জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় পলাতক ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে গুমের দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আর শাপলা চত্বর হত্যা মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও আদালত অবমাননার অভিযোগে এ বছরের জুলাইতে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল শেখ হাসিনার।
মৃত্যুদণ্ডের মামলা
জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বিভিন্ন অভিযোগে সোমবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালত অবমাননায় দণ্ড
‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—শেখ হাসিনার এমন একটি বক্তব্যের অডিও রেকর্ড অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। তার ওই বক্তব্য বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা উল্লেখ করে প্রসিকিউশন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে। সেই মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
গুমের দুই মামলা
চলতি বছরের ৮ অক্টোবর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচিত গুমের ঘটনায় প্রথমবারের মতো ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিষয়ে দুটি ফরমাল চার্জ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, গুম, গোপন বন্দিশলায় আটক, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের যে অপরাধ হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে এই প্রথম দুটি ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। সেই ফরমাল চার্জ উপস্থাপন করেছি। ট্রাইব্যুনাল সবগুলোর বর্ণনা শুনেছেন। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে কগনাইজেন্স নিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেছেন।
দুটি অভিযোগের মধ্যে একটি হলো গত ১৫ বছরে র্যাবের কিছু বিপদগামী সদস্য টিএফআই সেল এবং বিভিন্ন গোপন বন্দিশালায় ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ব্লগারকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। এ সমস্ত হাজারো অভিযোগের মধ্য থেকে যেগুলো ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি। এর বাইরে ডিজিএফআইয়ের কিছু বিপদগামী সদস্য যারা জেআইসি নামক যে সেন্টারটি আছে সেটিকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের আটক রেখেছিল। সেটার ব্যাপারে আলাদা ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীসহ র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের বেশ কিছু অফিসার যারা আসামি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছি।
এরপর ১৭ নভেম্বর এই দুই মামলার কয়েকজন আসামি সেনা কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হন। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই দুটি মামলার পরবর্তী শুনানি ২৩ নভেম্বর।
শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা আজিজুল হক। হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল-হাবিব ও মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক এমপি হাজি সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহমেদ, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, কমিটির সদস্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এবিনিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও এনএসআইয়ের মো. মনজুর আহমেদ।
১২ নভেম্বর এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনলাইন ডেস্ক 




















