ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

রাবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

রাবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মোবাইল ব্যাংকিং থেকে ১০ হাজার একশ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। টাকা লেনদেনের একটি স্ক্রিনশট কালবেলা প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড় ফ্লাইওভারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, চাঁদাবাজি নয় বরং ছোট ভাইয়ের পাওনা টাকা আদায় করে দিয়েছেন তারা।

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা হলেন জাকির হোসেন। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। অপর অভিযুক্ত নেতা তাকবির আহমেদ ইমন। তিনি আইবিএ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও রাবি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য। তারা দুজনেই শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের অনুসারী বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত আরেকজন হলেন মুজাহিদ আল হাসান সাজু। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা হলেন- মনিরুল ইসলাম জয় ও সাব্বির হোসেন। জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। সাব্বির হোসেনও সামজকর্ম বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জয় বলেন, গত ১৫ দিন আগে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রলীগ নেতাকে তার বিভাগের এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে দেখা করতে বলেন অভিযুক্ত জাকির হোসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার বিভাগের ছোট ভাই। তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমি মুখ দেখাব কী করে। আমি চাই তোমাদের কোনো ক্ষতি না হোক।’ তখন বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান সাজু। তখন জাকির বলেন, ‘আমিও ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময়ে টাকা দিয়েছি। এখন তোমাদের কাছে টাকা দাবি করি কীভাবে? তবে হাবিব ভাই আছে, শফিক ভাই আছে। শফিক ভাই ছাত্রদলের ক্যান্ডিডেট। ভাইয়েরা টাকা চেয়েছে। টাকা না দিলে তারা যা খুশি করতে পারে।’

জানা গেছে, এদিন টাকা না চাইলেও সাজুর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাকির। সাজু ভুক্তভোগীদের জানায়, কিছু টাকা-পয়সা লাগতে পারে। ভাই (জাকির) চাইলে যেন তারা দিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিন মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের সামনে জাকিরের সঙ্গে জয়ের দেখা হয়। সেখানে বর্তমান অবস্থা জানতে চান জয়। সে সময় জাকির বলেন, ‘তোরা বিভাগের ছোট ভাই খুব বেশি টাকা দেওয়া লাগবে না তোদের। দশ করে দুজনে ২০ হাজার টাকা দিলেই হবে।’ এ সময় বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেন তিনি। তবে সাব্বিরের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।

গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ভুক্তভোগী জয়ের বন্ধু সাজুর মাধ্যমে তাদের দুজনকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড়ে ডাকেন জাকির। সেখানে ছাত্রদল নেতা জাকির, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য তাকবির আহমেদ ইমনসহ আরও ১০-১২ ছাত্রদলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জাকির অভিযোগ তোলেন, জয় টাকা দাবির বিষয়টি বিভাগে জানিয়েছে। পরে ১০ হাজার না বরং এক লাখ টাকা দাবি করেন জাকির। জয়ের পক্ষে লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে জানালে ছাত্রদল নেতা ইমন তার কলার চেপে ধরেন এবং তার ফোন কেড়ে নেন। এ সময় জাকির উপস্থিত কয়েকজনকে রড আর স্ট্যাম্প রেডি করতে বলেন। বলেন, এগুলো আজ কাজে লাগবে।

এ সময় অভিযুক্ত সাজু জানতেন জয়ের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১০ হাজার টাকা আছে। এ সময় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ হাজার একশ টাকা সাজুর অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেন তিনি। তখন জাকির বলেন, ‘আজকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যা, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিবি। নয়তো তোকে মেরে পুলিশে দেব।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আমি গত ১৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। এরপর থেকে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। কোনো ঝামেলায় যাতে না পড়ি এ জন্য আমি বিভাগের বড় ভাই জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে তিনি আমাকে ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি আরও ৪০ হাজার টাকা না দিলে মারধর এবং পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনে যুক্ত থাকায় ছাত্রলীগের হেনস্থার শিকার হয়েছি। এখন যদি ছাত্রদলের কাছে হেনস্থা হই, তবে আমি যাব কোথায়?’

অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, ‘যে ছেলেটা অভিযোগ করেছে তার কাছে আমার ছোট ভাই সাজু টাকা পেত। সে আমাকে বলে, ও তো আমার টাকাটা দিচ্ছে না। গড়িমসি করছে। আমাদের সঙ্গে একটু বসেন। আমি নিয়মিত অক্ট্রয় মোড়ে বসি। সেখানে আমি ওই ছেলেকে নিয়ে আসতে বলি। পরে সাজু তাকে সেখানে ডেকে নিয়ে আসে। ওই ছেলের সঙ্গে পরে আমি কথা বলি। তাকে বকাবকি কিংবা মারধর কোনোটাই করা হয়নি। তাকে শুধু বোঝানো হয়েছে। পরে সে টাকা দিয়ে দিয়েছে। টাকাটা সাজুর ফোনেই ট্রাঞ্জেকশন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে ইমনসহ আরও কয়েকজনের উপস্থিতির বিষয়টিও স্বীকার করেন জাকির।’

অপর অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাকবির আহমেদ ইমন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তাছাড়া জাকির ছাত্রদলের কর্মী আর আমি আহ্বায়ক সদস্য। তার সহযোগী হিসেবে আমি তো থাকতে পারি না। আমার সিনিয়র কেউ যদি সেখানে থাকত তবে আমি তার সহযোগী হিসেবে থাকতে পারতাম। ঘটনাটি তাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যু। এটি একান্ত তাদেরই ব্যাপার। জাকির ভাইয়ের সঙ্গে আমার রাত আটটার দিকে দেখা হয়েছিল। আর যে সময়ের কথা আপনি বলছেন, সে সময় আমি হলের রিডিংরুমে ছিলাম।’

তবে এ ঘটনায় ইমনের সম্পৃক্তার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত এক ছাত্রদল কর্মী। তিনি বলেন, ‘আমি বিস্তারিত ঘটনা জানি না। তবে সেদিন রাত দশটার সময় ইমন ভাই অক্ট্রয় মোড়ে জাকির ভাইয়ের সঙ্গে ছিল।’

জয়ের বন্ধু অভিযুক্ত মুজাহিদ আল হাসান সাজু বলেন, আমার মোবাইলে টাকা আসছে বিষয়টি সত্য। তবে সেটি চাঁদাবাজির টাকা নয়, আমার ব্যক্তিগত পাওনা টাকা ছিল। জয় টাকা দিচ্ছিল না তাই তার কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করেছি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমার সঙ্গে অনেকেই রাজনীতি করে। কেউ যদি এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার দায় আমি নেব না। আমি সবসময়ই নেতাকর্মীদের কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত না থাকার পরামর্শ দিই।

সার্বিক বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই চাঁদাবাজি করছে। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সে সুযোগ নেই। তবুও যদি কোনো ছাত্রদল নেতা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে এবং তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই দলের সাংগঠনিক অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

আপডেট সময় ০২:২৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রাবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মোবাইল ব্যাংকিং থেকে ১০ হাজার একশ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। টাকা লেনদেনের একটি স্ক্রিনশট কালবেলা প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড় ফ্লাইওভারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, চাঁদাবাজি নয় বরং ছোট ভাইয়ের পাওনা টাকা আদায় করে দিয়েছেন তারা।

অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা হলেন জাকির হোসেন। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। অপর অভিযুক্ত নেতা তাকবির আহমেদ ইমন। তিনি আইবিএ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও রাবি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য। তারা দুজনেই শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের অনুসারী বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত আরেকজন হলেন মুজাহিদ আল হাসান সাজু। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা হলেন- মনিরুল ইসলাম জয় ও সাব্বির হোসেন। জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। সাব্বির হোসেনও সামজকর্ম বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জয় বলেন, গত ১৫ দিন আগে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রলীগ নেতাকে তার বিভাগের এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে দেখা করতে বলেন অভিযুক্ত জাকির হোসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার বিভাগের ছোট ভাই। তোমাদের কিছু হয়ে গেলে আমি মুখ দেখাব কী করে। আমি চাই তোমাদের কোনো ক্ষতি না হোক।’ তখন বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান সাজু। তখন জাকির বলেন, ‘আমিও ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময়ে টাকা দিয়েছি। এখন তোমাদের কাছে টাকা দাবি করি কীভাবে? তবে হাবিব ভাই আছে, শফিক ভাই আছে। শফিক ভাই ছাত্রদলের ক্যান্ডিডেট। ভাইয়েরা টাকা চেয়েছে। টাকা না দিলে তারা যা খুশি করতে পারে।’

জানা গেছে, এদিন টাকা না চাইলেও সাজুর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জাকির। সাজু ভুক্তভোগীদের জানায়, কিছু টাকা-পয়সা লাগতে পারে। ভাই (জাকির) চাইলে যেন তারা দিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিন মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের সামনে জাকিরের সঙ্গে জয়ের দেখা হয়। সেখানে বর্তমান অবস্থা জানতে চান জয়। সে সময় জাকির বলেন, ‘তোরা বিভাগের ছোট ভাই খুব বেশি টাকা দেওয়া লাগবে না তোদের। দশ করে দুজনে ২০ হাজার টাকা দিলেই হবে।’ এ সময় বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত টাকা দেওয়ার সময় বেঁধে দেন তিনি। তবে সাব্বিরের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।

গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ভুক্তভোগী জয়ের বন্ধু সাজুর মাধ্যমে তাদের দুজনকে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড়ে ডাকেন জাকির। সেখানে ছাত্রদল নেতা জাকির, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য তাকবির আহমেদ ইমনসহ আরও ১০-১২ ছাত্রদলের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে জাকির অভিযোগ তোলেন, জয় টাকা দাবির বিষয়টি বিভাগে জানিয়েছে। পরে ১০ হাজার না বরং এক লাখ টাকা দাবি করেন জাকির। জয়ের পক্ষে লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে জানালে ছাত্রদল নেতা ইমন তার কলার চেপে ধরেন এবং তার ফোন কেড়ে নেন। এ সময় জাকির উপস্থিত কয়েকজনকে রড আর স্ট্যাম্প রেডি করতে বলেন। বলেন, এগুলো আজ কাজে লাগবে।

এ সময় অভিযুক্ত সাজু জানতেন জয়ের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১০ হাজার টাকা আছে। এ সময় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ হাজার একশ টাকা সাজুর অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেন তিনি। তখন জাকির বলেন, ‘আজকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যা, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা দিবি। নয়তো তোকে মেরে পুলিশে দেব।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আমি গত ১৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। এরপর থেকে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। কোনো ঝামেলায় যাতে না পড়ি এ জন্য আমি বিভাগের বড় ভাই জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তবে তিনি আমাকে ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি আরও ৪০ হাজার টাকা না দিলে মারধর এবং পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আন্দোলনে যুক্ত থাকায় ছাত্রলীগের হেনস্থার শিকার হয়েছি। এখন যদি ছাত্রদলের কাছে হেনস্থা হই, তবে আমি যাব কোথায়?’

অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, ‘যে ছেলেটা অভিযোগ করেছে তার কাছে আমার ছোট ভাই সাজু টাকা পেত। সে আমাকে বলে, ও তো আমার টাকাটা দিচ্ছে না। গড়িমসি করছে। আমাদের সঙ্গে একটু বসেন। আমি নিয়মিত অক্ট্রয় মোড়ে বসি। সেখানে আমি ওই ছেলেকে নিয়ে আসতে বলি। পরে সাজু তাকে সেখানে ডেকে নিয়ে আসে। ওই ছেলের সঙ্গে পরে আমি কথা বলি। তাকে বকাবকি কিংবা মারধর কোনোটাই করা হয়নি। তাকে শুধু বোঝানো হয়েছে। পরে সে টাকা দিয়ে দিয়েছে। টাকাটা সাজুর ফোনেই ট্রাঞ্জেকশন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে ইমনসহ আরও কয়েকজনের উপস্থিতির বিষয়টিও স্বীকার করেন জাকির।’

অপর অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাকবির আহমেদ ইমন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তাছাড়া জাকির ছাত্রদলের কর্মী আর আমি আহ্বায়ক সদস্য। তার সহযোগী হিসেবে আমি তো থাকতে পারি না। আমার সিনিয়র কেউ যদি সেখানে থাকত তবে আমি তার সহযোগী হিসেবে থাকতে পারতাম। ঘটনাটি তাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যু। এটি একান্ত তাদেরই ব্যাপার। জাকির ভাইয়ের সঙ্গে আমার রাত আটটার দিকে দেখা হয়েছিল। আর যে সময়ের কথা আপনি বলছেন, সে সময় আমি হলের রিডিংরুমে ছিলাম।’

তবে এ ঘটনায় ইমনের সম্পৃক্তার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপস্থিত এক ছাত্রদল কর্মী। তিনি বলেন, ‘আমি বিস্তারিত ঘটনা জানি না। তবে সেদিন রাত দশটার সময় ইমন ভাই অক্ট্রয় মোড়ে জাকির ভাইয়ের সঙ্গে ছিল।’

জয়ের বন্ধু অভিযুক্ত মুজাহিদ আল হাসান সাজু বলেন, আমার মোবাইলে টাকা আসছে বিষয়টি সত্য। তবে সেটি চাঁদাবাজির টাকা নয়, আমার ব্যক্তিগত পাওনা টাকা ছিল। জয় টাকা দিচ্ছিল না তাই তার কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করেছি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমার সঙ্গে অনেকেই রাজনীতি করে। কেউ যদি এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার দায় আমি নেব না। আমি সবসময়ই নেতাকর্মীদের কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত না থাকার পরামর্শ দিই।

সার্বিক বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই চাঁদাবাজি করছে। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সে সুযোগ নেই। তবুও যদি কোনো ছাত্রদল নেতা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে এবং তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই দলের সাংগঠনিক অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।