নওগাঁ শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কোমাইগাড়ী এলাকার বাসিন্দা আখতারুন বেগমের তিনতলা একটি ভবনের জন্য গত বছর তিনি ৩৬০ টাকা গৃহকর দিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছর পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর পৌরসভা তার বার্ষিক গৃহকর ৪২ হাজার ১১০ টাকা নির্ধারণ করেছে—যা আগের তুলনায় ১১৭ গুণ বেশি।
শুধু আখতারুন বেগম নন, পুরো শহরের প্রায় ৩০ হাজার ভবনমালিক হঠাৎ গৃহকর বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে পড়েছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ ১ জুলাই থেকে নতুন হারে কর পরিশোধে নোটিশ পাঠাতে শুরু করে।
পৌরসভার প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক টি এম এ মমিন এ বিষয়ে বলেন, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী ভবনের আয়তন ও ধরন বিবেচনায় নতুন হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কেউ আপত্তি জানাতে চাইলে তারা ৫০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন রিভিউ বোর্ডে শুনানি শেষে বিবেচনা করা হবে। প্রয়োজনে পৌর প্রশাসক নিজ ক্ষমতাবলে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর ছাড় দিতে পারেন।
পৌরসভার সহকারী কর নির্ধারক জুবায়ের হোসেন বলেন, নওগাঁয় গৃহকর নির্ধারণে ভাড়ার আয় পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরেই অনুসরণ করা হচ্ছে। নির্মাণ ব্যয়ের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করলে আরও বেশি কর দিতে হতো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে ভবনমালিকদের অভিজ্ঞতা একেবারে ভিন্ন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আখতার হামিদ জানান, তার একতলা বাড়িতে দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যেখানে তিনি ও তার ভাই থাকেন। এত দিন এই বাড়ির গৃহকর ছিল ৫৪০ টাকা। এবার তাকে দিতে বলা হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। অথচ বাড়ির গঠন বা ব্যবহারগত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, তার বাসার গৃহকর ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা তিনি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, অটোরিকশাচালক জিয়ারুল হকের মতো নিম্ন আয়ের বাসিন্দারা পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ বলে বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, “তিন রুমের আধাপাকা বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকি। আগে ৩৬০ টাকা দিতাম, এখন বলছে ৩০ হাজার। এই টাকাই যদি কর দিতে হয়, সংসার চালাব কীভাবে?”
এই গৃহকর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে শহরের মুক্তির মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক আজাদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, নওগাঁ পৌরসভা ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলেও নাগরিকেরা এখনও মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, ভাঙা রাস্তা, সুপেয় পানির সংকট—এসব সমস্যা কাটছেই না। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ সময়-সময়ে গৃহকর বাড়াচ্ছে। তারা নতুন কর বাতিল করে আগের নিয়মে কর নির্ধারণের দাবি জানান এবং প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন।