সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, ইসমাঈল হোসেন দায়িত্ব পালনকালে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহোযোগী হিসেবে ঘুষ, বদলি, পদোন্নতি, নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন মর্মে জানা যায়। দুদকের মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহোযোগী হিসেবে খাদ্য সচিব ইসমাঈল হোসেনকে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে কমিশনের অনুমোদন রয়েছে।
তদন্তকালে জানা যায় ইসমাঈল হোসেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এর মানিলন্ডারিং-এর সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার ঘনিষ্ঠ সহোযোগী হিসেবে ছিলেন।
পরে দুদকের পক্ষে শুনানি শেষে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখান। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৫ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর নামে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ মিলেছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজের এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৫টি হিসাবে মোট ৪৩ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৫ টাকা লেনদেন করেন। যার মধ্যে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৭ টাকা জমা রেখেছেন ও ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ৫২ হাজার ১১৮ উত্তোলন করেছেন।
বর্তমানে এসব ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৭০ টাকা স্থিতি রয়েছে। তার এই বিপুল পরিমান টাকা লেনদেন সন্দেহজনক, যা খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে দুদকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।উল্লেখ্য, গত ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন। ওইদিন রাত ১০টার দিকে তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে ২১ ডিসেম্বর বিমানবন্দর থানার পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আসামিপক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ইসমাইল হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। গত ২৩ ডিসেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।