ময়মনসিংহ , মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে যেভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেন

  • ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:৩২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন। ৮০ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান চরিত্র খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে নেমে দশ বছরের মধ্যেই বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রথম মেয়াদে সরকার গঠনের সময় দেশে আবার সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে যখন হত্যা করা হয়, সেই প্রেক্ষাপটে বিপর্যস্ত বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেছিলেন।

পুতুল থেকে খালেদা জিয়া

জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়।  তিনি বিয়ের পরই তাঁর স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে খালেদা জিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন।

তবে রাজনীতিতে নামার পরই তিনি পরিচিত হন খালেদা জিয়া নামে।

তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসিকে বলেন, সে সময় খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। এর আগে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও খালেদা জিয়া কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হননি।

তার সমালোচকদের অনেকে বলে থাকেন, খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে রাজনীতিক হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী নিয়ে বই প্রকাশ করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তিনি বেঁচে নেই। বইটি প্রকাশের সময় মাহফুজ উল্লাহ বিবিসিকে বলেছিলেন, অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর খালেদা জিয়া পুরুষ শাসিত সমাজে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এসে যোগ্যতা দিয়ে নিজের আসন তৈরি করে নেন।

দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন 

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয় এবং অন্যদিকে নেতাদের অনেকে তখন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সাথে শরিক হন। সব মিলিয়ে দলটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

সেই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন ১৯৮৩ সালের ৩রা জানুয়ারি। প্রথমে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালের ১০ই মে বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা অলি আহমেদ। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময় তাঁর একান্ত সচিব ছিলেন মি: আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের অনুরোধে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন।

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জলপাইগুড়িতে। বিএনপি এই তথ্য জানিয়েছে। তবে তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে। তাঁর বাবার নাম ইস্কান্দর মজুমদার এবং মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।

তাদের আদি ভিটা ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় এবং তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া এলাকায়। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে খালেদা জিয়া হলেন তৃতীয়। তাঁর বড় দুই বোন এবং ছোট দুই ভাই।

তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং বিএনপির নেত্রী সেলিমা রহমান বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও খালেদা জিয়া পারিবারিক কর্তব্য পালনে সক্রিয় থাকতেন।

আপোষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি

খালেদা জিয়া সেই ১৯৮২ সালে যখন বিএনপির নেতৃত্বে আসেন, তখন জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন চলছিল। সেই শাসনের বিরুদ্ধে নয় বছরের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তিনি রাজনীতিতে নিজের এবং দলের অবস্থান তৈরি করেন বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার পরের বছর ১৯৮৩ সালে তিনি সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

অন্যদিকে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আট দলীয় জোট এবং বামপন্থী দলগুলোর পাঁচ দলীয় জোট। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের জোট এরশাদ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

তবে বিএনপির জোট নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নয় বছর রাজপথের আন্দোলনে থাকায় খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনবার।

বিএনপি নিয়ে গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।

তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবক’টি আসনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনের আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা তিন জোটের রূপরেখায় সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ছিল।

সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পর গঠিত পঞ্চম সংসদে সংসদ নেতা হিসাবে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পাল্টিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের জন্য বিল উত্থাপন করেছিলেন এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা পাস হয়।

তখন দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফিরে আসে সংসদীয় সরকার। অলি আহমেদ বলেছেন, মিসেস জিয়ার এই অবদান মানুষের মাঝে বিএনপির অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

প্রধানমন্ত্রী থেকে বিরোধী নেতা

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রথম সরকারের শেষদিকে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

সেই আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ষষ্ঠ সংসদ গঠন করে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ষষ্ঠ সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস করা হয়। তবে সেই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১২দিন। সংসদ ভেঙে দিয়ে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসেছিলেন।

তিনি আরেকবার বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পরাজিত হওয়ার কারণে। তবে তার আগে ২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল তখন তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

অলি আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বা দলের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করতেন। তবে তাঁর মধ্যে সহনশীলতা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে খালেদা জিয়া বিএনপিসহ তাদের জোটের নেতৃত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাতে সফলতা আসেনি।

তখন ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে তাঁকে জেলেও যেতে হয়। খালেদা জিয়া বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী সহ কয়েকটি দলকে নিয়ে চার দলীয় জোট করেছিলেন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।

