ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই ইসলামী দল হয় না বললেন সালাহউদ্দিন কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল হবে বললেন শিক্ষা সচিব বিএনপি কৃষকদের হাতকে শক্তিশালী করবে বললেন তারেক রহমান শিক্ষকদের দাবি দাওয়া নিয়ে সরকার কাজ করছে বললেন শিক্ষা উপদেষ্টা ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দুপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে , কর্মবিরতিতে নার্সরা কুড়িগ্রামকে ভাওয়াইয়া সুরে ইত্যাদি মাতালো ১১ বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৩১ হাজার ৪৬৯ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ড পাসের হারে এগিয়ে , পিছিয়ে কুমিল্লা বোর্ড
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

মামদানি দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিমদের আশা জাগাচ্ছে

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তার এ সাফল্য নিউইয়র্কের ৩ লাখেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে। 

মামদানির দীর্ঘ ১৫ বছরের বন্ধু ও জনপ্রিয় কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘আমার মা তার পরিচিতদের টেক্সট দিয়ে মামদানির জন্য ভোট চেয়েছেন। এমনটা আগে কখনও দেখিনি। এই নির্বাচনে আমাদের পুরো পরিবার সম্পৃক্ত হয়েছে—যেন এটা আমাদের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

ভারতীয় বাবা-মায়ের সন্তান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। পরে, ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেন।

মামদানির নির্বাচনি ক্যাম্পেইন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। অনেকের কাছে তার জয় বর্ণবাদ ও বিদেশি বিদ্বেষের (জেনোফোবিয়া) বিপরীতে একটি ইতিবাচক বার্তা।

দক্ষিণ এশিয়ভিত্তিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য জাগারনট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্নিগ্ধা সুর বলেন, ‘মামদানির উত্থান শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছে।

মিশিগানের বাসিন্দা ও ভারতের জন্ম নেওয়া মুসলিম আমেরিকান থাসিন সরদার বলেন, ‘এই জয় আমাকে আবারও মানুষ ও জনগণের ওপর আস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে।’

নিউইয়র্কের ভোটার জাইনাব শাব্বির বলেন, ‘আমার পরিবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এত বড় শহরের মেয়র পদে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম জয়ী হওয়া দারুণ ব্যাপার।’

তবে শাব্বিরের জন্য মামদানির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘তার ক্যাম্পেইন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক মুসলিমই শুধু দেশের বাইরে রাজনীতিতে আগ্রহী, অথচ এখানেও আমাদের সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। মামদানি সেই সুযোগ তৈরি করছেন।’

প্রতিনিধি রো খান্না মামদানির ক্যাম্পেইনের প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি নিজের শিকড় ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাননি। হিন্দি গান, বলিউডের ভিডিওর মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অথচ তার অর্থনৈতিক বার্তা ছিল খুব শক্তিশালী—বাসাভাড়া, জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি নিয়ে।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তানজিলা রহমান বলেন, ‘অভাবের মধ্যে নিউইয়র্কে বেড়ে উঠেছি। মামদানির মতো কাউকে দেখে মনে হয়েছে—অবশেষে কেউ আমাদের কথাও শুনছে।’

পারিবারিক পটভূমি ও বিতর্ক 

মামদানির মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, বাবা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। কুইন্সে বড় হয়ে নামকরা ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তার শক্ত অবস্থান মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ালেও কিছু ইহুদি সংগঠনের সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। তবে কিছু ইহুদি রাজনীতিবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ইসলামবিদ্বেষের মুখে দৃঢ় অবস্থান 

তবে মামদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকাশ্যে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দেওয়ায় কিছু মহলে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

মামদানির বিজয়ের পর ডানপন্থী মহলে আবারও অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষ উসকে ওঠেছে। তবুও, তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক ভোটার অংশগ্রহণ এই বিভেদ কাটিয়ে জয় এনে দিয়েছে বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।

কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম তাদের কণ্ঠস্বর শুনিয়েছে। শুধু ভোট দিয়েই নয়, পরিবার, বন্ধুদেরও যুক্ত করেছে। এটাই তো আসল বিজয়।’ তথ্যসূত্র- ইউএনবি

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই ইসলামী দল হয় না বললেন সালাহউদ্দিন

মামদানি দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিমদের আশা জাগাচ্ছে

আপডেট সময় ০৯:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তার এ সাফল্য নিউইয়র্কের ৩ লাখেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে। 

মামদানির দীর্ঘ ১৫ বছরের বন্ধু ও জনপ্রিয় কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘আমার মা তার পরিচিতদের টেক্সট দিয়ে মামদানির জন্য ভোট চেয়েছেন। এমনটা আগে কখনও দেখিনি। এই নির্বাচনে আমাদের পুরো পরিবার সম্পৃক্ত হয়েছে—যেন এটা আমাদের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাপার।’

ভারতীয় বাবা-মায়ের সন্তান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। পরে, ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেন।

মামদানির নির্বাচনি ক্যাম্পেইন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। অনেকের কাছে তার জয় বর্ণবাদ ও বিদেশি বিদ্বেষের (জেনোফোবিয়া) বিপরীতে একটি ইতিবাচক বার্তা।

দক্ষিণ এশিয়ভিত্তিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য জাগারনট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্নিগ্ধা সুর বলেন, ‘মামদানির উত্থান শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছে।

মিশিগানের বাসিন্দা ও ভারতের জন্ম নেওয়া মুসলিম আমেরিকান থাসিন সরদার বলেন, ‘এই জয় আমাকে আবারও মানুষ ও জনগণের ওপর আস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে।’

নিউইয়র্কের ভোটার জাইনাব শাব্বির বলেন, ‘আমার পরিবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এত বড় শহরের মেয়র পদে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম জয়ী হওয়া দারুণ ব্যাপার।’

তবে শাব্বিরের জন্য মামদানির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘তার ক্যাম্পেইন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক মুসলিমই শুধু দেশের বাইরে রাজনীতিতে আগ্রহী, অথচ এখানেও আমাদের সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। মামদানি সেই সুযোগ তৈরি করছেন।’

প্রতিনিধি রো খান্না মামদানির ক্যাম্পেইনের প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি নিজের শিকড় ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাননি। হিন্দি গান, বলিউডের ভিডিওর মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অথচ তার অর্থনৈতিক বার্তা ছিল খুব শক্তিশালী—বাসাভাড়া, জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি নিয়ে।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তানজিলা রহমান বলেন, ‘অভাবের মধ্যে নিউইয়র্কে বেড়ে উঠেছি। মামদানির মতো কাউকে দেখে মনে হয়েছে—অবশেষে কেউ আমাদের কথাও শুনছে।’

পারিবারিক পটভূমি ও বিতর্ক 

মামদানির মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, বাবা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। কুইন্সে বড় হয়ে নামকরা ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তার শক্ত অবস্থান মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ালেও কিছু ইহুদি সংগঠনের সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। তবে কিছু ইহুদি রাজনীতিবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।

ইসলামবিদ্বেষের মুখে দৃঢ় অবস্থান 

তবে মামদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকাশ্যে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দেওয়ায় কিছু মহলে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

মামদানির বিজয়ের পর ডানপন্থী মহলে আবারও অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষ উসকে ওঠেছে। তবুও, তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক ভোটার অংশগ্রহণ এই বিভেদ কাটিয়ে জয় এনে দিয়েছে বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।

কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম তাদের কণ্ঠস্বর শুনিয়েছে। শুধু ভোট দিয়েই নয়, পরিবার, বন্ধুদেরও যুক্ত করেছে। এটাই তো আসল বিজয়।’ তথ্যসূত্র- ইউএনবি