ময়মনসিংহ , শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

‘কেউ আমার মাইয়ার খোঁজ দেয় নাই’

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৬:৫২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নেওয়ায়- প্রথমে থানায় জিডি নিলেও, ৩৮ দিন পর অপহরণ মামলা নেয় পুলিশ। ঘটনার প্রায় দুইমাস পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ স্কুলছাত্রীটি।

এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন ছাত্রীটির পরিবার। দ্রুত কিশোরী মেয়েকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে পরিবার।নিখোঁজ কিশোরীর বাড়িতে গেলে ঘরে ঢুকতেই দেখা যায়, নিখোঁজ মেয়ের পড়ার টেবিলে বসে বই-ব্যাগ নিয়ে কান্না করছেন মেয়েটির মা। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়ে কোথায় কীভাবে আছে, সে বেঁচে আছে কি না জানি না। আমার অতি আদরের মেয়ে ছিল। কত জায়গায় গেলাম, কেউ আমার মাইয়ার খোঁজ দেয় নাই। মেয়েটারেতো খুইজ্জা পাচ্ছি না। আমার মেয়েটা কি মরে গেল?

তিনি আরও বলেন, আমার বুকের ধনটা কোথায় গেল? আমার মেয়েকে ফেরত চাই, মেয়েকে ছাড়া বাঁচবো না। পুলিশ কাজ করছে না, যদি কাজ করত তাহলে আমার মেয়েকে ফেরত পেতাম।উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের একটি গ্রামের মেয়েটি (১২) স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত একই ইউনিয়নের গোল্লাজয়পুর গ্রামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক তরুণ। স্থানীয় উচাখিলা বাজারের বেসরাকরি একটি স্কুলে ছেলেটি পড়ত। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেম নিবেদন করে উত্ত্যক্ত করায় দেড়মাস আগে মেয়েটি তার বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। এরপর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসতেন ও নিয়ে আসতেন বাবা-মা।

মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত না করতে তরুণকেও শাসিয়েছিলেন মেয়েটির বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৮ জুন সকাল ৮টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটি বের হলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় তরুণ ও তার সহযোগীরা।

এ ঘটনায় ছাত্রীটির বাবা ১৯ জুন থানায় প্রথমে একটি নিখোঁজ জিডি করেন। পরে, মেয়েকে তুলে নেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ২৬ জুলাই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হলেও আজ শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এবং কিশোরীকেও উদ্ধার করতে পারেনি।

কিশোরীর বাবা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় মেয়ে আমার কাছে জানিয়েছিল। ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম আমার ছোট্ট মেয়ের পিছু যেন না লাগে। কিন্তু আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। এত দিন হয়ে গেল, আমার মেয়েকে পাচ্ছি না। পুলিশ কিছুই করতে পারছে না, কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। এটাই আমার কষ্ট। আমার ছোট্ট ছেলে ও তার মায়ের কান্না কোনোভাবেই আর সইতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, মেয়েকে তুলে নেওয়ার পর ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দেয়নি।

নিখোঁজ মেয়েটির বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল সে। মেয়েটা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়ের জন্য খুব অসহায় অবস্থায় আছে পরিবারটি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে তাকে খুঁজে বের করা।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, কিশোরীর বাবা প্রথমে নিখোঁজ জিডি করলে আমরা তৎপরতা চালিয়ে জানতে পারি- প্রেম করে চলে গেছে। ছেলের বাড়িতে গিয়েও আমরা কাউকে পাইনি। মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় আমরা তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারছি না। তবে, তাকে উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছি না।

নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জিডি ও মামলায় ভিন্ন তারিখ সম্পর্কে ওসি বলেন, বাদী যেভাবেই অভিযোগ জমা দিয়েছে সেভাবেই মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

‘কেউ আমার মাইয়ার খোঁজ দেয় নাই’

আপডেট সময় ০৬:৫২:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নেওয়ায়- প্রথমে থানায় জিডি নিলেও, ৩৮ দিন পর অপহরণ মামলা নেয় পুলিশ। ঘটনার প্রায় দুইমাস পেরিয়ে গেলেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ স্কুলছাত্রীটি।

এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন ছাত্রীটির পরিবার। দ্রুত কিশোরী মেয়েকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে পরিবার।নিখোঁজ কিশোরীর বাড়িতে গেলে ঘরে ঢুকতেই দেখা যায়, নিখোঁজ মেয়ের পড়ার টেবিলে বসে বই-ব্যাগ নিয়ে কান্না করছেন মেয়েটির মা। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়ে কোথায় কীভাবে আছে, সে বেঁচে আছে কি না জানি না। আমার অতি আদরের মেয়ে ছিল। কত জায়গায় গেলাম, কেউ আমার মাইয়ার খোঁজ দেয় নাই। মেয়েটারেতো খুইজ্জা পাচ্ছি না। আমার মেয়েটা কি মরে গেল?

তিনি আরও বলেন, আমার বুকের ধনটা কোথায় গেল? আমার মেয়েকে ফেরত চাই, মেয়েকে ছাড়া বাঁচবো না। পুলিশ কাজ করছে না, যদি কাজ করত তাহলে আমার মেয়েকে ফেরত পেতাম।উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের একটি গ্রামের মেয়েটি (১২) স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত একই ইউনিয়নের গোল্লাজয়পুর গ্রামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক তরুণ। স্থানীয় উচাখিলা বাজারের বেসরাকরি একটি স্কুলে ছেলেটি পড়ত। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেম নিবেদন করে উত্ত্যক্ত করায় দেড়মাস আগে মেয়েটি তার বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। এরপর মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসতেন ও নিয়ে আসতেন বাবা-মা।

মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত না করতে তরুণকেও শাসিয়েছিলেন মেয়েটির বাবা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৮ জুন সকাল ৮টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য মেয়েটি বের হলে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় তরুণ ও তার সহযোগীরা।

এ ঘটনায় ছাত্রীটির বাবা ১৯ জুন থানায় প্রথমে একটি নিখোঁজ জিডি করেন। পরে, মেয়েকে তুলে নেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ২৬ জুলাই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। ৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হলেও আজ শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এবং কিশোরীকেও উদ্ধার করতে পারেনি।

কিশোরীর বাবা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় মেয়ে আমার কাছে জানিয়েছিল। ছেলেকে নিষেধ করেছিলাম আমার ছোট্ট মেয়ের পিছু যেন না লাগে। কিন্তু আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। এত দিন হয়ে গেল, আমার মেয়েকে পাচ্ছি না। পুলিশ কিছুই করতে পারছে না, কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। এটাই আমার কষ্ট। আমার ছোট্ট ছেলে ও তার মায়ের কান্না কোনোভাবেই আর সইতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, মেয়েকে তুলে নেওয়ার পর ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েকে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দেয়নি।

নিখোঁজ মেয়েটির বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল সে। মেয়েটা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়ের জন্য খুব অসহায় অবস্থায় আছে পরিবারটি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত তৎপরতা চালিয়ে তাকে খুঁজে বের করা।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, কিশোরীর বাবা প্রথমে নিখোঁজ জিডি করলে আমরা তৎপরতা চালিয়ে জানতে পারি- প্রেম করে চলে গেছে। ছেলের বাড়িতে গিয়েও আমরা কাউকে পাইনি। মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় আমরা তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারছি না। তবে, তাকে উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছি না।

নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জিডি ও মামলায় ভিন্ন তারিখ সম্পর্কে ওসি বলেন, বাদী যেভাবেই অভিযোগ জমা দিয়েছে সেভাবেই মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারব।