টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় ২৯ জনের নামে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী এসএম আলম হোসেন বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী এসএম আলম হোসেন কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার গাইটাল গ্রামের মৃত এসএম মোক্তার হোসেনের ছেলে। তিনি জুবায়েরের অনুসারী এবং কিশোরগঞ্জের আলমি শুরার সাথী।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে মামলায় অভিযুক্তদের নাম এ মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
মামলার আসামিরা হলেন- ঢাকা ধানমন্ডির সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, একই এলাকার ওসামা ইসলাম আনু, খুলনার বাটিয়াঘাটা উপজেলার আব্দুল্লাহ মনসুর, একই এলাকার ড. কাজী এরতেজা হাসান, উত্তরা এলাকার মোয়াজ বিন নূর, সাভার থানা এলাকার জিয়া বিন কাশেম, তুরাগ থানা (বেলাল মসজিদ) এলাকার আজিমুদ্দিন, সাভার থানার সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুগদা থানা (বড় মসজিদ) এলাকার শফিউল্লাহ, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আনাস, মোহাম্মদপুর থানা এলাকার আব্দুল্লাহ শাকিল, রমনা থানার কাকরাইল এলাকার রেজা আরিফ, উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল হান্নান, একই থানার রেজাউল করিম তরফদার, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার মুনির বিন ইউসুফ, ঢাকার সায়েম, হাজী বশির সিকদার, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মনির হোসেন, মীরপুর থানা এলাকার প্রকৌশলী মুহিবুল্লাহ, ঢাকার পল্লবী থানা এলাকার আতাউর রহমান, এলিফ্যান্ট রোড এলাকার তানভীর, তুরাগ থানার ভাটুলিয়া এলাকার বাবুল হোসেন, একই থানা এলাকার প্রকৌশলী আবুল বশর, প্রকৌশলী রেজনুর রহমান, উত্তরা থানার (সেক্টর ১০) নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওয়াসি উদ্দিন, রাজধানীর মীরপুর থানা এলাকার মিজান, তুরাগ থানার (বেলাল মসজিদ) এলাকার শাহাদাতসহ কয়েকশ’ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, উল্লেখিত আসামিরা মাওলানা সা’দ কান্ধলাভীর অনুসারী। গত ৪ ও ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় বাধা দিয়ে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে। তারা সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত বহির্ভূত আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে সা’দপন্থিদের জোড় করার মর্মে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা করতে থাকে। মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তারসই করা চিঠির মাধ্যমে সারাদেশের সা’দপন্থিদের জানান, যে আগামী ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানেই পুরনোদের জোড় হবে। ওই চিঠিতে পুরনো সাথীদের সঙ্গে মোনাসেব সাথীদেরও নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যেন টর্চলাইট ও হ্যান্ডমাইক থাকে।
মামলার ২নং আসামি আব্দুল্লাহ মনসুর ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন, পুরনোদের জোড়ে এবং বিশ্ব ইজতেমায় যদি মাওলানা সা’দ সাহেবকে আনতে দেয়া না হয় এবং তাদের যদি টঙ্গী ময়দানে ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর জোড় করতে দেয়া না হয়, তাহলে তারা সরকারের সিদ্ধান্তমতে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব হতে দেবে না।
তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্যে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে ঘুমন্ত ও পাহারারত আলমি শুরার সাথীদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৬৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মৃত শেখ সামাদের ছেলে বেলাল হোসেন (৬০) এবং বগুড়া সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া গ্রামের ওমর উদ্দিনের ছেলে তাজুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এনএম নাসিরুদ্দিন জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠে জুবায়ের অনুসারীদের ৫০০ লোক মালামাল পাহারা দেয়ার জন্য থাকতে পারবে। এছাড়া, পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মাঠ।