পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমরা রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক স্বার্থে সড়ককে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সস্তা রেল ও নদী পথকে উপেক্ষা করেছি। আমাদের রেল ও নদী পথকে ঢেলে সাজাতে হবে। মালামাল পরিবহণে সড়ক পথের বিকল্প হিসেবে রেল ও নদী পথের অধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বিত বহুমুখী পরিবহণ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় একটি অংশীজন সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের উদ্দেশ্য ছিল দেশের পরিবহণ ব্যবস্থার সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নকে আরও শক্তিশালী করা।
সেমিনারে উপস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ এই বিকল্প মাল্টি মোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন ও বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করেন। এ বিষয়ে পরবর্তীতে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে পৃথক সেমিনার আয়োজন করা হবে বলে জানান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হক। সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, বন্দর ও টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি খাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ সংগঠন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারে প্রদত্ত উপস্থাপনায় মাস্টার প্ল্যানের বেসলাইন অ্যাসেসমেন্ট স্টাডি এবং কৌশলগত রোডম্যাপের ওপর আলোকপাত করা হয়। এতে পরিবহণ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়— যেমন: সড়কের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, যানজট, নিরাপত্তা সমস্যা, উচ্চ লজিস্টিক খরচ এবং রেলপথ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথের অপর্যাপ্ত ব্যবহার। প্রস্তাবিত কাঠামোতে বহুমুখী সমন্বয়, হাব-অ্যান্ড-স্পোক সংযোগ, বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের লিংকেজ, নগর পরিবহণ সমন্বয় এবং পর্যায়ক্রমে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় জোরদার করা, করিডোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ, লাস্ট-মাইল সংযোগ, পরিবেশগত স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা উন্নয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৮৮ শতাংশ ট্রাফিক বহনকারী সড়কের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রেল ও নৌপথকে শক্তিশালী করা হবে, ৪২টি প্রাকৃতিক মাল্টি-মোডাল হাবকে কাজে লাগানো হবে এবং স্থলবন্দরগুলোকে বড় ধরনের নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই মাল্টি-মোডাল হাবের সুবিধায় উন্নীত করা হবে। এছাড়া নতুন সড়ক সম্প্রসারণ সীমিত করা, বিদ্যমান মহাসড়কগুলোকে মানসম্মত করা ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মালামাল ও যাত্রী পরিবহণকে আরও টেকসই মাধ্যমে স্থানান্তর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ, লজিস্টিকস, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রক কাঠামো এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে দক্ষ ডেটা শেয়ারিং— এসব কিছুই দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমাতে ও সমন্বয় বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অংশীজন আলোচনা সভাটি মাস্টার প্ল্যানের যৌথ পরিকল্পনা ও সম্মিলিত মালিকানার প্রতি স্টেকহোল্ডারদের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করেছে। অগ্রগতির অংশ হিসেবে সিদ্ধান্ত হয় যে, সেমিনারের মতামত ও সুপারিশসমূহ বেসলাইন অ্যাসেসমেন্ট ও কৌশলগত রোডম্যাপের পরিমার্জনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা একটি পূর্ণাঙ্গ, সমন্বিত ও বাস্তবায়নযোগ্য জাতীয় সমন্বিত বহুমুখী পরিবহণ মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের পথ প্রশস্ত করবে।

ডিজিটাল ডেস্ক 





















