দীর্ঘ মেয়াদি সুপরিকল্পিত নীতি মালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিরে পেতে পারে নদ-নদীর আসল সৌন্দর্য ও রূপ
ছোট বড় নদ-নদী,হাওর-বাঁওড়-মহিষের শিং এই নিয়ে ময়মনসিংহ। বাংলাদেশর সর্ববৃহৎ জেলা খ্যাত ময়মনসিংহ জেলা।এক সময় ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ সহ সব মিলিয়ে ছিল ময়মনসিংহ জেলা।
সময়ের বিবর্তনে আলাদা-আলাদা জেলা হিসেবে রুপান্তরিত হয়।যা আজও বৃহত্তর ময়মনসিংহ হিসেবে জনমুখে সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে নদী মাতৃক বাংলাদেশ কে কেন্দ্র করেই প্রাচীন আমল থেকেই বিভিন্ন ব্যবসা,বাণিজ্য, যাতায়াতের বাহন ছিল এই নদ-নদী।
নদীর পাল তোলা নৌকা,মাঝির বাঁশির সুর,আলতা পায়ে কৃষাণীর বালু চড়ে হেটে চলা।খান আতাউর রহমানের সেই নদী কেন্দ্রীক গ্রাম্য বিখ্যাত গান “সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা তোমার বেলায় নেব সখি তোমার কানের সোনা” সেই দৃশ্য গুলো চিত্রায়িত হয়েছিল ময়মনসিংহ অঞ্চলে।জেলে,মাঝি,মল্লার, কুমাড়, তাঁতি সবাই যেন এই ময়মনসিংহ অঞ্চলের নদীর স্রোত ধারার সাথে মিশে আছে।কালের বিবর্তনে অযত্নে, অপরিচর্যায় নদী গুলো সেই যৌবনের স্রোত ও গভীরতা হারিয়ে অভিমানে থমকে গেছে।
নদ-নদী ও পানি আইনের কোন কিছুই মানা হয়নি এই দীর্ঘ সময় যাবত। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদ খননের নামে চলছে টাকা আত্মসাৎ এর মহা উৎসব।অধিক পাওয়ার সম্পূর্ণ বালু উত্তলনের শত শত মেশিন কথিত বৈধ-অবৈধ ভাবে বালু উত্তলনের দৃশ্য যেন বালু ব্যবসায়ীদের কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ করছে।নদী খননের কিছুই হচ্ছে না।নদী যেন পানির পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের বালুর স্তুপে স্তুপে হাজার হাজার মিনারে সজ্জিত হয়েছে।অনেক সংগঠন নদী আইন কানুন চলমান রাখার কথা বলে বার বার ব্যর্থ হয়েছে।বাঁচতে হলে নদী বাঁচাতে হবে।খন্ড খন্ড প্রতিবাদ গুলো রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা আমলে নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি সুপরিকল্পিত নীতি মালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফিরে পেতে পারে নদ-নদীর আসল সৌন্দর্য ও রূপ।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান নদী সমূহ সহ যা এখনো ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়নি সেই নদী সমূহের নাম,প্রবাহিত এলাকা ও দৈর্ঘ্য তালিকা উপস্থাপন করার চেষ্টা মাত্র-
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ এবং দৈর্ঘ্য ২৭৬ কি.মি, কংস যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ এবং দৈর্ঘ্য ২২৫ কি.মি, বংশী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকাএবং দৈর্ঘ্য ২৩৮ কি.মি,ধলেশ্বরী নদী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা এবং দৈর্ঘ্য ১৬০ কি.মি,ধনু নদী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ ও সিলেট এবং দৈর্ঘ্য ১৩৫ কি.মি, সুতীয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ সদর,ত্রিশাল,ভালুকা ও গফরগাঁও এবং দৈর্ঘ্য ৯৫কি.মি,নিতাই নদী যার প্রবাহিত এলাকা ধোবাউড়া,দূর্গাপুর এবং দৈর্ঘ্য ৩৬ কি.মি,শীলা নদী যার প্রবাহিত এলাকা ত্রিশাল,ভালুকা ও গফরগাঁও এবং দৈর্ঘ্য ৭৩.২৫ কি.মি,মেনাং নদী যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট এবং দৈর্ঘ্য ১৫কি.