নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে পতিত আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে দলটি। এবার ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইন’-এর ব্যানারে ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর ফিলিস্তিন’ স্লোগানে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওলামা লীগপন্থি আলেমদের মাধ্যমে বিভিন্ন মাজার ও দরবারের নাম ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন ইসলামী ফ্রন্টের নেতারা। গত দেড় দশকে হাসিনার হাত শক্তিশালী রাখতে সক্রিয় ছিল দলটি। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে ‘নিবন্ধিত’ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি তুলেছে ইসলামী এই দলটি। তবে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ফ্রন্ট।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। আমাদের রেগুলার একটিভিটিসের পাশাপাশি বিশেষ নজরও থাকবে। যে কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা হলে শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
এ ব্যাপারে মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যালেস্টাইনের মিডিয়া ও যোগাযোগ উপকমিটির সদস্য আব্দুল হাকিম শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে জানান, ইসলামী ফ্রন্টের প্যাডে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ১৫ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ স্থগিত করা হয়। দলীয় ব্যানারে অনুমতি না পাওয়ায় অন্যরা নিরপেক্ষ ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করছে। এতে তিনি সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সমাবেশ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রচার চালানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সমাবেশ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পাশে বাংলাদেশ। ২৬ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।’ এ ছাড়াও বিতর্কিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরীও তার ফেসবুক পেজে সমাবেশের প্রচার চালান। ওই পোস্টে আবার লাইকও দিয়েছেন ছাত্রলীগের জাকির। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে নেতাকর্মীদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপেও সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
ডিএমপির অতিক্তি কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এ বিষয়ে মুভমেন্ট ফর এ ফ্রি প্যাল্টোইন-এর মিডিয়া সেলের সদস্য অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও মৌখিক অনুমতি পেয়ে গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। স্টেজ তৈরিসহ অন্যান্য কাজ চলছে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে নতুন করে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে অনেকে ঢাকায় এসেছেন। ৫০ হাজারের মতো লোকের সমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে।’ সমাবেশে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক হয়নি। এ বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের কেউ যেন ভর করতে না পারে সে নিয়ে আমরা নিজেরাই সতর্ক থাকব।’
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সমাবেশ আয়োজন করতে যাওয়া ইসলামী ফ্রন্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসাবে খ্যাতি রয়েছে। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে তারা ৩৭টি আসনে চেয়ার প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছিলেন। এমনকি ৫ আগস্টের পরেও এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ‘নিবন্ধিত’ সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ইসলামিক পন্ডিত নাম প্রকাশ না করে বলেন, আওয়ামী ওলামা লীগ, ইসলামী ফ্রন্ট বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। মূলত তারাই ভিন্ন ব্যানার ব্যবহার করে মাজার ও দরবারের নামে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করতে চাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। মূলত এ সুযোগটি নিয়ে তারা বিভিন্ন নামে বেনামে মাঠে নামছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে যেন নামতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক থাকা উচিত।