ময়মনসিংহ , মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বাবাকে হত্যার পর মরদেহের পাশে ছেলে সিগারেট ধরায় নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ বললেন ইসি আনোয়ারুল আসুন সবাই মিলে বাংলাদেশকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করি বললেন মঈন খান দেশের ক্ষতি করে কোনো সিদ্ধান্ত নয় বললেন নৌ উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বললেন মির্জা ফখরুল নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল বিক্ষোভের চেষ্টা করলে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ বললেন প্রেস সচিব দুর্বৃত্তের আগুন এনসিপির নেতার বাড়ির গেটে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে যুবক নিহত মুন্সিগঞ্জে কারামুক্তিতে বাধা নেই , লতিফ সিদ্দিকীর জামিন আপিল বিভাগে বহাল খাগড়াছড়ি কারাগারের দেওয়াল টপকে পালালো দুই আসামী, আটক ১
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির পাকিস্তানের

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এখন আরও ক্ষমতাধর অবস্থানে যাচ্ছেন। দেশটির সরকার নতুন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাঠামো ও নেতৃত্বব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে—যার দায়িত্বও পালন করবেন বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির। এই সংশোধনের ফলে তিনি হবেন দেশের সামরিক বাহিনীর একক ও সর্বোচ্চ কমান্ডার।

গত শনিবার পাকিস্তানের সংসদে উপস্থাপিত এই সংশোধনী বিলে সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মূলত সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে। বিল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর প্রধান ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস নিয়োগ দেবেন। একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস পদে থাকা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে পরামর্শ করে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিয়োগ করবেন। এই পদটিও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাই দখল করবেন।

সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব এয়ার ফোর্স এবং অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট পদে উন্নীত করার ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে। এসব পদ মর্যাদা ও সুবিধা আজীবন বহাল থাকবে। অর্থাৎ, একবার ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হলে তিনি জীবনভর এই পদবিই বহন করবেন।

এর ফলে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। চার দিনব্যাপী ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের পর গত মে মাসে পাকিস্তান সরকার তাকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে—দেশটির ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। ওই সংঘাতে ভারতের বিমান হামলায় পাকিস্তানের অন্তত এক ডজন যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। সংঘাত শেষে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে ইসলামাবাদ সেনা কাঠামোতে নতুনভাবে সমন্বিত কমান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার শনিবার সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে এই বিল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এতে মোট ৪৯টি ধারা রয়েছে, যার মধ্যে মূলত তিনটি প্রধান ও দুটি সহায়ক ক্ষেত্র সংশোধনের আওতায় আসবে। সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রেজা গিলানি বিলটি আইন ও বিচার বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে পাঠান বিস্তারিত আলোচনার জন্য।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখবাজ শরিফ আজারবাইজান থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠক পরিচালনা করেন। বৈঠকে মন্ত্রিসভা সংশোধনীর খসড়াকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয়।

তবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এই প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলের নেতা আলি জাফর বলেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকাকালে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা অনুচিত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ও তার মিত্র দলগুলো বিলটি দ্রুত পাশ করাতে অযথা তাড়াহুড়া করছে।

তিনি বলেন, ‘শনিবারই আমরা বিলের খসড়া হাতে পেয়েছি, এখনো সেটি পড়ার সুযোগ হয়নি। যে বিল আমরা পড়িনি, তা নিয়ে বিতর্ক করা সম্ভব নয়।’

বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার বলছে, সংশোধনীটি আধুনিক যুদ্ধের নতুন বাস্তবতা এবং সামরিক সমন্বয়ের চাহিদা থেকে নেওয়া শিক্ষা অনুযায়ী আনা হয়েছে। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা ও চার দিনের সংঘাতের পর পাকিস্তান সরকার মনে করে, বিচ্ছিন্ন কমান্ড কাঠামো বদলে একীভূত সামরিক নেতৃত্ব গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া সংশোধনী বিলে বিচারব্যবস্থায়ও বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব আছে। ফেডারেল সংবিধানিক আদালত গঠন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি পরিবর্তন এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার কাঠামো সংশোধনের বিষয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত।

