ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

বড় সাজ্জাদের ‘কিলিং স্কোয়াড’ প্রধান রায়হানকে খুঁজছে পুলিশ চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফের তোলপাড় সৃষ্টি করেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বড় সাজ্জাদ’ বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলম। গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগর, রাউজান ও হাটহাজারী এলাকায় সংঘটিত অন্তত ৯টি হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছে এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ কথিত যুবদল কর্মী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপির এমপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুর্িলশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ৯টি হত্যাকাণ্ডে রায়হান সরাসরি যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রাউজানের যুবদল নেতা সেলিম হত্যা, কাউখালী থেকে যুবদল কর্মী দিদারুল আলমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা, গাজীপাড়ায় ইব্রাহিম হত্যা, চারাবটতল বাজারে আলমগীর আলম হত্যা, হাটহাজারীতে ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম খুন এবং পতেঙ্গা সৈকতে ঢাকাইয়া আকবর হত্যা। এসব ঘটনায় একাধিক থানায় মামলা হয়েছে, তবে এখনো রায়হানকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুলিশের ভাষ্য, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় বসবাস, নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানায়, রায়হানের আসল নাম মোহাম্মদ রেকান আলম। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব রাউজানের বাসিন্দা মোহাম্মদ বদি আলমের ছেলে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তিনি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাজীপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে রায়হানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে হামলা চালায়। বাবলার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালালে তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। গুলিতে আহত হন এরশাদ উল্লাহও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যিনি পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন, তাকে প্রাথমিকভাবে রায়হান হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বাবলার বাবা আবদুল কাদেরও গণমাধ্যমের কাছে একই দাবি করেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বাহিনীর ‘কিলিং স্কোয়াড’ প্রধান রায়হান। বড় সাজ্জাদ বিদেশে বসে তার অপরাধ সাম্রাজ্য কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে পরিচালনা করেন। অপহরণ, চাঁদাবাজি, বালুমহাল দখল, নির্মাণসামগ্রী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আধিপত্য, সবই তাদের দখলে। বড় সাজ্জাদের নির্দেশে টার্গেট খুনের দায়িত্ব পালন করে রায়হান। অস্ত্রভান্ডারের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

সূত্র জানায়, সারোয়ার হোসেন বাবলা একসময় বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছিলেন। পরে বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বড় সাজ্জাদের রোষানলে পড়েন। ছোট সাজ্জাদ গ্রেফতার হওয়ার পর রায়হানকে দিয়ে বাবলাকে হত্যার নির্দেশ দেন বড় সাজ্জাদ। হত্যার তিন দিন আগে রায়হান ফোনে বাবলাকে হুমকি দিয়েছিলেন, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রায়হান এখন বড় সাজ্জাদ বাহিনীর সবচেয়ে ভয়ংকর সদস্য। তাকে ধরতে র্যাব, ডিবি ও জেলা পুলিশ যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। আমরা খুব শিগিগরই তাকে আইনের আওতায় আনব।’

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বড় সাজ্জাদের ‘কিলিং স্কোয়াড’ প্রধান রায়হানকে খুঁজছে পুলিশ চট্টগ্রামে

আপডেট সময় ০৯:৩৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফের তোলপাড় সৃষ্টি করেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বড় সাজ্জাদ’ বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলম। গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগর, রাউজান ও হাটহাজারী এলাকায় সংঘটিত অন্তত ৯টি হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছে এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ কথিত যুবদল কর্মী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপির এমপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুর্িলশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ৯টি হত্যাকাণ্ডে রায়হান সরাসরি যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে রাউজানের যুবদল নেতা সেলিম হত্যা, কাউখালী থেকে যুবদল কর্মী দিদারুল আলমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা, গাজীপাড়ায় ইব্রাহিম হত্যা, চারাবটতল বাজারে আলমগীর আলম হত্যা, হাটহাজারীতে ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম খুন এবং পতেঙ্গা সৈকতে ঢাকাইয়া আকবর হত্যা। এসব ঘটনায় একাধিক থানায় মামলা হয়েছে, তবে এখনো রায়হানকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুলিশের ভাষ্য, পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় বসবাস, নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানায়, রায়হানের আসল নাম মোহাম্মদ রেকান আলম। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পূর্ব রাউজানের বাসিন্দা মোহাম্মদ বদি আলমের ছেলে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তিনি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার হাজীপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে রায়হানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে হামলা চালায়। বাবলার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালালে তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। গুলিতে আহত হন এরশাদ উল্লাহও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যিনি পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন, তাকে প্রাথমিকভাবে রায়হান হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বাবলার বাবা আবদুল কাদেরও গণমাধ্যমের কাছে একই দাবি করেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের বাহিনীর ‘কিলিং স্কোয়াড’ প্রধান রায়হান। বড় সাজ্জাদ বিদেশে বসে তার অপরাধ সাম্রাজ্য কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করে পরিচালনা করেন। অপহরণ, চাঁদাবাজি, বালুমহাল দখল, নির্মাণসামগ্রী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক আধিপত্য, সবই তাদের দখলে। বড় সাজ্জাদের নির্দেশে টার্গেট খুনের দায়িত্ব পালন করে রায়হান। অস্ত্রভান্ডারের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

সূত্র জানায়, সারোয়ার হোসেন বাবলা একসময় বড় সাজ্জাদের অনুসারী ছিলেন। পরে বিএনপির নেতা আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে বড় সাজ্জাদের রোষানলে পড়েন। ছোট সাজ্জাদ গ্রেফতার হওয়ার পর রায়হানকে দিয়ে বাবলাকে হত্যার নির্দেশ দেন বড় সাজ্জাদ। হত্যার তিন দিন আগে রায়হান ফোনে বাবলাকে হুমকি দিয়েছিলেন, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রায়হান এখন বড় সাজ্জাদ বাহিনীর সবচেয়ে ভয়ংকর সদস্য। তাকে ধরতে র্যাব, ডিবি ও জেলা পুলিশ যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। আমরা খুব শিগিগরই তাকে আইনের আওতায় আনব।’