‘আমি নির্দোষ, আমি কোনো অপরাধ করিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন ।
আজ বুধবার ঢাকার আদালতে হাতিরঝিল থানার এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য পলককে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পলক বলেন, ‘আদালতে বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি।’
এসময় পলক তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। ১০টা ৪০ মিনিটে এজলাসে বিচারক আসলে নিশ্চুপ হয়ে যা তিনিন। তারপর ১০টা ৪৫ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
পলক তার আইনজীবীকে আরও বলেন, ‘আপাতত কিছু এক্সারসাইজ করছি। সঙ্গে ব্যাকপেইনের ঔষধ খাচ্ছি। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট থেরাপি প্রয়োজন। থেরাপির সুযোগ পাচ্ছি না।’
পলকের আইনজীবী রাখি বলেন, ‘উনি (পলক) ব্যাকপেইনে ভুগছেন। যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উনি জানিয়েছেন ব্যাকপেইনের জন্য থেরাপি প্রয়োজন।’
আদালতে পলকের বই পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালতে উনি বই পড়েন বেশিরভাগ সময়। আমাদের কাছে বেশকিছু বই চেয়েছিলেন। কিন্তু ৩টা বই আমরা দিতে পারিনি। ওই বইগুলো পাওয়া যায়নি।’
আদালতে দুয়োধ্বনি শুনেও হাসলেন ইনু
বুধবার আদালতে হাসিমুখে দেখা যায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে। তবে এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো জবাব দেননি তিনি।
এদিন সকালে মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কড়া নিরাপত্তায় ইনুকে আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দেখা যায় তাকে। তখন পাশ থেকে কিছু লোক চিৎকার করে বলে ওঠেন- ‘হাসে। শরম নাই? দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে, এরপরও হাসে। লজ্জা-শরম নাই। এদের বাঁচাই রাখা উচিত না।’ এসব কথা শুনেও মুচকি হাসতে থাকেন হাসানুল হক ইনু। পরে ধীরে ধীরে তাকে হাজতখানার দিকে নিয়ে যায় পুলিশ।
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার ইনু-কামাল-পলকসহ চারজন
জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিন সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তার দেখানো অপর আসামিরা হলেন- সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ডিএমপির সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ। পশ্চিম রামপুরায় রমজান মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় হাসানুল হক ইনু ও পলককে, মিরপুরে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভী হত্যা মামলায় কামাল আহমেদ মজুমদার এবং ভাটারা থানায় শামিম মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় শহিদুল্লাহকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির দিন বুধবার ধার্য করেন। আজ শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য জানান।
রমজান মিয়া হত্যা মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন রমজান মিয়া। এদিন সকাল ১০টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। আলভী হত্যা মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ এ আন্দোলন অংশ নেয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভী। বিকেল ৪টায় গুলি এসে আলভীর বুকে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় হসপিটালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যায় আলভী।
শামিম মিয়া হত্যাচেষ্টা মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ভুক্তভোগী মো. শামিম মিয়া রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। তার শরীরে চারটি গুলি লাগে। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তিনি। এ ঘটনায় গত ২২ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন।