সাবেক কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ী সাইফুল হক বলেছেন, “সরকার গঠন হয়েছে মানুষের হিমালয় সমান একটা প্রত্যাশা নিয়ে।” সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশেরই অতীতে এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের সঙ্গে কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না, তবুও বিশেষ এক পরিস্থিতিতে সরকার গঠিত হয়েছে জনগণের অধিকার রক্ষার প্রত্যাশা থেকে।
সাইফুল হক বলেন,“আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ১৮০ ডিগ্রি তারা উল্টো দিকে তারা অবস্থান নিয়েছিল। এই যে প্রতারণা, ভণ্ডামি, এবং তারা প্ল্যান করছিল শুধু ২০২৯ সাল না, ২০৪১ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবেন। মানুষ এই আত্মভরিতা, দম্ভ, অহমিকাকে কিন্তু গ্রহণ করেনি।”
তিনি আরো বলেন,“যে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগের মতো একটা দলকে, ব্যক্তি শেখ হাসিনার মতো একজন মানুষকে চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী শাসকে পরিণত করেছে, সেই ব্যবস্থার রাজনৈতিক পরিবর্তন দরকার। রাষ্ট্র, প্রশাসন, সংবিধানের একটা পরিবর্তন করে একটা জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধ এরকম একটা ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে।”
“এই কাজে আমরা একটা এন্টারিম গভমেন্ট হিসেবে প্রফেসর ইউনুসের মতো মানুষকে আমরা কিন্তু বেছে নিয়েছি। কেউ না কেউ প্রস্তাব করেছে, আমরা সমর্থন করেছি,উইথ গুড হোপ।”
তিনি বলেন,“বাংলাদেশ যে অবস্থার ভেতরে ছিল, আমাদের এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যেমন বিপ্লব হয়, তেমনি প্রতি বিপ্লবও হাটে। আমরা খুবই একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম।”
“বাংলাদেশে কার্যত এখন একটা আধা সামাজিক নৈরাজ্য চলছে। এখনো পর্যন্ত ল অ্যান্ড অর্ডার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসেনি। জানমালের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। মানুষ সরকারকে সহ্য করছিলেন কেন? এটা আমাদের সরকার বলে। সরকারকে কোনোভাবে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না।”
“এই সরকার বিপর্যস্ত হলে এই দায়িত্বটা কিন্তু আমার ঘাড়েও পড়বে, মঞ্জুর ঘাড়েও পড়বে এবং ফারুক ভাইয়ের ঘাড়েও কিন্তু দায়িত্বটা পড়বে। ফলে ইট আওয়ার গভার্মেন্ট। কিন্তু সেই গভার্মেন্টের ক্ষমতার একটা নির্দিষ্ট চৌহদ্দী আছে।”
“আপনার দায়িত্বটা হচ্ছে,আপনি আলাপ-আলোচনা করে, বোঝাপড়া করে নির্বাচন দিবেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করবেন, সেই জায়গাটায় যাবেন। সুতরাং, যদি আপনি এই ক্ষমতার সীমার বাইরে তাকাতে চান, তাহলে কিন্তু শুধু আপনার জন্য না, পুরো দেশের জন্য বিপদ। তাহলে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও বিভাজন তৈরি হবে, দূরত্ব তৈরি হবে, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে।”
“যারা আমাদের অর্জনকে বিসর্জনে নিয়ে যেতে চান, যারা প্রতিনিয়ত দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে উস্কানি তৈরি করছেন, আমাদের এই অভ্যুত্থানটাকে ব্যর্থ করবার জন্য, সরকারকে আবার ব্যাকফুটে এনে সাপ-লুডুর মতো একদম ৯০ থেকে শূন্যতে নামিয়ে আনতে চান,আমরা এ ধরনের সুযোগ কাউকে দেব না।”
“উপদেষ্টাদেরকে তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কথা কম বলেন, যেটুকু বলবেন দায়-দায়িত্ব নিয়ে বলবেন। সেটা এমন কোন কথা বলবেন না, যেটা প্রফেসর ইউনুসকে বিতর্ক করে, যেটা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্বটাকে বাড়িয়ে দেয়, জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এবং যারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘর পুড়িয়ে আলুপোড়া খেতে চায়, সেই সুযোগটা আমরা কাউকে দেব না।”
সাইফুল হকের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত দায়বদ্ধতা যেমন প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনি এসেছে হুঁশিয়ারি,ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করা মানেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিভাজনের পথ প্রশস্ত করা।