প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে আমি গেছি। মিটিং করেছি। সেখানকার পুলিশ, প্রশাসন, এমনকি স্থানীয় লোকজন বলেছে, সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা নাকি একে অপরকে ‘ঘোষণা দিয়ে’ মারামারি করে!”
প্রবাসী শ্রমিকদের অপরাধের প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “বাহরাইনে এক মালিককে হত্যা করার পর থেকে সেখানকার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ দোষারোপ শুধু সরকারের ঘাড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা বিদেশে গিয়ে এমন অপরাধ করে, তাদের আচরণ কি দেখার বিষয় নয়?”
মালয়েশিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেখানে বলা হচ্ছে ১২ লাখ কর্মী নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হয়তো ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকই নেওয়া হবে। কিছু কর্মকর্তা আমার ছাত্র, আমি সরাসরি জেনেছি। কিন্তু দেশে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে হাইপ তোলা হয়, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।”
আসিফ নজরুল জানান, “মালয়েশিয়ার আগের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, তা অনুসারে রিক্রুটিং এজেন্টদের মধ্য থেকে দেশটি কর্মী বাছাই করবে। এতে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। আবার যদি আমরা তা না মেনে লোক না পাঠাই, তাহলে মানুষ বলবে আমরা কাজ করিনি। দুই অবস্থায়ই সমস্যায় পড়ি।”
সিন্ডিকেট ছাড়া প্রবাসী পাঠানোর চেষ্টায়ও সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। “সৌদি আরবে কোনো সিন্ডিকেট নেই, কিন্তু লোকজন ৬-৭ লাখ টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কেন? কারণ আছে ‘মধ্যসত্ত্বভোগী’। যারা শুধু টাকা কামাতে চায়। অথচ সেই টাকায় দেশে কেউ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে পারত,” বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, “বিদেশে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি অসম্মানজনক কাজ করছে, বাথরুম পরিষ্কার করছে, রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই অবস্থা এড়াতে হলে বিদেশে যেতে হলে স্কিল ও ভাষা শেখা আবশ্যক। না হলে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।”
আসিফ নজরুল আরও বলেন, “জাপান, কোরিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ বাড়ানো উচিত। সেখানে সম্মানজনক কাজের সুযোগ আছে। আমরা মিনিস্ট্রি, বায়রা, ট্রেনিং সেন্টার সবাই মিলে যদি যোগ্য ও স্কিল্ড কর্মী তৈরি করতে পারি, তাহলে কমপক্ষে ২ লাখ লোককে বিদেশে পাঠানো সম্ভব। যার প্রভাব পড়বে ১০ লাখ পরিবারের ওপর।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা সম্মানজনকভাবে, দক্ষ কর্মী পাঠিয়ে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চাই। এটাই হবে আমাদের সবার জন্য শান্তির পথ।”