ময়মনসিংহ , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় ০১:৫২:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
  • ১২৯ বার পড়া হয়েছে

সংগৃহীত ছবি

অনলাইন নিউজ-

মাছ ধরা নৌকা গুলো নদীর কিনারায় সারিবদ্ধ ভাবে বেঁধে রাখা, কেউ কেউ জাল ও নৌকা পরিষ্কার করছেন, কেউ জাল রৌদ্রে শুকাচ্ছেন। নৌকা উপরে উঠিয়ে মেরামতের জন্য রাখছেন অনেকেই। কেউ জাল বস্তায় ভরছেন হেফাজতে রাখার জন্য, কেউ জালের কাটা অংশ সুই সুতা দিয়ে মেরামত করছেন। চোখে মুখে সবার দুশ্চিন্তার ভাজ।গ্রামে গ্রামে ১ তারিখ থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধে জেলেদের সচেতনতায় মাইকিং করছে বন বিভাগ। এমন দৃশ্য দেখা যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে। 

খুলনা জেলার কয়রার দক্ষিণবেদকাশি এলাকার বাসিন্দা মোতালেব ৪৫)। সেই ছেলেবেলা থেকেই সুন্দরবনের নদীতে গিয়ে মাছ ধরেন তিনি।গ্রামে গ্রামে ১ তারিখ থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধে জেলেদের সচেতনতায় মাইকিং করছে বন বিভাগ। এমন দৃশ্য দেখা যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে। খুলনা জেলার কয়রার দক্ষিণবেদকাশি এলাকার বাসিন্দা মোতালেব ৪৫)। সেই ছেলেবেলা থেকেই সুন্দরবনের নদীতে গিয়ে মাছ ধরেন তিনি।

সীমিত আয় দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বাভাবিক সময়েও এগুলোও জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান মোতালেব। তাই বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে কোনোভাবে সংসার চালাতে হয় তাকে। মাছ ধরা ও এ সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্যকিছু শেখা হয়নি মোতালেবের। তাই তার কাছে সুন্দরবন বন্ধ মানে আয়ও বন্ধ।বন বিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দরবনের নদী, খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় আজ শনিবার (১ জুন) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার।এ সময় পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।

দক্ষিণবেদকাশির জেলে মোতালেবের কাছে এই ৩ মাসের প্রতিদিনই দুশ্চিন্তার, দুর্বিপাকের। কারণ, তার কাছে মাছ ধরা বন্ধ মানে আয়ও বন্ধ। মোতালেব বলছেন, নিষেধাজ্ঞার পুরো সময়টাতে তাদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে কেবল দুই ধাপে ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। তাও অনেক প্রকৃত জেলে সবাই এটা ঠিকঠাক পান না। এই চাল দিয়ে কোনোভাবে ১ মাসের ভাতের চাহিদা মেটে। অন্য চাহিদাগুলো মেটাতে তাকে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। কারণ তার আশপাশে যে জেলে পরিবারগুলো থাকে, তাদেরও ধার দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি থাকে না। শুধু মোতালেব নয় এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের আওতায় বানিয়াখালী, কাশিয়াবাদ, নলিয়ান, কালাবগি স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র বা বিএলসি আছে। কয়রা সদরের কাশিয়বাদ স্টেশনের আওতায় রয়েছে শুধু ১৯৬৪ টি নৌকার অনুমতি। ১২ হাজার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) আছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে সহযোগীরাও থাকেন।

কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়রায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৩ হাজার ৫২৬ জন। তবে বনজীবীরা বলছেন, কয়রায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কয়রার ৫টি ইউনিয়নের মানুষ  সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কয়রায় অন্তত ৫০ হাজার জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। এছাড়া মাছ ব্যবসায়ী, জেলেদের সহযোগী সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে।

মোতালেবসহ কয়রা উপজেলার নদীর তীরবর্তী অন্য জেলেদের ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সংকেত শুনে ঝড়ের আগেই তারা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছিলেন। এরপর আর বন বিভাগ থেকে বনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর জীবিকা নির্ভরশীল এ অঞ্চলের লক্ষাধিক  মানুষ।

তারা আরো জানান, অসাধু জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে সুন্দরবনে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তাই তাদের স্বাভাবিক আয় এমনিতেই অনেক কমে গেছে। এর ওপর যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খড়গ। এমন পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার ৯০ দিন তারা কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়  উদ্বেগের মধ্যে আছেন তারা। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো পরিবার নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে পার করতে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ আরো খানিকটা বাড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন জেলেরা। আর চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবিও করেন তারা।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

কয়রা সদর ইউনিয়নের মৎস্য ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী মোজাফফর বলেন, সুন্দরবনের জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরা ছাড়া আর কোনো কাজ করে না। এ বছর তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা পরিবারসহ না খেয়ে থাকবে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নং কয়রা গ্রামের  মোস্তফা শেখ, আত্তাব আলী  বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই আমাদের সংসার চলে। তিন মাস প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ আগে ঝড়ের সংকেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরেছি। খুব বেশি মাছ ধরতে পারিনি। মঙ্গলবার ঝড় থেমে গেলেও ফরেস্ট স্টেশন থেকে বনে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না। সামনের তিন মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

একাধিক বনজীবী ও বন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতবছরের বন্ধের তিন মাছ সুন্দরবনে অপরাধ প্রবণতা বেশি ছিল। অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে থাকে এই তিন মাস সুন্দরবন। বিষ দিয়ে মাছ শিকার, সুন্দরবনের গহিনে শুটকি মাছের খুটি স্থাপন, বন্যপ্রাণী শিকারসহ নানা অপরাধ হয়ে থাকে এই তিনমাসে।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মুল বলেন, জুন থেকে থেকে আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীদেরও প্রজনন মৌসুম। তাই ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোন জেলে বা ব্যক্তি সুন্দরবনে প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যাপারে স্টেশন এলাকায় মাইকিং করেও সতর্ক করা হচ্ছে। এবার সুন্দরবনে বন্ধের সময় কঠোর নজরদারীতে থাকবে বলে জানান তিনি।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

এ ব্যাপারে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের পাসও বন্ধ থাকবে। কোনোভাবে অবাঞ্ছিত কেউ বনে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার সময়ে বনে যেন কোনো প্রকার অন্যায়-অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পরে সে জন্য বন বিভাগ সদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

আপডেট সময় ০১:৫২:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

অনলাইন নিউজ-

মাছ ধরা নৌকা গুলো নদীর কিনারায় সারিবদ্ধ ভাবে বেঁধে রাখা, কেউ কেউ জাল ও নৌকা পরিষ্কার করছেন, কেউ জাল রৌদ্রে শুকাচ্ছেন। নৌকা উপরে উঠিয়ে মেরামতের জন্য রাখছেন অনেকেই। কেউ জাল বস্তায় ভরছেন হেফাজতে রাখার জন্য, কেউ জালের কাটা অংশ সুই সুতা দিয়ে মেরামত করছেন। চোখে মুখে সবার দুশ্চিন্তার ভাজ।গ্রামে গ্রামে ১ তারিখ থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধে জেলেদের সচেতনতায় মাইকিং করছে বন বিভাগ। এমন দৃশ্য দেখা যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে। 

খুলনা জেলার কয়রার দক্ষিণবেদকাশি এলাকার বাসিন্দা মোতালেব ৪৫)। সেই ছেলেবেলা থেকেই সুন্দরবনের নদীতে গিয়ে মাছ ধরেন তিনি।গ্রামে গ্রামে ১ তারিখ থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধে জেলেদের সচেতনতায় মাইকিং করছে বন বিভাগ। এমন দৃশ্য দেখা যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে। খুলনা জেলার কয়রার দক্ষিণবেদকাশি এলাকার বাসিন্দা মোতালেব ৪৫)। সেই ছেলেবেলা থেকেই সুন্দরবনের নদীতে গিয়ে মাছ ধরেন তিনি।

সীমিত আয় দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বাভাবিক সময়েও এগুলোও জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান মোতালেব। তাই বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে কোনোভাবে সংসার চালাতে হয় তাকে। মাছ ধরা ও এ সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্যকিছু শেখা হয়নি মোতালেবের। তাই তার কাছে সুন্দরবন বন্ধ মানে আয়ও বন্ধ।বন বিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দরবনের নদী, খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় আজ শনিবার (১ জুন) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার।এ সময় পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে।

