ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস,ভাঙছে মিলনমেলা আজ

  • ডিজিটাল রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১১:৪৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব আজ শেষ হচ্ছে।

গত দুদিন লালন ভক্ত, অনুসারী বাউল-ফকিরদের গান, সাধুসঙ্গ, ভাব আলোচনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ।

আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) ভাঙবে সেই মিলনমেলা।

গতকাল শনিবার সকালে বাল্যসেবায় দই ও চিড়া নাশতা দেওয়া হয় বাউলদের। দুপুরে পুণ্যসেবায় ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দধি খান তারা। লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকে বাউলদের পুণ্যসেবা তুলে দেন।

 এবছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভক্তরা ভবের হাটে ভিড় করেছেন। দেশি-বিদেশি ভক্ত, বাউল, ফকির ও লালন অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে অবস্থান নিয়ে মানুষ ভজনার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা বলছেন, গতকাল সকাল থেকে সাধু সঙ্গে বাল্য, রাখাল ও পণ্য সেবার মধ্য দিয়ে মনের হিংসা, রাগ দূর করতে মহাগুরু লালনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। এভাবেই তারা নিজেদেরকে খাঁটি করে তুলছেন।

এদিকে, প্রতিনিয়ত আখড়াবাড়ির ভেতরে খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। গতকাল রাতে আখড়াবাড়ির বাইরে মূল মঞ্চে বসে লালন দর্শনের আলোচনা ও গান ও বানী প্রচার। লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা। এক মহা সম্মিলনিতে মেতে উঠেছেন সবাই।

সাধুসঙ্গ সাঙ্গ হলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। তবে স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গ্রামীণ মেলা চলবে আরও কয়েকদিন।

সরেজমিন দেখা যায়, পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান, আলোচনা আর ভাব বিনিময়ে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। সাধুসঙ্গ শেষে কেউ কেউ আবার ফিরছেন আপন ঠিকানায়।

লালন একাডেমির প্রবেশপথ, লালন সাঁইর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারী সাদা কাপড় পরিহিত ছিলেন। অন্য পোশাকেও ছিলেন অনেকে। দুপুরে তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার ভাত, ডাল, সবজি ও ইলিশ খেতে দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

টুনটুন বাউল বলেন, লালনের দর্শনে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের ‘মনের মানুষ’ বা ‘আসল মানুষ’ এর কোনো ধর্ম, বর্ণ, বা লিঙ্গ নেই এবং এই ‘মানুষ’ বা ঈশ্বরই মানুষের মধ্যে বাস করেন। লালন তাই গান গেয়েছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, যার অর্থ হলো মানুষকে ভালোবাসলে বা তার উপাসনা করলে নিজে খাঁটি মানুষ হওয়া যায়।

তিনি বলেন, লালনের গান শুধু সঙ্গীত নয়, বরং এটি মানব জীবন, আধ্যাত্মিকতা এবং আত্ম-অন্বেষণের একটি পথ। তিনি মনে করতেন, মানুষই হলো আসল, এবং এই মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস,ভাঙছে মিলনমেলা আজ

আপডেট সময় ১১:৪৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় আয়োজিত তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব আজ শেষ হচ্ছে।

গত দুদিন লালন ভক্ত, অনুসারী বাউল-ফকিরদের গান, সাধুসঙ্গ, ভাব আলোচনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ।

আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) ভাঙবে সেই মিলনমেলা।

গতকাল শনিবার সকালে বাল্যসেবায় দই ও চিড়া নাশতা দেওয়া হয় বাউলদের। দুপুরে পুণ্যসেবায় ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দধি খান তারা। লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকে বাউলদের পুণ্যসেবা তুলে দেন।

 এবছর স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ভক্তরা ভবের হাটে ভিড় করেছেন। দেশি-বিদেশি ভক্ত, বাউল, ফকির ও লালন অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে অবস্থান নিয়ে মানুষ ভজনার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অর্জন করছেন।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা বলছেন, গতকাল সকাল থেকে সাধু সঙ্গে বাল্য, রাখাল ও পণ্য সেবার মধ্য দিয়ে মনের হিংসা, রাগ দূর করতে মহাগুরু লালনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। এভাবেই তারা নিজেদেরকে খাঁটি করে তুলছেন।

এদিকে, প্রতিনিয়ত আখড়াবাড়ির ভেতরে খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার চলছে। গতকাল রাতে আখড়াবাড়ির বাইরে মূল মঞ্চে বসে লালন দর্শনের আলোচনা ও গান ও বানী প্রচার। লালন একাডেমির মাঠে চলছে বাউল মেলা। এক মহা সম্মিলনিতে মেতে উঠেছেন সবাই।

সাধুসঙ্গ সাঙ্গ হলেও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ মধ্যরাতে। তবে স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া গ্রামীণ মেলা চলবে আরও কয়েকদিন।

সরেজমিন দেখা যায়, পুরো আখড়াবাড়িতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধু, বাউল, লালনভক্ত আর অনুসারীদের গান, আলোচনা আর ভাব বিনিময়ে মুখর ছিল আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ। সাধুসঙ্গ শেষে কেউ কেউ আবার ফিরছেন আপন ঠিকানায়।

লালন একাডেমির প্রবেশপথ, লালন সাঁইর মাজার প্রাঙ্গণ, আখড়াবাড়ি, মেলার মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। আখড়াবাড়ির ভেতরে হাজার হাজার বাউল ও লালন অনুসারী সাদা কাপড় পরিহিত ছিলেন। অন্য পোশাকেও ছিলেন অনেকে। দুপুরে তাদের আয়োজকদের পক্ষ থেকে পুণ্যসেবার ভাত, ডাল, সবজি ও ইলিশ খেতে দেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী সাধু-গুরুরা সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

টুনটুন বাউল বলেন, লালনের দর্শনে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের ‘মনের মানুষ’ বা ‘আসল মানুষ’ এর কোনো ধর্ম, বর্ণ, বা লিঙ্গ নেই এবং এই ‘মানুষ’ বা ঈশ্বরই মানুষের মধ্যে বাস করেন। লালন তাই গান গেয়েছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, যার অর্থ হলো মানুষকে ভালোবাসলে বা তার উপাসনা করলে নিজে খাঁটি মানুষ হওয়া যায়।

তিনি বলেন, লালনের গান শুধু সঙ্গীত নয়, বরং এটি মানব জীবন, আধ্যাত্মিকতা এবং আত্ম-অন্বেষণের একটি পথ। তিনি মনে করতেন, মানুষই হলো আসল, এবং এই মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই মুক্তি লাভ করা সম্ভব।