উচ্চ আদালতের আদেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে বরগুনা পৌরসভায় যানবাহন থেকে টোলের নামে আদায় হচ্ছে চাঁদা। চালকদের অভিযোগ, চাঁদা না দিলে হুমকি, মারধর, এমনকি গাড়িও আটকে রাখা হয়। আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে টোল আদায়ের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির বৈধতা দিয়েছে পৌরসভা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বরগুনায় আসা ট্রাক থামিয়ে নিয়মিত উত্তোলন করা হচ্ছে চাঁদা। চালক ও সহযোগী জানান, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কোথাও চাঁদা দিতে না হলেও বরগুনা পৌরসভায় ঢোকার আগেই তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় ২০০ টাকা।
বরগুনা পৌরসভার টোলের নামে শহরে প্রবেশপথ ক্রোক ব্রিজ, পৌর বাস টার্মিনাল ও সোনাখালী এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে সব প্রকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের গাড়ি থেকে প্রতিদিন অন্তত অর্ধলাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকি-ধমকি, মারধর, এমনকি গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে অভিযোগ চালকদের। তারা বলেন, ‘যদি টাকা না দেয়া হয় তাহলে নানা ধরনের বকাবকি করা হয়, মারধরের চেষ্টা করা হয়; টাকা না দিলেই অত্যাচার করা হয়।’
টাকা আদায়কারীদের দাবি, সড়কে যানবাহন থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য তারা পৌরসভার কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। তারা বলেন, ‘টাকা আদায়ের মামলা ছিল, কিন্তু বরগুনা জেলা যারা ইজারা নিয়েছে, তারাই রায় পেয়েছে। যারা ইজারা নিয়েছে তারা এটা দেখভাল করেন এবং আমরা রাস্তায় টোল আদায় করি।’
টাকা আদায় করার জন্য পৌরসভা থেকে ইজারা নেয়া ব্যক্তি সাগর জমাদ্দার বলেন, ‘পৌরসভা মোট তিনবার টেন্ডার কল করেছে। তিনবারের সময় আমরা ইজারা পেয়েছি।’
এর আগে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল টার্মিনাল ব্যতীত সড়ক থেকে টোলের নামে সড়ক থেকে চাঁদা উত্তোলন নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। এ আদেশের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সড়ক থেকে টাকা আদায় বন্ধের নির্দেশ দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখা। আইনজীবীরা জানান, আদালতের আদেশ অমান্য করে টোলের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির বৈধতা দিয়েছে বরগুনা পৌরসভা।
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘এভাবে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জনগণের ভোগান্তিও বেড়েছে।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমুস সাকিব বলেন, ‘বরগুনা পৌরসভা বিভিন্ন সড়ক থেকে যে টোল আদায় করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ চাঁদাবাজি এবং আদালতের আদেশের পরিপন্থি।’
বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘টার্মিনাল যদি না থাকে, তাহলে সেখানে অস্থায়ী টার্মিনাল ব্যবহৃত হবে। অবকাঠামো বা সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে নিজেরা ঘোষণা দিয়ে সেখানে কোনো টাকা নেয়া যাবে না।’
তবে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি বরগুনা পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘যদি এটি করা হয়ে থাকে, তাহলে এটি অবশ্যই অন্যায় এবং একটি বিধি-বহির্ভূত কাজ। পৌরসভার সঙ্গে কথা বলব বিষয়টি নিয়ে এবং তারা যেন এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমরা দেখভাল করব।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরে বরগুনা পৌরসভার তিনটি স্থানে যানবাহন থেকে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।