দক্ষিণবেদকাশির জেলে মোতালেবের কাছে এই ৩ মাসের প্রতিদিনই দুশ্চিন্তার, দুর্বিপাকের। কারণ, তার কাছে মাছ ধরা বন্ধ মানে আয়ও বন্ধ। মোতালেব বলছেন, নিষেধাজ্ঞার পুরো সময়টাতে তাদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে কেবল দুই ধাপে ৫৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। তাও অনেক প্রকৃত জেলে সবাই এটা ঠিকঠাক পান না। এই চাল দিয়ে কোনোভাবে ১ মাসের ভাতের চাহিদা মেটে। অন্য চাহিদাগুলো মেটাতে তাকে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। কারণ তার আশপাশে যে জেলে পরিবারগুলো থাকে, তাদেরও ধার দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি থাকে না। শুধু মোতালেব নয় এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের আওতায় বানিয়াখালী, কাশিয়াবাদ, নলিয়ান, কালাবগি স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র বা বিএলসি আছে। কয়রা সদরের কাশিয়বাদ স্টেশনের আওতায় রয়েছে শুধু ১৯৬৪ টি নৌকার অনুমতি। ১২ হাজার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) আছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে সহযোগীরাও থাকেন।

কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়রায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৩ হাজার ৫২৬ জন। তবে বনজীবীরা বলছেন, কয়রায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। কয়রার ৫টি ইউনিয়নের মানুষ  সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। কয়রায় অন্তত ৫০ হাজার জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। এছাড়া মাছ ব্যবসায়ী, জেলেদের সহযোগী সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে।

মোতালেবসহ কয়রা উপজেলার নদীর তীরবর্তী অন্য জেলেদের ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সংকেত শুনে ঝড়ের আগেই তারা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছিলেন। এরপর আর বন বিভাগ থেকে বনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর জীবিকা নির্ভরশীল এ অঞ্চলের লক্ষাধিক  মানুষ।

তারা আরো জানান, অসাধু জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ ধরার কারণে সুন্দরবনে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তাই তাদের স্বাভাবিক আয় এমনিতেই অনেক কমে গেছে। এর ওপর যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খড়গ। এমন পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার ৯০ দিন তারা কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়  উদ্বেগের মধ্যে আছেন তারা। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো পরিবার নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে পার করতে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ আরো খানিকটা বাড়ানোর আকুতি জানিয়েছেন জেলেরা। আর চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবিও করেন তারা।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

কয়রা সদর ইউনিয়নের মৎস্য ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী মোজাফফর বলেন, সুন্দরবনের জেলেদের মাছ ও কাঁকড়া ধরা ছাড়া আর কোনো কাজ করে না। এ বছর তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা পরিবারসহ না খেয়ে থাকবে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নং কয়রা গ্রামের  মোস্তফা শেখ, আত্তাব আলী  বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই আমাদের সংসার চলে। তিন মাস প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ আগে ঝড়ের সংকেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরেছি। খুব বেশি মাছ ধরতে পারিনি। মঙ্গলবার ঝড় থেমে গেলেও ফরেস্ট স্টেশন থেকে বনে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না। সামনের তিন মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

একাধিক বনজীবী ও বন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতবছরের বন্ধের তিন মাছ সুন্দরবনে অপরাধ প্রবণতা বেশি ছিল। অসাধু বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে থাকে এই তিন মাস সুন্দরবন। বিষ দিয়ে মাছ শিকার, সুন্দরবনের গহিনে শুটকি মাছের খুটি স্থাপন, বন্যপ্রাণী শিকারসহ নানা অপরাধ হয়ে থাকে এই তিনমাসে।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মুল বলেন, জুন থেকে থেকে আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীদেরও প্রজনন মৌসুম। তাই ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোন জেলে বা ব্যক্তি সুন্দরবনে প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যাপারে স্টেশন এলাকায় মাইকিং করেও সতর্ক করা হচ্ছে। এবার সুন্দরবনে বন্ধের সময় কঠোর নজরদারীতে থাকবে বলে জানান তিনি।

দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের জেলেরা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা-

এ ব্যাপারে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সময়ে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের পাসও বন্ধ থাকবে। কোনোভাবে অবাঞ্ছিত কেউ বনে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার সময়ে বনে যেন কোনো প্রকার অন্যায়-অপরাধ যাতে সংঘটিত হতে না পরে সে জন্য বন বিভাগ সদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।