ময়মনসিংহ , সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্টো পথে দেশ বললেন ড. হোসেন জিল্লুর

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তার মতে, উৎপাদনশীল খাতের সংকোচন, শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা এবং দক্ষতা ও বিপণনের ঘাটতি সামগ্রিকভাবে চাকরির সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের সিক্স সিজনস হোটেলে ‘বিয়ন্ড জবলেস গ্রোথ : টুওয়ার্ডস অ্যান এমপ্লয়মেন্ট সেন্ট্রেড পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ থ্রু অ্যা পোস্ট-নিওলিবারেল লেন্স’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টেগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এবং ফ্রিডরিশ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

তিনি বলেন, গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও চাকরির প্রবৃদ্ধি একই হারে বাড়েনি। বিশেষ করে শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও সেবা খাতে প্রত্যাশিত হারে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়াকে তিনি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। বলেন, অর্থনীতি নিয়ে যেখানে আশাবাদ থাকার কথা, সেখানে তরুণদের মধ্যে চাকরির অনিশ্চয়তা দ্রুত বাড়ছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, দেশের বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত হলেও তাদের আয় স্থবির, কাজের নিরাপত্তা অনিশ্চিত এবং সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ সীমিত। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও অটোমেশন শ্রমবাজারকে পুনর্গঠন করলেও দক্ষতা উন্নয়নে যথার্থ বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থানে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরছে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নন-ফার্ম কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া, বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ধীরগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের অনিশ্চয়তাকেও তিনি সামগ্রিক কর্মসংস্থানের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কর্মসংস্থানের স্থবিরতা কাটাতে ড. জিল্লুর তিনটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও নীতি-সহায়তা জোরদার করা, বাজারে চাহিদানির্ভর দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন সহজতর করা এবং উদ্ভাবনী খাতকে প্রণোদনা দেওয়ার মত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, চাকরির প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন করা জরুরি। কর্মসংস্থানের গতি না ফিরলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

শ্রমকেন্দ্রিক নীতি জোরদারের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স তুনিয়ন বলেন, শ্রম অধিকার শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক কর্মসংস্থান কৌশলের সমন্বয়, শিশুযত্ন নীতি উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসম্মত চাকরি সৃষ্টির বিকল্প নেই।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নির্ভর করে উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের চাহিদার সঠিক সমন্বয়ের ওপর। লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা, গ্রামীণ বিনিয়োগ, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও ফ্রিল্যান্সিং সহায়তা যুব বেকারত্ব কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. এম এ রাজ্জাক। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ধারা তরুণ ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দক্ষতার অমিল, ব্যাপক অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, দুর্বল শ্রম অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থান জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিচ্ছিন্নতা দেশের জনমিতিক সুযোগকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নীতি থাকলেও এগুলো বেশির ভাগই আকাঙ্ক্ষানির্ভর; বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব রয়েছে। তাই শিল্প, বাণিজ্য ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি নতুনভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে পুনর্নির্দেশ করার আহ্বান জানান তিনি। অন্যদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ ড. সায়েমা হক বিদিশাসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্টো পথে দেশ বললেন ড. হোসেন জিল্লুর

আপডেট সময় ১০:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিবর্তে উল্টো পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তার মতে, উৎপাদনশীল খাতের সংকোচন, শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা এবং দক্ষতা ও বিপণনের ঘাটতি সামগ্রিকভাবে চাকরির সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের সিক্স সিজনস হোটেলে ‘বিয়ন্ড জবলেস গ্রোথ : টুওয়ার্ডস অ্যান এমপ্লয়মেন্ট সেন্ট্রেড পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ থ্রু অ্যা পোস্ট-নিওলিবারেল লেন্স’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টেগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এবং ফ্রিডরিশ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

তিনি বলেন, গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও চাকরির প্রবৃদ্ধি একই হারে বাড়েনি। বিশেষ করে শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও সেবা খাতে প্রত্যাশিত হারে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়াকে তিনি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। বলেন, অর্থনীতি নিয়ে যেখানে আশাবাদ থাকার কথা, সেখানে তরুণদের মধ্যে চাকরির অনিশ্চয়তা দ্রুত বাড়ছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, দেশের বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত হলেও তাদের আয় স্থবির, কাজের নিরাপত্তা অনিশ্চিত এবং সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ সীমিত। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও অটোমেশন শ্রমবাজারকে পুনর্গঠন করলেও দক্ষতা উন্নয়নে যথার্থ বিনিয়োগ না হওয়ায় কর্মসংস্থানে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরছে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নন-ফার্ম কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া, বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ধীরগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের অনিশ্চয়তাকেও তিনি সামগ্রিক কর্মসংস্থানের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কর্মসংস্থানের স্থবিরতা কাটাতে ড. জিল্লুর তিনটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও নীতি-সহায়তা জোরদার করা, বাজারে চাহিদানির্ভর দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন সহজতর করা এবং উদ্ভাবনী খাতকে প্রণোদনা দেওয়ার মত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, চাকরির প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন করা জরুরি। কর্মসংস্থানের গতি না ফিরলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

শ্রমকেন্দ্রিক নীতি জোরদারের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স তুনিয়ন বলেন, শ্রম অধিকার শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক কর্মসংস্থান কৌশলের সমন্বয়, শিশুযত্ন নীতি উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসম্মত চাকরি সৃষ্টির বিকল্প নেই।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নির্ভর করে উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের চাহিদার সঠিক সমন্বয়ের ওপর। লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা, গ্রামীণ বিনিয়োগ, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও ফ্রিল্যান্সিং সহায়তা যুব বেকারত্ব কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. এম এ রাজ্জাক। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ধারা তরুণ ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দক্ষতার অমিল, ব্যাপক অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, দুর্বল শ্রম অবকাঠামো এবং কর্মসংস্থান জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিচ্ছিন্নতা দেশের জনমিতিক সুযোগকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নীতি থাকলেও এগুলো বেশির ভাগই আকাঙ্ক্ষানির্ভর; বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব রয়েছে। তাই শিল্প, বাণিজ্য ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি নতুনভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে পুনর্নির্দেশ করার আহ্বান জানান তিনি। অন্যদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ ড. সায়েমা হক বিদিশাসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।