শেরপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশার বেপরোয়া গতিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। এসব অটোরিকশা চালকদের অসতর্কতা, অদক্ষতা এবং নিয়ম না মানাই মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানীরোধে শেরপুর-ময়মনসিংহ রুটে বাস সার্ভিস চালুর দাবি সাধারণ যাত্রীদের। মহাসড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলতে না দেয়ার আশ্বাস পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের।
উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে শেরপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণবিহীন অদক্ষ চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অসতর্কতায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা; প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ যাত্রী, চালক ও পথচারী।
শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার এই মহাসড়কে প্রতিদিন হাজারও মানুষের চলাচলে যানবাহনের প্রয়োজন মেটাতে নেই কোনো বাস সার্ভিস। ঢাকাগামী দূরপাল্লার ভালো সার্ভিসের বাসগুলোতে স্বল্প দূরত্বের যাত্রী না নেয়ায়, বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এসব থ্রিহুইলার যানবাহনে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বন্ধে শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালুর দাবি সাধারণ যাত্রীদের।
শেরপুর থেকে ময়মনসিংহগামী এক যাত্রী বলেন, ‘শেরপুর থেকে ঢাকায় চলাচল করা বড় বাসগুলো ময়মনসিংহ, ফুলপুর ও নকলাসহ এই রোডের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের উঠাতে চায় না। ফলে আমাদের যাদের ময়মনসিংহসহ অন্যান্য জায়গায় কাজ থাকে তারা এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় যাতায়াত করতে হয়। আমরা ময়মনসিংহ পর্যন্ত বড় বাস সার্ভিস চাই।’
ফুলপুরগামী এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘যেখানে ময়মনসিংহের যাত্রীই বড় বাসে তুলতে চায় না, সেখানে আমাদের নিবে কিভাবে। আমরা জীবনটাকে হাতে নিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনকি জীবনও চলে যেতে পারে বা পঙ্গুত্বও বরণ করতে হতে পারে। তবুও এভাবেই আমাদের যাতায়াত করতে হয়।’
শেরপুর জেলা বাস-কোচ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌতম কুমার সাহা বলেন, ‘সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোকে মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করতে হবে। কম গতির এসব যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এই থ্রিহুইলারগুলো বন্ধ করলে শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ বা আরও কাছের গন্তব্যে যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাবে। যাত্রীর সংখ্যা বাড়লে আমরা অবশ্যই এই রুটে বাস সার্ভিস চালু করবো। আমাদের বাসগুলো ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের মধ্যেই ময়মনসিংহ পৌঁছাতে সক্ষম।
বিআরটিএর সহকারী পরিচালক জি এম নাদির হোসেন জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এসব থ্রিহুইলারকে মহাসড়কে চলাচলে নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে চালক ও মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হয়। মালিক, চালক এবং যাত্রীরা সচেতন হলে মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা সম্ভব হবে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ভূঞা সময় সংবাদকে জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে আমাদের কার্যক্রম নিয়মিত চলছে। আমরা বিভিন্ন সময় এসব যানবাহনকে মহাসড়কের চলাচলের অপরাধে মামলা ও জরিমানা করে থাকি। আশা করছি, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল বন্ধ করা সম্ভব হবে।
বিআরটিএর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের শেষ দুই মাসে নকলা এবং সদর উপজেলায় দুইটি দুর্ঘটনাতেই সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ ১০ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। জেলায় চলতি বছরের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।