ময়মনসিংহ , সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

জুম্ম ছাত্র জনতা অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার খাগড়াছড়িতে

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ডাকা অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা।

আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার মিডিয়া সেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনের আশ্বাসকে আংশিক বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে জেলায় অর্ধ দিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় অবরোধকে কেন্দ্র করে ২৭ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের উপজেলা পরিষদ এলাকায় দুই পক্ষের  মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এতে বহু দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি চরম অবনতিমুখে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম ইফতেখায়রুল ইসলাম খন্দকার জেলা সদর ও খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

এ সহিংসতায় দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে তিনজন স্থানীয় পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এসময় সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ জন সেনা সদস্য, থানার ওসি ও ৩-৪ জন পুলিশ এবং ২০-২৫ জন স্থানীয় লোকজন আহত হন। সহিংসতায় দুষ্কৃতিকারীদের অগ্নিসংযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরির বাসভবনসহ রামসুপাড়া বাজার এলাকায় বহু সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়।

একইদিন  খাগড়াছড়ি রামগড় সড়কের দাতারামপাড়া এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে বিজিবির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন বিজিবি সদস্য আহত হন। ২৮ সেপ্টেম্বরের এ সহিংসতায় হতাহত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর জুম্ম ছাত্র জনতা ৮ দফা দাবিতে  নতুন করে তাদের অবরোধ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য তিন পার্বত্য জেলায় পালনের  ঘোষণা দেয়। এ সহিংসতা ও অবরোধে পুরো  খাগড়াছড়ি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। স্থবির হয় যায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।

বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয় জেলা সদর ও গুইমারায়। টহল ছাড়াও অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো জেলা শহর। এ উত্তপ্ত অবস্থায় ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে জুম্ম ছাত্র জনতার পক্ষে বৈঠকে বসেন ছয় নেতা।

ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে  আন্দোলনকারীরা তাদের আট দফা দাবি পূরণের দাবি তুললে পর্যায়ক্রমে পূরণের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা। এর প্রেক্ষিতে দুর্গোৎসব ও দাবী মানার আশ্বাসে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে জুম্ম ছাত্র জনতা।

অন্যদিকে, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সহিংস ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। সহিংসতায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে।

তাছাড়া যে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে, ডাক্তারি পরীক্ষায় সেই কিশোর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত পায়নি মেডিকেল বোর্ড।  এরইমধ্যে গত বুধবার গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা রুজু করেছে। মামলায় এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাকরি দিচ্ছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক

জুম্ম ছাত্র জনতা অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার খাগড়াছড়িতে

আপডেট সময় ১২:০২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ডাকা অবরোধ কর্মসূচি পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা।

আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার মিডিয়া সেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনের আশ্বাসকে আংশিক বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা স্কুল ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে জেলায় অর্ধ দিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় অবরোধকে কেন্দ্র করে ২৭ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের উপজেলা পরিষদ এলাকায় দুই পক্ষের  মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এতে বহু দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি চরম অবনতিমুখে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম ইফতেখায়রুল ইসলাম খন্দকার জেলা সদর ও খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

এ সহিংসতায় দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে তিনজন স্থানীয় পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এসময় সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ জন সেনা সদস্য, থানার ওসি ও ৩-৪ জন পুলিশ এবং ২০-২৫ জন স্থানীয় লোকজন আহত হন। সহিংসতায় দুষ্কৃতিকারীদের অগ্নিসংযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরির বাসভবনসহ রামসুপাড়া বাজার এলাকায় বহু সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়।

একইদিন  খাগড়াছড়ি রামগড় সড়কের দাতারামপাড়া এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে বিজিবির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন বিজিবি সদস্য আহত হন। ২৮ সেপ্টেম্বরের এ সহিংসতায় হতাহত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর জুম্ম ছাত্র জনতা ৮ দফা দাবিতে  নতুন করে তাদের অবরোধ কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য তিন পার্বত্য জেলায় পালনের  ঘোষণা দেয়। এ সহিংসতা ও অবরোধে পুরো  খাগড়াছড়ি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। স্থবির হয় যায় স্বাভাবিক জীবন যাত্রা।

বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয় জেলা সদর ও গুইমারায়। টহল ছাড়াও অস্থায়ী চৌকি বসিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো জেলা শহর। এ উত্তপ্ত অবস্থায় ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে জুম্ম ছাত্র জনতার পক্ষে বৈঠকে বসেন ছয় নেতা।

ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে  আন্দোলনকারীরা তাদের আট দফা দাবি পূরণের দাবি তুললে পর্যায়ক্রমে পূরণের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা। এর প্রেক্ষিতে দুর্গোৎসব ও দাবী মানার আশ্বাসে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে জুম্ম ছাত্র জনতা।

অন্যদিকে, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সহিংস ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। সহিংসতায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে।

তাছাড়া যে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে, ডাক্তারি পরীক্ষায় সেই কিশোর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত পায়নি মেডিকেল বোর্ড।  এরইমধ্যে গত বুধবার গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা রুজু করেছে। মামলায় এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।