাতে সমান ও যথাযথ গুণমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায় ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু জানিয়েছে যে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরাসরি জনসাধারণের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে । দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও দারিদ্রতা দূরীকরণের কাজে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এছাড়া সামাজিক অসাম্য দূর করার ক্ষেত্রে যে কোনও প্রচেষ্টাতেও এর একটা ভূমিকা থাকে । নাগরিকদের ভালো রাখতে কোনও একটি সরকারের প্রতিশ্রুতির নির্দশনই হল সর্বজনীন সুরক্ষা ।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার লক্ষে কীভাবে পৌঁছানো যাবে ?
হু-এর হিসেব অনুযায়ী, কোনও সম্প্রদায় বা কোনও দেশকে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আসতে গেলে কতগুলি পদক্ষেপ করতে হবে । যার মধ্যে রয়েছে,
- মানবকেন্দ্রীক সুসংহত সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এমন শক্তিশালী, উপযুক্ত ও সঠিক ভালো পরিচালিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দরকার ।
- সহজলভ্যতা – স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে । যাতে আর্থিক সমস্যার কারণে কোনও মানুষকে ওই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিতে সংকটে পড়তে না হয় । এই সুরক্ষার ব্যবস্থা একাধিক পদ্ধতিতে করা যায় ।
- অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও পরীক্ষা করার প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।
- রোগীদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিষেবা দেওয়ার জন্য সঠিক পরিমাণে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, উদ্যমী স্বাস্থ্য কর্মী প্রয়োজন ।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার উপকারিতা
ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টাল বা এনএইচপি-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উপকারে লাগতে পারে :
- জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের মান বৃদ্ধি করা ।
- দক্ষ, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধতা সম্পন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ।
- দারিদ্রতা আরও কমিয়ে দেওয়া ।
- ভালো কাজ ।
- কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা ।
- সাম্যবাদ বৃদ্ধি করা ।
- সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ।
ভারতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে 10 টি নীতি মেনে চলা হয়, তা এনএইচপি-ও জানিয়েছে ।
- সর্বজনীনতা ।
- সাম্যবাদ ।
- কাউকে বাদ না দেওয়া এবং কারও প্রতি বৈষম্য না দেখানো ।
- ভালো মানের ও বাস্তব সম্মত টানা সুরক্ষা ।
- আর্থিক সুরক্ষা ।
- রোগীদের অধিকার রক্ষা করা ।
- শক্তশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করা ।
- দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা ।
- সামাজিক অংশগ্রহণ ।
- স্বাস্থ্যকে মানুষের হাতে সঁপে দেওয়া ।
ফলে, সঠিক মানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানুষের অধিকার । পৃথিবীতে কাউকেই এর থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয় । একজন ব্যক্তি চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন নাকি পাবেন না, তা তাঁর আর্থিক পরিস্থিতি বিচার করে ঠিক করা উচিত নয় । দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে আনতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সরকার ।