বরিশালের গৌরনদীর এক পরিবার হঠাৎই সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ একটাই রাজনীতি। বাবার দল জামায়াত, ছেলের দল বিএনপি। মতাদর্শের এই ফারাক এবার ছিন্ন করেছে রক্তের বন্ধনও।
বরিশাল-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান সম্প্রতি ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি তার বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আরাফাত বিল্লাহ খানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন। কারণ, ছেলে নাকি শিবির করে না, বরং বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। আর সাম্প্রতিক এক জনসভায় বাবার দলকে নিয়ে দেওয়া মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে।
ভিডিওতে আরাফাত বিল্লাহকে বলতে শুনা যায়, ‘আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন, সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন; তাহলে কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন? জনতার একযোগে ‘না’ ধ্বনির পর তিনি নিজেই জবাব দেন, ‘কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো অভিজ্ঞতাও নেই।’
অল্প সময় পরেই আসে দ্বিতীয় পোস্ট। যেটি দেশের সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নেয় শিরোনাম হিসেবে। তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ পিতা। জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’
কামরুলের ভাষায়, ‘ছেলের ওই বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে। সে আমার পরিচয় দেওয়ার পরই কথা বলেছে, বিব্রতকর।’
অন্যদিকে আরাফাত বিল্লাহ খান শান্ত গলায় বলেন, ‘আমি ২৫ বছর ধরে ছাত্রদল-যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে আছি। বিএনপি আমার রাজনৈতিক ঠিকানা। বাবা জামায়াত করেন, এটা তার পছন্দের বিষয়। আমি বিএনপি করি, এটা আমার।’
তিনি যোগ করেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে মতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বাবা নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বিষয়টা সহজ নয়।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারভিত্তিক বিভাজন নতুন নয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে এমন প্রকাশ্য সম্পর্কচ্ছেদ বিরল। স্থানীয়ভাবে কেউ বলছেন, এটি মতবিরোধের স্বাভাবিক ফল। আবার কেউ বলছেন, রাজনীতি এখন রক্তের সম্পর্কের চেয়েও গভীর।
গৌরনদীর এক চা-দোকানে বসে স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘আগে রাজনীতি ছিল আদর্শের জায়গা, এখন সেটা পরিবার ভাগ করছে। বাবা-ছেলে পর্যন্ত দুই দলে।
উল্লেখ্য, যশোরের কেশবপুরের আওয়ামী লীগ পরিবারে জন্ম নিয়েও এখন বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রবণ। একসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এই তরুণ নেতা।
শ্রবণের বাবা কাজী রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। পারিবারিকভাবে আওয়ামী রাজনীতিতে গভীর শিকড় থাকলেও শ্রবণ বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনৈতিক ধারা।
ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি ধীরে ধীরে উঠে আসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। দীর্ঘদিন দলের কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও জায়গা পান।
রাজনৈতিক মতাদর্শের এই পার্থক্যের কারণে শ্রবণ ও তার পরিবারের মধ্যে এক দশকের বেশি সম্পর্ক যোগাযোগ ছিলো না। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একাংশের মতে, শ্রবণ তার বাবার রাজনৈতিক প্রভাবকে অগ্রাহ্য করে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছেন।

ডিজিটাল রিপোর্ট 























