আগামী সরকারকে শক্তিশালী ম্যান্ডেটের ওপর দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, যদি ম্যান্ডেট দুর্বল হয় তাহলে হয়তো অনেক কাজ করা সম্ভব হবে না। সেই শক্তিশালী ম্যান্ডেট যদি পেতে হয় তবে অবশ্যই জনসমর্থন লাগবে। নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা।
গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি আয়োজিত ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
এ সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। সব সময় জনপ্রিয় সিদ্ধান্তই যে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে তা নয়; এ কারণে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি কাজ করবে এবং দলের পরিকল্পনাগুলো নিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের ছড়িয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমাদের কথাগুলো, সব চিন্তা-ভাবনাগুলো কিন্তু এক। হয়তো বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে একটু ভিন্নভাবে আমরা উপস্থাপন করছি। কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো এক। এতো মানুষ যখন একইভাবে একই কথা, একই কাজ চিন্তা করছে। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি অবশ্যই ইনশাআল্লাহ আমরা কাজগুলো করতে সক্ষম হব।
তারেক রহমান বলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে, একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে, রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে, রাজনৈতিক দলের অ্যাকটিভিস্ট হিসাবে আমাদের এবং আমরা সবাই যারা বিশ্বাস করি যে, এই কাজগুলো করলে দেশের এবং দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
তারেক রহমান বলেন, যারা আগামীতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। প্রথমে একটি বিষয় এনশিওর করতে হবে, সেটা হচ্ছে ‘রুল অফ ল’- মানুষের নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা, এক বাক্যে যা আমরা বলি- এই জিনিসটাকে প্রথমেই বোধহয় আমাদের চেষ্টা করতে হবে, সর্বশক্তি দিয়ে এটাকে এনশিওর করার।
রাজধানীর যানজট নিয়ে তারেক রহমান বলেন, প্রতিদিন নগরবাসীকে যানজট পোহাতে হচ্ছে। এই বিষয়টি অবশ্যই আগামী সরকারকে অ্যাড্রেস করতে হবে। আমাদের এর সমাধান বের করতে হবে। ঢাকা শহরে প্রায় দেড়-দুই কোটি মানুষ বাস করত শুনতাম, এখন নতুন পরিসংখ্যান বলছে এটা বোধহয় তিন কোটির কাছাকাছি। প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি মানুষ অন্তত চলাফেরা করছে। এসব মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করবে এরকম পরিস্থিতি আমাদের তৈরি করতে হবে।
এ সময় রাজধানীর পানি সংকট নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ঢাকা শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল নিচে নেমে গেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি সম্পূর্ণ ব্যবহারের অযোগ্য। শীতলক্ষ্যা নদীর পানিও ব্যবহারের অযোগ্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। মেঘনা নদীর আশপাশে এখন মিল-ফ্যাক্টরি হচ্ছে এবং কয়েক বছর পরে এটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যাবে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে সমাধান করতে হবে।
শিক্ষা এবং ক্রীড়া বিষয়ে চিন্তা-পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের পরিকল্পনার ৪০ শতাংশ যদি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু শাস্তি দিয়ে এটার সমাধান করা সম্ভব নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারীদের কর্মসংস্থান, ফ্যামিলি কার্ড ও নারী শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, জনগণের সমর্থনে আমরা সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারব। কৃষক কার্ড নিয়ে আমরা প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক পর্যন্ত আপাতত যাব। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে দেড় কোটির কম-বেশি কৃষক আছেন। কৃষক কার্ডের মাধ্যমে আমরা ১০টি সুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।
রাজনীতিতে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে রাজনীতি করলে জনগণের প্রকৃত সমস্যা বোঝা যায় না। যানজট, দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থান- এই সমস্যাগুলোকে মানুষ যেন স্বাভাবিক বলে মেনে না নেয়, সেজন্য আমাদের ভাবতে হবে। পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন প্রমুখ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইন অনুষদের সাবেক ডিন ড. বোরহান উদ্দিন খান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতা উপস্থিত ছিলেন।

ডিজিটাল ডেস্ক 























