ময়মনসিংহ , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটা যেভাবে চলছে, যা জানালেন ইটভাটা কতৃর্পক্ষ

  • অজিফা ইফতাক মিম
  • আপডেট সময় ০৪:০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে  চলছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমি আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটার কারণে মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষিত হলেও প্রশাসনের অভিযানে চলছে ধীরগতি। ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটা যেভাবে চলছে জানালেন ইটভাটা কতৃর্পক্ষ তারা বলছেন, এসব পরিচালনা করতে ভাটাপ্রতি ইউএনওকে তারা দিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং কৃষি জমিসহ পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ অধিফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে সিটি করপোরেশন এলাকা এবং এর আশপাশের ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ।

এবছর ফুলপুর উপজেলায় ৩২টি ইটভাটায় শুরু হয়েছে ইটপোড়ানোর কর্মযজ্ঞ। এরমধ্যে ২৮টি ভাটাই চলছে ছাড়পত্র ছাড়া। এসব ভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, গাছের ফলমূল ও সবজি খেত। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হলেও নীরব তারা। কাগজপত্র নেই তবে পরিবেশ দূষণ করে কিভাবে চলছে এসব ভাটা এমন প্রশ্নের জবাবে ভাটা কতৃর্পক্ষ বলছেন বিজয় দিবস, আন্তাজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য ভাটাপ্রতি তারা ইউএনওকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে দিচ্ছেন। এজন্য ভাটায় কোন ধরনের অভিযান হয় না বললেই চলে।

দাওয়া ব্রিকসের সিনিয়র ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের পাশাপাশি দুটি ভাটা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে এবছর একটি বন্ধ থাকলেও আরেকটি চালু রয়েছে। সকল কাগজপত্র না থাকলেও আমাদের কিছু কাগজপত্র আপডেট আছে। আর আমরা ইউএনওকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। টাকার জন্য ইউএনও কলও দিয়েছিলেন। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন কি ইউএনও এমন প্রশ্ন করলে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ২০ হাজার টাকাও না আরও বেশি দিতে হয় উনাকে। আর সে টাকা সকল ভাটার মালিক একত্রিত করে সভাপতির হাতে দিলে সভাপতি পরে পৌঁছে দেন।
নাম প্রকাশে আরেক ভাটার মালিক বলেন, ভাটার অবস্থা বুঝে ইউএনওকে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়। আর সেটা বাধ্যতামূলক, ইউএনও যোগদান করার পরপরই ভাটা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানেও টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। প্রশাসন চাইলে একদিনেই সকল ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে, আর তারাও চায় না ভাটা বন্ধ হয়ে যাক।

সামাদ ব্রিকসের ম্যানেজার আব্দুল মালেক খান বলেন, প্রতিবছর আমরা প্রশাসনকেই ম্যানেজ করেই কার্যক্রম শুরু করি। সাংবাদিকরা লিখলে কিছুই হয় না। সাময়িক হয়রানি ছাড়া ভাটা তো আর বন্ধ করতে পারবেন না।

উপজেলা প্রশাসনকে অর্থের মাধ্যমে ম্যানেজ করে ভাটা পরিচালিত হওয়ায় নেই কোন অভিযান। যার কারণে প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেটে জিম্মি ভাটার শ্রমিক ও সাধারণ কৃষক।

কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার ৯০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে। এর চারপাশে দাওয়া, সামাদ ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ব্রিকস রয়েছে। তারা আমার জমির চারপাশ থেকে মাটি কিনে নিলে আমার জমিটুকু টিলায় পরিণত হয়। পরে বাধ্য হয়ে আমার জমির মাটিটুকু তাদের কাছে বিক্রি করি। মানুষকে তারা অনেকটা জিম্মি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। না হয় শাকসবজি, গাছপালা যেভাবে ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে কিছুদিন তার আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ভাটায় কাজ করা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১৫ বছর আগেও আমাদের যে মজুরি ছিল এখনো তাই। কারণ এক প্রকার মালিকের কাছে জিম্মি। অভাবের তাড়নায় তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তার মাশুল দিতে হয় ঘাম জড়িয়ে। এই পদ্ধতির নিরসন হওয়া প্রয়োজন।

প্রশাসনকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে এবছর এখনো কোন আলোচনা হয়নি জানিয়ে ফুলপুর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোতুর্জা তালুকদার বলেন, আমার ভাটার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে, তাই কাউকে আমার তোষামোদি করতে হয় না। যাদের কাগজপত্র নাই তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে এটা তাদের বিষয়। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি ইউএনওকে দেই সেটাও সত্য নয়।

তবে সম্প্রতি ভাটা মালিকদের সঙ্গে নিজ কাযার্লয়ে বসে আলোচনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা বলছেন টাকা নেওয়ার কথা অসত্য। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেজ বাবুল আলম বলেন, জেলায় গড়ে ওঠা ২৮৬টি ইটভাটার মধ্যে ২৫৩টিরই ছাড়পত্র নেই। লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান করা যাচ্ছে না। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১১টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ইটভাটা চলছে সেটা সঠিক নয়। শিডিউল অনুযায়ী আমরা প্রত্যেক উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটা যেভাবে চলছে, যা জানালেন ইটভাটা কতৃর্পক্ষ

