প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভের মধ্যে সারা দেশের সরকারি কলেজের শিক্ষকরা আজ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
সেই ধারাবাহিকতায় বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা কলেজ ইউনিটের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শিক্ষকরা বলেন, সাত কলেজ কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়। এটি রাজধানীর দীর্ঘদিনের শিক্ষাগত ঐতিহ্যের অংশ। হঠাৎ করে নাম ও কাঠামো পরিবর্তন করলে সেই ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষার নীতির পরিপন্থি হবে। তাই যুক্তিসংগত গবেষণা, সমীক্ষা, আলোচনাসাপেক্ষে দীর্ঘমেয়াদি ও শিক্ষার্থীবান্ধব সমাধান দিতে হবে।
শিক্ষকদের দাবি, অবকাঠামো, সিলেবাস, প্রশাসনিক কাঠামো ও অংশীজনের মতামত ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়া পদ্ধতিগতভাবে ভুল এবং অপেশাদারিত্বের পরিচয়। খসড়া অধ্যাদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের ক্লাস, পরীক্ষা বা ভর্তি– কোনো কার্যক্রমেই অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ একই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
এসব কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ‘অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা’ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তির ভাষা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। তাদের আশঙ্কা, এটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যমান কাঠামো সংকুচিত করার ইঙ্গিত বহন করতে পারে, যা সাত কলেজ ইস্যুকে আরও জটিল করবে।
ঢাকা কলেজ শিক্ষক ড. মো. দিললর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কিছু কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় মডেলের সমর্থক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বর্তমান প্রস্তাবিত কাঠামো সরকারি কলেজগুলোর সক্ষমতা সংকুচিত করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
এতে রাজধানীর হাজারো শিক্ষার্থী, বিশেষ করে রক্ষণশীল পরিবারের প্রায় চল্লিশ হাজার নারী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা ঝুঁকিতে পড়বে। সাত কলেজের দীর্ঘদিনের সাফল্য, ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে তাদের সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ৫৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও অধ্যাদেশ, সিলেবাস ও প্রশাসনিক কাঠামো চূড়ান্ত না করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার নজির নেই। তাই অংশীজনদের মতামত গ্রহণের আগে শ্রেণিকার্যক্রম শুরুর নোটিশ দেওয়া উদ্বেগজনক।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার স্বার্থে নতুন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর সর্বস্তরে স্থায়ীভাবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে চাইলে শিক্ষক না থাকায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি বন্ধ করতে দ্রুত সমাধান জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তারা।

ডিজিটাল রিপোর্ট 
