সেই জোট পরে ২০ দলীয় জোট পরিণত হয়। জোটে ইসলামপন্থী দলের সংখ্যা বেশি ছিল। জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক সমালোচনাও হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার একক দায় নেই বলে মনে করেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ।

দুর্নীতির মামলায় সাজা ও অসুস্থতা 

এরশাদের শাসনামল ছাড়াও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের আটই ফেব্রুয়ারি। তখন তার ১৭ বছরের সাজা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পর্কিত দুর্নীতির দু’টি মামলায়।

তবে দুই বছরের বেশি সময় জেল খেটে অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।

শর্তগুলো ছিল – এই সময়ে তার ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পরবর্তীতে কয়েক দফায় তার সেই মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এরপর খালেদা জিয়া দৃশ্যমান কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। গুলশানের বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। এছাড়া তার ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস, কিডনি ও হৃদরোগের জটিল সমস্যা রয়েছে।

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার আবেদন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় আইনগত কারণে এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।

পরে ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিলো।

এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল।

এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্টেই নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন তাকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে নেয়া হয়েছিলো যাতে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটরসহ জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিলো।

লন্ডনে চার মাস থেকে দেশে ফেরার পরেও খালেদা জিয়াকে কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তিনি গুলশানের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

পাঁচ অগাষ্টের পর মুক্তি, সীমিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

২০২৪ সালের অগাষ্টে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তাকে সীমিত পরিসরে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে যােগ দিতে দেখা গেছে।

সবশেষ ২১শে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। পরে শ্বাসকষ্ট হলে ২২ নভেম্বের তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ৯০ দশক থেকে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের রাজনীতি খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়।

বয়স ও অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় থাকলেও পাঁচই অগাষ্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেলেও, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষই তাকে সম্মানের চোখে দেখেছে।

দলের ভেতরে বিএনপি তাকে রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই সামনে এনেছে সব সময়। সবশেষ নভেম্বেরর শুরুতে যখন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন ঘোষণা  করা হলে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে যেভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেন

আপডেট সময় ০৯:৩২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন। ৮০ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান চরিত্র খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে নেমে দশ বছরের মধ্যেই বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রথম মেয়াদে সরকার গঠনের সময় দেশে আবার সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে যখন হত্যা করা হয়, সেই প্রেক্ষাপটে বিপর্যস্ত বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেছিলেন।

পুতুল থেকে খালেদা জিয়া

জিয়াউর রহমান ১৯৬০ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন, তখন তাদের বিয়ে হয়।  তিনি বিয়ের পরই তাঁর স্বামীর নামের সাথে মিলিয়ে খালেদা জিয়া নাম নিয়েছিলেন বলে তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন।

তবে রাজনীতিতে নামার পরই তিনি পরিচিত হন খালেদা জিয়া নামে।

তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম বিবিসিকে বলেন, সে সময় খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না। এর আগে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও খালেদা জিয়া কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হননি।

তার সমালোচকদের অনেকে বলে থাকেন, খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে রাজনীতিক হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনী নিয়ে বই প্রকাশ করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তিনি বেঁচে নেই। বইটি প্রকাশের সময় মাহফুজ উল্লাহ বিবিসিকে বলেছিলেন, অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর খালেদা জিয়া পুরুষ শাসিত সমাজে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এসে যোগ্যতা দিয়ে নিজের আসন তৈরি করে নেন।

দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন 

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয় এবং অন্যদিকে নেতাদের অনেকে তখন সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সাথে শরিক হন। সব মিলিয়ে দলটি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

সেই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন ১৯৮৩ সালের ৩রা জানুয়ারি। প্রথমে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালের ১০ই মে বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা অলি আহমেদ। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময় তাঁর একান্ত সচিব ছিলেন মি: আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে তাদের অনুরোধে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন।

খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জলপাইগুড়িতে। বিএনপি এই তথ্য জানিয়েছে। তবে তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে। তাঁর বাবার নাম ইস্কান্দর মজুমদার এবং মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।

তাদের আদি ভিটা ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় এবং তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া এলাকায়। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে খালেদা জিয়া হলেন তৃতীয়। তাঁর বড় দুই বোন এবং ছোট দুই ভাই।

তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং বিএনপির নেত্রী সেলিমা রহমান বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও খালেদা জিয়া পারিবারিক কর্তব্য পালনে সক্রিয় থাকতেন।

আপোষহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি

খালেদা জিয়া সেই ১৯৮২ সালে যখন বিএনপির নেতৃত্বে আসেন, তখন জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন চলছিল। সেই শাসনের বিরুদ্ধে নয় বছরের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তিনি রাজনীতিতে নিজের এবং দলের অবস্থান তৈরি করেন বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন।

বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার পরের বছর ১৯৮৩ সালে তিনি সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

অন্যদিকে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আট দলীয় জোট এবং বামপন্থী দলগুলোর পাঁচ দলীয় জোট। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের জোট এরশাদ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

তবে বিএনপির জোট নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নয় বছর রাজপথের আন্দোলনে থাকায় খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনবার।

বিএনপি নিয়ে গবেষণাধর্মী বইয়ের লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।

তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবক’টি আসনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনের আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা তিন জোটের রূপরেখায় সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ছিল।

সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পর গঠিত পঞ্চম সংসদে সংসদ নেতা হিসাবে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পাল্টিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের জন্য বিল উত্থাপন করেছিলেন এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা পাস হয়।

তখন দীর্ঘ ১৬ বছর পর ফিরে আসে সংসদীয় সরকার। অলি আহমেদ বলেছেন, মিসেস জিয়ার এই অবদান মানুষের মাঝে বিএনপির অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।

প্রধানমন্ত্রী থেকে বিরোধী নেতা

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রথম সরকারের শেষদিকে সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

সেই আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এক দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ষষ্ঠ সংসদ গঠন করে খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ষষ্ঠ সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাস করা হয়। তবে সেই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১২দিন। সংসদ ভেঙে দিয়ে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসেছিলেন।

তিনি আরেকবার বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পরাজিত হওয়ার কারণে। তবে তার আগে ২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল তখন তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

অলি আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বা দলের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করতেন। তবে তাঁর মধ্যে সহনশীলতা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলে খালেদা জিয়া বিএনপিসহ তাদের জোটের নেতৃত্ব দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাতে সফলতা আসেনি।

তখন ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারিয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে তাঁকে জেলেও যেতে হয়। খালেদা জিয়া বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী সহ কয়েকটি দলকে নিয়ে চার দলীয় জোট করেছিলেন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।

সেই জোট পরে ২০ দলীয় জোট পরিণত হয়। জোটে ইসলামপন্থী দলের সংখ্যা বেশি ছিল। জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক সমালোচনাও হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার একক দায় নেই বলে মনে করেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ।

দুর্নীতির মামলায় সাজা ও অসুস্থতা 

এরশাদের শাসনামল ছাড়াও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়া জেলে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের আটই ফেব্রুয়ারি। তখন তার ১৭ বছরের সাজা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পর্কিত দুর্নীতির দু’টি মামলায়।

তবে দুই বছরের বেশি সময় জেল খেটে অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।

শর্তগুলো ছিল – এই সময়ে তার ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। পরবর্তীতে কয়েক দফায় তার সেই মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এরপর খালেদা জিয়া দৃশ্যমান কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। গুলশানের বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। এছাড়া তার ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস, কিডনি ও হৃদরোগের জটিল সমস্যা রয়েছে।

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার আবেদন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় আইনগত কারণে এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।

পরে ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিলো।

এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল।

এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্টেই নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তখন তাকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে নেয়া হয়েছিলো যাতে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প ও উন্নত কার্ডিয়াক মনিটরসহ জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিলো।

লন্ডনে চার মাস থেকে দেশে ফেরার পরেও খালেদা জিয়াকে কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তিনি গুলশানের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।

পাঁচ অগাষ্টের পর মুক্তি, সীমিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

২০২৪ সালের অগাষ্টে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তাকে সীমিত পরিসরে দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে যােগ দিতে দেখা গেছে।

সবশেষ ২১শে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। পরে শ্বাসকষ্ট হলে ২২ নভেম্বের তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ৯০ দশক থেকে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের রাজনীতি খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়।

বয়স ও অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়া দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় থাকলেও পাঁচই অগাষ্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেলেও, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষই তাকে সম্মানের চোখে দেখেছে।

দলের ভেতরে বিএনপি তাকে রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই সামনে এনেছে সব সময়। সবশেষ নভেম্বেরর শুরুতে যখন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়ন ঘোষণা  করা হলে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।