ময়মনসিংহ , শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

জীবিকার তাগিদে ইরাকে গিয়ে খুন রাজবাড়ীর যুবক

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

জীবিকার তাগিদে চার মাস আগে ইরাকে পাড়ি জমান রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌর এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী আজাদ আলী খান (৪৭)। দালালের মাধ্যমে ইরাকে গেলেও প্রতিশ্রুত কাজ না পেয়ে বেকার সময় কাটছিল তার। পরে একটি বাসায় কাজ নিলেও বেতন নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজাদ আলী গোয়ালন্দ পৌরসভার কুমড়াকান্দি গ্রামের প্রয়াত ইয়াজদ্দিন খানের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়ায়। কয়েক দিন আগে খুন হলেও বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিহত হওয়ার খবর পান স্বজনরা। তার সংসারে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী শারমিন বেগম ও দুই সন্তান।

স্বজনরা জানান, আজাদ দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে টেইলার্সের দোকান চালাতেন। তবে আয়ে সংসার চলছিল না। পরে চাচাতো ভাই ইরাক প্রবাসী বাবুল খানের মাধ্যমে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ২৪ জুন ইরাকে যান তিনি। প্রতিশ্রুতি ছিল ভালো বেতনের কাজ দেয়ার। কিন্তু বাগদাদ শহরের কাজুমিয়াতে পৌঁছানোর পর বাবুল তাকে একটি হোটেলে রেখে চলে যান। সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর একটি বাসায় কাজ নেন আজাদ।
 
কিন্তু তিন মাস কাজ করার পরও বেতন না পেয়ে বাসার মালিকের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে। এ নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মালিক তাকে হত্যা করে লাশ নালায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছয় দিন পর দুর্গন্ধ পেয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নালায় খণ্ডিত লাশ দেখতে পান এবং পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করলে বাড়ির মালিক আত্মসমর্পণ করে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
  
আজাদের স্ত্রী শারমিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর রাতে সর্বশেষ তার (আজাদ) সঙ্গে কথা হয়। তিনি তখন ভালো নেই বলে জানান এবং নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চাচাতো ভাই বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অভাবের মধ্যে ধারদেনা করে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে তাকে পাঠাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো কাজ পাননি। মাত্র ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে পেরেছেন। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
 
আজাদের শ্যালক আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে বাবুল ফোনে জানান, কফিলের সঙ্গে বেতন নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে ১২ সেপ্টেম্বর আজাদকে তিন টুকরো করে হত্যা করে লাশ নালায় ফেলা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্গন্ধ পেয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানালে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
 
তিনি বলেন, ‘খবর দেওয়ার পর থেকে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কিন্তু তাকেও সঠিকভাবে পাচ্ছি না। এখন আমরা কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
 
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আজ সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেবো।’ 

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জীবিকার তাগিদে ইরাকে গিয়ে খুন রাজবাড়ীর যুবক

আপডেট সময় ১১:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জীবিকার তাগিদে চার মাস আগে ইরাকে পাড়ি জমান রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌর এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী আজাদ আলী খান (৪৭)। দালালের মাধ্যমে ইরাকে গেলেও প্রতিশ্রুত কাজ না পেয়ে বেকার সময় কাটছিল তার। পরে একটি বাসায় কাজ নিলেও বেতন নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজাদ আলী গোয়ালন্দ পৌরসভার কুমড়াকান্দি গ্রামের প্রয়াত ইয়াজদ্দিন খানের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়ায়। কয়েক দিন আগে খুন হলেও বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নিহত হওয়ার খবর পান স্বজনরা। তার সংসারে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী শারমিন বেগম ও দুই সন্তান।

স্বজনরা জানান, আজাদ দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে টেইলার্সের দোকান চালাতেন। তবে আয়ে সংসার চলছিল না। পরে চাচাতো ভাই ইরাক প্রবাসী বাবুল খানের মাধ্যমে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ২৪ জুন ইরাকে যান তিনি। প্রতিশ্রুতি ছিল ভালো বেতনের কাজ দেয়ার। কিন্তু বাগদাদ শহরের কাজুমিয়াতে পৌঁছানোর পর বাবুল তাকে একটি হোটেলে রেখে চলে যান। সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর একটি বাসায় কাজ নেন আজাদ।
 
কিন্তু তিন মাস কাজ করার পরও বেতন না পেয়ে বাসার মালিকের সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধে। এ নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মালিক তাকে হত্যা করে লাশ নালায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছয় দিন পর দুর্গন্ধ পেয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নালায় খণ্ডিত লাশ দেখতে পান এবং পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করলে বাড়ির মালিক আত্মসমর্পণ করে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
  
আজাদের স্ত্রী শারমিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর রাতে সর্বশেষ তার (আজাদ) সঙ্গে কথা হয়। তিনি তখন ভালো নেই বলে জানান এবং নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ফোন কেটে দেন। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চাচাতো ভাই বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অভাবের মধ্যে ধারদেনা করে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে তাকে পাঠাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো কাজ পাননি। মাত্র ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে পেরেছেন। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
 
আজাদের শ্যালক আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে বাবুল ফোনে জানান, কফিলের সঙ্গে বেতন নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে ১২ সেপ্টেম্বর আজাদকে তিন টুকরো করে হত্যা করে লাশ নালায় ফেলা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দুর্গন্ধ পেয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানালে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
 
তিনি বলেন, ‘খবর দেওয়ার পর থেকে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কিন্তু তাকেও সঠিকভাবে পাচ্ছি না। এখন আমরা কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’
 
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। আজ সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেবো।’