দেশে পারিবারিক সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। পারিবারিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। স্বামী খুন করেছেন স্ত্রীকে বা স্ত্রী খুন করেছেন স্বামীকে। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের সহিংসতার বলি হচ্ছে অবোধ শিশুরাও।সংবাদপত্রের খবর ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় প্রতিদিনই একাধিক পারিবারিক সহিংসতায় স্বজনের হাতে ঝরছে স্বজনের প্রাণ। প্রতিটি মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত গৃহকোণটিও যেন পরিণত হচ্ছে অনিরাপদ স্থানে। অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা এ জন্য অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও মনোগত বিষয়ের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার ও নৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন।
পারিবারিক পর্যায়ে সাম্প্রতিক হত্যার ঘটনাগুলোর খবর খতিয়ে দেখে জানা গেছে, বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে সম্পত্তিজনিত বিরোধ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, যৌতুক দাবি, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আয়-ব্যয়ের ফারাক, মাদকদ্রব্যের প্রভাব ও আধিপত্যের লড়াইয়ের জেরে।অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়া এবং ভোগবাদী ও আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা বেড়ে যাওয়ায় স্বার্থের জন্য ঘনিষ্ঠতম স্বজনদেরও হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করছে না কেউ কেউ। দেখা যাচ্ছে, জন্মদাতা মা-বাবাকে সন্তান মাদকের টাকার জন্য হত্যা করছে। অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামীর পাশাপাশি মা-বাবার হাতে যাচ্ছে সন্তানের প্রাণ। যৌতুকের কারণে নারীদের খুন হওয়ার ঘটনা অহরহই ঘটছে।
অর্থনৈতিক চাপ ও অনিশ্চয়তাকেও সহিংসতা বৃদ্ধির বড় কারণ মনে করেন অনেকে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ সায়েন্স অ্যান্ড ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পারিবারিক সম্পর্কের জায়গাটা দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট, সুস্থ পারিবারিক বিনোদনের অভাব, তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার। মনস্তাত্ত্বিক জায়গা থেকে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধনের জায়গায় ঘাটতি হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বড় যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যখন থেকে একক পরিবার বেড়ে যাওয়া শুরু হয়েছে, তখন থেকে ক্রমেই পারিবারিক সম্পর্কের সমস্যা বেড়েছে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে শহুরে জীবনে জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সময় দিতে পারছেন না। তাঁদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিক জীবনে তাঁদের মধ্যে অনেক নৈতিক কিংবা অনৈতিক চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব পূরণ না হলেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

 Reporter Name
																Reporter Name								 

























