ময়মনসিংহ , রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক

টাঙ্গাইলে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। সেচের ভরা মৌসুমে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় অনেক স্কিম বন্ধ রয়েছে। অনেক স্থানে সেচ-সংকটে থোড় বোরো ধান পুড়ে যাচ্ছে। 

জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০১। তদারকির অভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প এখানে জনপ্রিয়তা পায়নি। ফলে সুলভ মূল্যে সৌর বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক।

পবিসের কর্মকর্তারা জানান, টাঙ্গাইলের পাঁচ উপজেলায় যান্ত্রিক সেচের শতকরা ৬৫ ভাগই চলে ন্যাশনাল গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে। চলতি খরায় নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত সেচে সবচেয়ে দামি যন্ত্রাংশ হলো ট্রান্সফরমার। এর ভেতরে থাকে পিতলের দামি কয়েল। এ কয়েলের লোভে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা চুরি করে ট্রান্সফরমার।

গ্রাহকরা জানান, প্রতি বছরই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ট্রান্সফরমারের
দাম। ৫-২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমারের দাম ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের ভেতরে প্যাঁচানো পিতলের কয়েল ভাঙাড়ির দোকানে বেচে চোরেরা পায় বড়জোর ৫-৬ হাজার টাকা।

গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের উত্তর পাথালিয়া গ্রামের ডগাবিলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫ কেভিএ একটি ট্রান্সফরমার এক সপ্তাহে আগে চুরি যাওয়ায় তীব্র সেচ-সংকট দেখা দিয়েছে। এ ট্রান্সফরমারের আওতায় পাঁচ জন সেচ গ্রাহক রয়েছেন। অগভীর নলকূপের মাধ্যমে তারা ২০০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। গ্রাহক আনোয়ার হোসেন জানান, টানা ৩৫ বছর ধরে বিদ্যুৎচালিত একটি সেচ মোটর চালান তারা। আগে ট্রান্সফরমার চুরি গেলে অর্ধেক দামে সরবরাহ পেতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার সেচ খাতে ভর্তুকি দেয় শুনেছি। তাহলে ট্রান্সফরমার চুরির ক্ষেত্রে গ্রাহক কেন ভর্তুকি মূল্যের সেই সুযোগ পাচ্ছেন না?

অন্যান্য সেচ গ্রাহকরা জানান, চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। কিন্তু চুরির কূলকিনারা হয়নি। গোপালপুর জোনাল অফিস চুরি যাওয়া ২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার বাবদ সোয়া লাখ টাকা দাবি করছে। চাষিরা এ টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে মিলছে না ট্রান্সফরমার। চালু হচ্ছে না সেচ পাম্প। খরায় থোড় ধান পুড়ছে।

মধুপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. নূরুল আমিন জানান, চুরির পর সামর্থ্যবানরা টাকাপয়সা জমা দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার নিয়ে সেচ চালু করছেন। একটি গভীর নলকূপসহ কয়েকটি অগভীর নলকূপ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক

আপডেট সময় ১১:৪৩:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

টাঙ্গাইলে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। সেচের ভরা মৌসুমে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় অনেক স্কিম বন্ধ রয়েছে। অনেক স্থানে সেচ-সংকটে থোড় বোরো ধান পুড়ে যাচ্ছে। 

জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল, গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০১। তদারকির অভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প এখানে জনপ্রিয়তা পায়নি। ফলে সুলভ মূল্যে সৌর বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক।

পবিসের কর্মকর্তারা জানান, টাঙ্গাইলের পাঁচ উপজেলায় যান্ত্রিক সেচের শতকরা ৬৫ ভাগই চলে ন্যাশনাল গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে। চলতি খরায় নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত সেচে সবচেয়ে দামি যন্ত্রাংশ হলো ট্রান্সফরমার। এর ভেতরে থাকে পিতলের দামি কয়েল। এ কয়েলের লোভে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা চুরি করে ট্রান্সফরমার।

গ্রাহকরা জানান, প্রতি বছরই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ট্রান্সফরমারের
দাম। ৫-২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমারের দাম ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের ভেতরে প্যাঁচানো পিতলের কয়েল ভাঙাড়ির দোকানে বেচে চোরেরা পায় বড়জোর ৫-৬ হাজার টাকা।

গোপালপুর উপজেলার নগদাশিমলা ইউনিয়নের উত্তর পাথালিয়া গ্রামের ডগাবিলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ২৫ কেভিএ একটি ট্রান্সফরমার এক সপ্তাহে আগে চুরি যাওয়ায় তীব্র সেচ-সংকট দেখা দিয়েছে। এ ট্রান্সফরমারের আওতায় পাঁচ জন সেচ গ্রাহক রয়েছেন। অগভীর নলকূপের মাধ্যমে তারা ২০০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। গ্রাহক আনোয়ার হোসেন জানান, টানা ৩৫ বছর ধরে বিদ্যুৎচালিত একটি সেচ মোটর চালান তারা। আগে ট্রান্সফরমার চুরি গেলে অর্ধেক দামে সরবরাহ পেতেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এ সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার সেচ খাতে ভর্তুকি দেয় শুনেছি। তাহলে ট্রান্সফরমার চুরির ক্ষেত্রে গ্রাহক কেন ভর্তুকি মূল্যের সেই সুযোগ পাচ্ছেন না?

অন্যান্য সেচ গ্রাহকরা জানান, চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। কিন্তু চুরির কূলকিনারা হয়নি। গোপালপুর জোনাল অফিস চুরি যাওয়া ২৫ কেভিএ ট্রান্সফরমার বাবদ সোয়া লাখ টাকা দাবি করছে। চাষিরা এ টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে মিলছে না ট্রান্সফরমার। চালু হচ্ছে না সেচ পাম্প। খরায় থোড় ধান পুড়ছে।

মধুপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. নূরুল আমিন জানান, চুরির পর সামর্থ্যবানরা টাকাপয়সা জমা দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার নিয়ে সেচ চালু করছেন। একটি গভীর নলকূপসহ কয়েকটি অগভীর নলকূপ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প বন্ধ রয়েছে।