কোরবানির পশুর চামড়ার সুষ্ঠু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বণ্টন নিশ্চিত করতে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
গত রোববার (১ জুন) রাতে ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। এটি সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ট্যানারি শিল্পে সরবরাহ করলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সম্ভব। এ জন্য ধর্মীয় নেতা, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন। সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমরা কাঁচা চামড়া নিয়ে কথা বলেছি। হয়তো আরও অনেকেই আসবেন। ইতোমধ্যে আমরা চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করার আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছি। যাতে কাঁচা চামড়া রফতানি সম্ভব হয়। আমি চাই না, এ দেশ থেকে কাঁচা চামড়া বাইরে রফতানি হোক। কিন্তু সঠিক দাম না পেলে আমাদের সেদিকে যেতে হবে।’
‘পৃথিবীর মোট চামড়ার সাড়ে তিন শতাংশ বাংলাদেশে হয়। এটা অনেক বড় বরকত। কিন্তু আমরা এই বরকতকে নষ্ট করে ফেলেছি। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চামড়ার অবনমনের জন্য অনেকেই দায়ী।’ উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের চেষ্টা আগে কখনোই করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এবারই প্রথম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কিছু সমস্যা হবে। প্রথম দিনে গন্ধ হবে, সুন্দর করে পরিষ্কার করে লবন দিতে পারলে গন্ধ কমে যাবে। লবণ দিয়ে তিন মাস চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে। দাম না পেলে চামড়া বেচবো না এই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। চামড়ার সঠিক দাম নিশ্চিত করার জন্য চামড়াগুলোকে সঠিক প্রক্রিয়ায় পরিচ্ছন্ন করতে হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘চামড়ায় লবণ দেওয়ার জন্য আমরা লবণ চাষিদের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মণ লবণ কিনেছি। এই লবণ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য। এতে কিছুটা হলেও লবণ চাষিরা উপকৃত হয়েছেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের পর দেশের যে অর্থনৈতিক অনুমান ছিল তার মধ্যে চামড়া অন্যতম। এছাড়া পাট ও চা এটাই মোটাদাগে অনুমান ছিল। আমাদের প্রত্যেকটা শিল্প নষ্ট হয়েছে। এমন পর্যায়ে গিয়েছে, যখন ২৫ হাজার টাকার গরুর দাম ছিল তখন চামড়ার দাম ছিল ২ হাজার টাকা। এখন ওই গরুর দাম ১ লাখ টাকা কিন্তু চামড়ার দাম ২০০ টাকা এটা। একদম অস্বাভাবিক অবস্থা।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হুসাইন, খিলগাঁও মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জহুরুল ইসলাম, দক্ষিণগাঁও সবুজবাগ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সাব্বির আহমেদ, মুফতি জাবের কাসেমী, মুফতি আব্দুল মালেক প্রমুখ।