আপডেট সময় ০৪:০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে  চলছে অবৈধ ইটভাটা। কৃষিজমি আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ভাটার কারণে মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষিত হলেও প্রশাসনের অভিযানে চলছে ধীরগতি। ময়মনসিংহে অবৈধ ইটভাটা যেভাবে চলছে জানালেন ইটভাটা কতৃর্পক্ষ তারা বলছেন, এসব পরিচালনা করতে ভাটাপ্রতি ইউএনওকে তারা দিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং কৃষি জমিসহ পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ অধিফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে সিটি করপোরেশন এলাকা এবং এর আশপাশের ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ।

এবছর ফুলপুর উপজেলায় ৩২টি ইটভাটায় শুরু হয়েছে ইটপোড়ানোর কর্মযজ্ঞ। এরমধ্যে ২৮টি ভাটাই চলছে ছাড়পত্র ছাড়া। এসব ভাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, গাছের ফলমূল ও সবজি খেত। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হলেও নীরব তারা। কাগজপত্র নেই তবে পরিবেশ দূষণ করে কিভাবে চলছে এসব ভাটা এমন প্রশ্নের জবাবে ভাটা কতৃর্পক্ষ বলছেন বিজয় দিবস, আন্তাজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য ভাটাপ্রতি তারা ইউএনওকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে দিচ্ছেন। এজন্য ভাটায় কোন ধরনের অভিযান হয় না বললেই চলে।

দাওয়া ব্রিকসের সিনিয়র ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের পাশাপাশি দুটি ভাটা রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে এবছর একটি বন্ধ থাকলেও আরেকটি চালু রয়েছে। সকল কাগজপত্র না থাকলেও আমাদের কিছু কাগজপত্র আপডেট আছে। আর আমরা ইউএনওকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন। টাকার জন্য ইউএনও কলও দিয়েছিলেন। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন কি ইউএনও এমন প্রশ্ন করলে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ২০ হাজার টাকাও না আরও বেশি দিতে হয় উনাকে। আর সে টাকা সকল ভাটার মালিক একত্রিত করে সভাপতির হাতে দিলে সভাপতি পরে পৌঁছে দেন।
নাম প্রকাশে আরেক ভাটার মালিক বলেন, ভাটার অবস্থা বুঝে ইউএনওকে ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়। আর সেটা বাধ্যতামূলক, ইউএনও যোগদান করার পরপরই ভাটা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানেও টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। প্রশাসন চাইলে একদিনেই সকল ইটভাটা বন্ধ হয়ে যাবে, আর তারাও চায় না ভাটা বন্ধ হয়ে যাক।

সামাদ ব্রিকসের ম্যানেজার আব্দুল মালেক খান বলেন, প্রতিবছর আমরা প্রশাসনকেই ম্যানেজ করেই কার্যক্রম শুরু করি। সাংবাদিকরা লিখলে কিছুই হয় না। সাময়িক হয়রানি ছাড়া ভাটা তো আর বন্ধ করতে পারবেন না।

উপজেলা প্রশাসনকে অর্থের মাধ্যমে ম্যানেজ করে ভাটা পরিচালিত হওয়ায় নেই কোন অভিযান। যার কারণে প্রভাবশালী এসব সিন্ডিকেটে জিম্মি ভাটার শ্রমিক ও সাধারণ কৃষক।

কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার ৯০ শতাংশ কৃষি জমি রয়েছে। এর চারপাশে দাওয়া, সামাদ ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ব্রিকস রয়েছে। তারা আমার জমির চারপাশ থেকে মাটি কিনে নিলে আমার জমিটুকু টিলায় পরিণত হয়। পরে বাধ্য হয়ে আমার জমির মাটিটুকু তাদের কাছে বিক্রি করি। মানুষকে তারা অনেকটা জিম্মি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। না হয় শাকসবজি, গাছপালা যেভাবে ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে কিছুদিন তার আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ভাটায় কাজ করা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১৫ বছর আগেও আমাদের যে মজুরি ছিল এখনো তাই। কারণ এক প্রকার মালিকের কাছে জিম্মি। অভাবের তাড়নায় তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তার মাশুল দিতে হয় ঘাম জড়িয়ে। এই পদ্ধতির নিরসন হওয়া প্রয়োজন।

প্রশাসনকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে এবছর এখনো কোন আলোচনা হয়নি জানিয়ে ফুলপুর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোতুর্জা তালুকদার বলেন, আমার ভাটার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে, তাই কাউকে আমার তোষামোদি করতে হয় না। যাদের কাগজপত্র নাই তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলে এটা তাদের বিষয়। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি ইউএনওকে দেই সেটাও সত্য নয়।

তবে সম্প্রতি ভাটা মালিকদের সঙ্গে নিজ কাযার্লয়ে বসে আলোচনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা বলছেন টাকা নেওয়ার কথা অসত্য। আগামী ২২ ডিসেম্বর ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেজ বাবুল আলম বলেন, জেলায় গড়ে ওঠা ২৮৬টি ইটভাটার মধ্যে ২৫৩টিরই ছাড়পত্র নেই। লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান করা যাচ্ছে না। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১১টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ইটভাটা চলছে সেটা সঠিক নয়। শিডিউল অনুযায়ী আমরা প্রত্যেক উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করছি।