মি,ভোরা যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট এবং দৈর্ঘ্য ২২কি.মি,ক্ষীরু নদী যার প্রবাহিত এলাকা ত্রিশাল এবং দৈর্ঘ্য ৪৫কি.মি,রাংসা নদী যার প্রবাহিত এলাকা ফুলপুর এবং দৈর্ঘ্য ৩০কি.মি,মালিঝি নদী যার প্রবাহিত এলাকা ফুলপুর এবং দৈর্ঘ্য ৩০কি.মি,বাকসাতরা নদী যার প্রবাহিত এলাকা ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল ও ভালুকা এবং দৈর্ঘ্য ২১ কি.মি, কাঁচামাটিয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা তাড়াইল,ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল এবং দৈর্ঘ্য ৫০ কি.মি,খরিয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা ফুলপুর এবং দৈর্ঘ্য ৩৮কি.মি,নরসুন্দা নদী যার প্রবাহিত এলাকা নান্দাইল, তাড়াইল,কিশোরগঞ্জ সদর,ইটনা এবং দৈর্ঘ্য ৩০.৫০কি.মি।দর্শা যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট এবং দৈর্ঘ্য ২৫কি.মি, শাওয়াল যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট এবং দৈর্ঘ্য ১২কি.মি, বরাকজোড়া যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং দৈর্ঘ্য ২১ কি.মি, গুমুরিয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা হালুয়াঘাট এবং দৈর্ঘ্য ২০কি.মি, , বানার নদী যার প্রবাহিত এলাকা গফরগাঁও, শ্রীপুর এবং দৈর্ঘ্য ৯৬কি.মি, বাজ্জা-মেধুয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা মুক্তাগাছা,ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল ও ভালুকা এবং দৈর্ঘ্য ৪৮ কি.মি,আইমান-আখিলা নদী যার প্রবাহিত এলাকা মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ সদর,ফুলবাড়িয়া,ত্রিশাল এবং দৈর্ঘ্য ৬১ কি.মি, আইমান-মোবারি নদী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা এবং দৈর্ঘ্য ২৩ কি.মি,বাকসাতরা নদী যার প্রবাহিত এলাকা ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল ও ভালুকা এবং দৈর্ঘ্য ২১কি.মি,পাগারিয়া নদী যার প্রবাহিত এলাকা ময়মনসিংহ সদর,ত্রিশাল, ও গফরগাঁও এবং দৈর্ঘ্য ৯৬কি.মি, লাইথী নদী যার প্রবাহিত এলাকা ভালুকা এবং দৈর্ঘ্য ৩ি০.৫০ কি.মি।
এছাড়া আরও কিছু নদ-নদী আছে যেগুলোর প্রবাহিত এলাকা ও দৈর্ঘ্য সঠিক ভাবে জানা যায়নি।নদ-নদী গুলোর তালিকা -দিয়ারা মারা,জারুল, কালিয়ান,ধলাই,ডেঙ্গাই,কালা
মুগড়া,সোয়াই,বাজাইল,নেওড়া,কালিহর,পুটিয়া,কুড়িয়া,জাটিয়া,নাকা,কালামুগড়া,ধলাই,কাকুরিয়া,গজারিয়া,জারুল,দিয়ারা,মারা,আওটদ্বারনোল,নেতাই,তাড়াই,মরা নেতাই,চরাই,ইছামতি,গাঙ্গীনা,বাউশা,রামখালি,লালা,মঘা,ডয়হা,মগড়া,সুরিয়া,নুন্নি,মাইডাম
এসব নদ-নদীর শুধু তালিকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে খননের উদ্যোগ নিতে হবে দেশি-বিদেশি,সরকারি-বেসরকারি সংগঠন গুলোর।নদ-নদী গুলোর পুরনো রূপ ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সকলকে আরও সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নদ-নদী গুলো সঠিক পরিচর্যা পেলে নিজেদের আপন গতি ফিরে পাবে।তার সাথে বাংলাদেশ পানি ও নদী আইনের সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।ক্ষুদ্র – বৃহৎ সকল সংগঠনের এক হয়ে মিলিতো ভাবে নদ-নদীর অপরিচর্যায় নদী গুলো সতেজ হয়ে উঠবে।সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে নদ-নদীর পানি দূষিত করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।সকলের প্রচেষ্টায় পারে নদ-নদী গুলোর আগের জায়গাটা ফিরিয়ে দিতে । এতে করে নদী মাতৃক বাংলাদেশ আবার নিজের রূপ ধারণ করতে পারবে।