ময়মনসিংহ , শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

জাতিসংঘ মহাসচিব ক্ষুব্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায়

জাতিসংঘ মহাসচিব ক্ষুব্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায়

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

গতকাল (১৮ মার্চ) গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।

সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

আরও বলা হয়, মহাসচিব গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ব্যাপক সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনায় হতবাক। তিনি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য জোরালো আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা যায় এবং যেসব জিম্মি এখনো মুক্তি পাননি, তাদের বিনাশর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব এর আগেও সংঘাত নিরসনে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

এর আগে আলজাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বিধ্বস্ত ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন ফলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে’ হামলা করেছে। এতে গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী ইশাম দা-আলিসসহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) গাজায় হামলা শুরুর আগে বেশিরভাগ মানুষ রমজানের সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলছিল।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আগেই এ হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং পূর্বে প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। ভবিষ্যতে হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে তারা।

এদিকে হামাস এ হামলাকে একটি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং এখন বন্দি ইসরায়েলি সেনাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হতে পারে। হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জত আল রিশেক এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত হলো দখলদারদের বন্দিদের বলিদান এবং তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত।

বিশ্বজুড়ে এই হামলার প্রতি বিভিন্ন দেশ, সংগঠন এবং জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বলেছে, গাজায় ইহুদি শত্রুদের পুনরায় আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনি জনগণ একা নয়, ইয়েমেন তাদের সহায়তা করবে।

চীনও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা গাজায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সব পক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, সব বেসামরিক নাগরিককে রক্ষা করতে হবে। বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোটও হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জাতিসংঘ মহাসচিব ক্ষুব্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায়

আপডেট সময় ০১:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

জাতিসংঘ মহাসচিব ক্ষুব্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায়

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

গতকাল (১৮ মার্চ) গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।

সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

আরও বলা হয়, মহাসচিব গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ব্যাপক সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনায় হতবাক। তিনি যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য জোরালো আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা যায় এবং যেসব জিম্মি এখনো মুক্তি পাননি, তাদের বিনাশর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব এর আগেও সংঘাত নিরসনে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

এর আগে আলজাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বিধ্বস্ত ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন ফলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিমান হামলা।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে’ হামলা করেছে। এতে গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী ইশাম দা-আলিসসহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) গাজায় হামলা শুরুর আগে বেশিরভাগ মানুষ রমজানের সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই বিস্ফোরণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার আকাশে উড়ছিল এবং সেগুলো গাজা সিটি, রাফাহ ও খান ইউনিসে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা ফেলছিল।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আগেই এ হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং পূর্বে প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যানের পর ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। ভবিষ্যতে হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে তারা।

এদিকে হামাস এ হামলাকে একটি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং এখন বন্দি ইসরায়েলি সেনাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়তে হতে পারে। হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জত আল রিশেক এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত হলো দখলদারদের বন্দিদের বলিদান এবং তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্ত।

বিশ্বজুড়ে এই হামলার প্রতি বিভিন্ন দেশ, সংগঠন এবং জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বলেছে, গাজায় ইহুদি শত্রুদের পুনরায় আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনি জনগণ একা নয়, ইয়েমেন তাদের সহায়তা করবে।

চীনও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা গাজায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে এমন যে কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং সব পক্ষকে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, সব বেসামরিক নাগরিককে রক্ষা করতে হবে। বেলজিয়ামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোটও হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।