সব মিলিয়ে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে—যার ফলে জেনারেল আসিম মুনির এখন শুধু সেনাবাহিনীর নয়, বরং পুরো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একীভূত সর্বময় কর্তৃত্বের অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাবাকে হত্যার পর মরদেহের পাশে ছেলে সিগারেট ধরায়

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির পাকিস্তানের

আপডেট সময় ১০:০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এখন আরও ক্ষমতাধর অবস্থানে যাচ্ছেন। দেশটির সরকার নতুন সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাঠামো ও নেতৃত্বব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে—যার দায়িত্বও পালন করবেন বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির। এই সংশোধনের ফলে তিনি হবেন দেশের সামরিক বাহিনীর একক ও সর্বোচ্চ কমান্ডার।

গত শনিবার পাকিস্তানের সংসদে উপস্থাপিত এই সংশোধনী বিলে সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা মূলত সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে। বিল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর প্রধান ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস নিয়োগ দেবেন। একই সঙ্গে সেনাপ্রধান ও চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস পদে থাকা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে পরামর্শ করে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিয়োগ করবেন। এই পদটিও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাই দখল করবেন।

সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব এয়ার ফোর্স এবং অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট পদে উন্নীত করার ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে। এসব পদ মর্যাদা ও সুবিধা আজীবন বহাল থাকবে। অর্থাৎ, একবার ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হলে তিনি জীবনভর এই পদবিই বহন করবেন।

এর ফলে পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে। চার দিনব্যাপী ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের পর গত মে মাসে পাকিস্তান সরকার তাকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করে—দেশটির ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। ওই সংঘাতে ভারতের বিমান হামলায় পাকিস্তানের অন্তত এক ডজন যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। সংঘাত শেষে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে ইসলামাবাদ সেনা কাঠামোতে নতুনভাবে সমন্বিত কমান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার শনিবার সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটে এই বিল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এতে মোট ৪৯টি ধারা রয়েছে, যার মধ্যে মূলত তিনটি প্রধান ও দুটি সহায়ক ক্ষেত্র সংশোধনের আওতায় আসবে। সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রেজা গিলানি বিলটি আইন ও বিচার বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে পাঠান বিস্তারিত আলোচনার জন্য।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখবাজ শরিফ আজারবাইজান থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠক পরিচালনা করেন। বৈঠকে মন্ত্রিসভা সংশোধনীর খসড়াকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয়।

তবে বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এই প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলের নেতা আলি জাফর বলেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকাকালে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে আলোচনা অনুচিত। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ও তার মিত্র দলগুলো বিলটি দ্রুত পাশ করাতে অযথা তাড়াহুড়া করছে।

তিনি বলেন, ‘শনিবারই আমরা বিলের খসড়া হাতে পেয়েছি, এখনো সেটি পড়ার সুযোগ হয়নি। যে বিল আমরা পড়িনি, তা নিয়ে বিতর্ক করা সম্ভব নয়।’

বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার বলছে, সংশোধনীটি আধুনিক যুদ্ধের নতুন বাস্তবতা এবং সামরিক সমন্বয়ের চাহিদা থেকে নেওয়া শিক্ষা অনুযায়ী আনা হয়েছে। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত উত্তেজনা ও চার দিনের সংঘাতের পর পাকিস্তান সরকার মনে করে, বিচ্ছিন্ন কমান্ড কাঠামো বদলে একীভূত সামরিক নেতৃত্ব গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া সংশোধনী বিলে বিচারব্যবস্থায়ও বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব আছে। ফেডারেল সংবিধানিক আদালত গঠন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি পরিবর্তন এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার কাঠামো সংশোধনের বিষয়ও এতে অন্তর্ভুক্ত।

সব মিলিয়ে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোয় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে—যার ফলে জেনারেল আসিম মুনির এখন শুধু সেনাবাহিনীর নয়, বরং পুরো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একীভূত সর্বময় কর্তৃত্বের অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছেন।