ময়মনসিংহ , শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
প্রতিটি জেলা- উপজেলায় একজন করে ভিডিও প্রতিনিধি আবশ্যক। যোগাযোগঃ- Email- matiomanuss@gmail.com. Mobile No- 017-11684104, 013-03300539.

চলনবিল প্রাণ হারাচ্ছে

চলনবিল দেশের বৃহত্তম বিল; যা বর্তমানে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা জুড়ে বিস্তৃত। থই থই পানি, পাখ-পাখালি আর নানা দেশীয় প্রজাতির মাছে একসময় ভরপুর থাকত এই বিশাল জলাভূমি। বিশেষ করে মাছ ও ধান উত্পাদনে এই বিলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দখল-দূষণে নদীনালার পানিপ্রবাহ হ্রাস ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন, কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ, বিলের বুক চিরে সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও পলি ভরাট হয়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে চলনবিল।

পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেছে চলনবিলকেন্দ্রিক আত্রাই, নন্দকুঁজা ও গুমানী, বড়ালসহ ২২টি নদনদী। নানা পন্থায় শাসনের ফলে ৮০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে পানিসম্পন্ন এই বিল গত ৫ দশকে মাত্র ৬৬ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বিলের জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের বহু মানুষ। ভয়াবহ বিপর্যয় ধেয়ে আসলেও চলনবিলের উন্নয়নে সরকারের কার্যত কোনো প্রকল্প নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মো. রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে— প্রায় তিন দশক আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছর জুড়েই ৬ থেকে ১২ ফুট পানি থাকত। ফলে সারা বছর নৌচলাচল করত। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে বিস্তীর্ণ বিল আর প্রবহমান নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর ২২২১ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রবেশ করে। পানি নেমে গেলে ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বর্ষায় চলনবিল ত্যাগ করে। অবশিষ্ট ২১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদনদীসহ চলনবিলে রয়ে যায়।

সিইজিআইএসের গবেষণা বলছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে চলনবিলে পোল্ডারের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে ১৪তে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে পানি নিয়ন্ত্রণের স্থাপনার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয় ১৮০। ফলাফল হিসেবে ২৩০ বর্গকিলোমিটার কমে ঐ বছরের শুষ্ক মৌসুমে চলনবিলের মাত্র ৮০ বর্গকিলোমিটারে পানি ছিল। ২০১৫ সালের দিকে পোল্ডারের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়। পানি নিয়ন্ত্রণমূলক স্থাপনার সংখ্যা হয় ২১৫। ‘বদ্ধ পানিতে মাছ চাষ’ পদ্ধতি অবলম্বন করে গড়ে তোলা হয় হাজার হাজার অপরিকল্পিত পুকুর। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চলনবিলে পানি ছিল মাত্র ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

বড়ালের মুখে সরু স্লুইসগেটে বড় সর্বনাশ :নদীটির নাম বড়াল। পদ্মায় জন্ম আর যমুনায় বিলীন। ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর পেট চিরে জন্মেছে নদীনালা, খাল-বিল। পদ্মা-যমুনার পানি এই নদী হয়েই গড়িয়ে পড়ত দেশের সর্ববৃহত্ চলনবিলে। অথচ ৫০০ ফিট প্রস্থের নদীটির উত্সমুখে ১৯৮৪ সালে নির্মিত হয়েছে তিন কপাটের একটি সরু স্লুুইসগেট। সেই থেকে বড়াল তার যৌবন হারিয়েছে। একই সঙ্গে চলনবিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ২২টি নদী, শ দুয়েক নালা এবং অন্তত ২৫০টি বিল মৃতপ্রায় হয়ে গেছে। ১৯৮৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে মিলিয়ে গেছে বেশকিছু নদীর চিহ্ন।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, বড়াল নদীতে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ৩৮ বছরে ২২০ কিলোমিটার নদীর মধ্যে বড়ালের ১২০ কিলোমিটার বেদখল হয়েছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাব পড়েছে চলনবিলে। চারঘাট পৌরসভা বড়াল নদীর ১৪০০ ফিট দখল করে মার্কেট-স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এছাড়া পাবনার আটঘরিয়া থেকে বনপাড়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নদী দখল করে সরকারি অফিসসহ ব্যক্তিমালিকানায় বহু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন সমস্যা চলনবিলে বিশ্ববিদ্যালয় :সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় পূর্ব চলনবিলের শেষ অংশে এসে খাল, বিল, বড়ালসহ অর্ধশত নদীর পানি মিলেমিশে একাকার। অন্তত শতাধিক উত্স থেকে আসা পানির সম্মিলিত প্রবাহ যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। অথচ উন্মুক্ত পানির সেই প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে অধিক ব্যয়ে এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে চায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালবিল আর নদীর মিলনস্থলে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পানির প্রবাহ বন্ধ হবে, যা চলনবিলের জলজ বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অন্যদিকে পানির এই শক্তিশালী প্রবাহ বাধা পেলে তা আশপাশের এলাকার জন্য জলাবদ্ধতা ও বন্যার প্রকোপ বাড়িয়ে তুলবে।

খনন হলেও ফেরেনি নাব্যতা : চলনবিলের বুক চিড়ে যে কয়টি নদীর প্রবাহ তার মধ্যে অন্যতম বড়াল, আত্রাই, গুমানী ও তুলশীগঙ্গা। বাঘাবাড়ী থেকে উত্তর জনপদের প্রায় আটটি জেলাতে নৌ চলাচলের মাধ্যম ছিল এসব নদী। জৌলুশ ফেরাতে বছর দুয়েক আগে এই চারটি নদীর কিছু কিছু অংশ খনন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল নদীর প্রস্থ ও গভীরতা বৃদ্ধি এবং নাব্যতা ফেরানো। যাতে নৌ-চলাচলে গতি বাড়ে, বিল এলাকার মানুষ নদীর পানিতে সেচ সুবিধা পান এবং উন্মুক্ত জলরাশিতে মাছ শিকার করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই হয়নি। নদী খনন করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নাব্যতা ফেরেনি। খননের উচ্ছিষ্ট মাটিতেই আবার সংকুচিত হয়েছে এসব নদী। নদী পাড়ের বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিটি নদী খননের ক্ষেত্রেই নানা অনিয়ম অসঙ্গতি ফুটে উঠে। কোনো নদীই ঠিকঠাক খনন করা হয়নি। ফলে বিল আর নদীতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় ভূগর্ভস্ত পানির স্তরও আশঙ্কাজনকহারে নিচে নেমেছে।

নদী রক্ষা আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দখলের কবলে পড়ে চলনবিল এবং নদী নালায় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া চলনবিল অঞ্চলের কয়েকটি শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য বড়াল, নন্দকুঁজাসহ কয়েকটি নদীর পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করায় পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও।

জেলেদের দুর্দিন ও পেশা বদল : স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী সংলগ্ন এলাকায় ফসলহানি, নদী ও বিলের পানি দূষণ করায় দুর্গন্ধ-রোগবালাই ছড়াচ্ছে। একশ্রেণির ভূমিদস্যু দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় জলাশয় ও ফসলি জমি কমছে। এতে করে জেলে-কৃষক, ব্যবসায়ীরা বেকার ও দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের চলনবিল মত্স্য প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ হতে ২০০৬ সালের মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা যায়—১৯৮২ সালে মোট ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬১ জন জেলে চলনবিল এবং নদ-নদী ও খাল জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পর্যায়ক্রমে কমতে কমতে ২০০৬ সালে জেলের সংখ্যা ৭৫ হাজারে দাঁড়ায়। বর্তমানে চলনবিলের জেলেরা পেশা বদলেছেন। যারা এই পেশায় আছেন খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দুর্দিন পার করছেন।

চলনবিল রক্ষায় আন্দোলন : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বড়াল রক্ষা আন্দোলন, চলনবিল রক্ষা আন্দোলন, নাগরিক সমাজ নামের বিভিন্ন সংগঠন ২০০৮ সাল থেকে চলনবিল ও নদ-নদী রক্ষায় আন্দোলনে নামে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে নদী পাড়ের চার জেলার আট উপজেলার মানুষ নিয়ে রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা নদীর উত্স মুখ থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীঘাট পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথিবীর বৃহত্তম মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির ডিএম আলমগীর ইত্তেফাককে জানান, চলনবিলের দূষণ রোধ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বড়াল নদী চালু ও তা রক্ষার জন্য জনদাবির মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাস্কফোর্স গঠন করে। নদী বিষয়ক টাস্কফোর্স এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় বড়াল নদীর সব বাধা অপসারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে বিলের জৌলুশ ফেরাতে এবং নদী উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি।

চলনবিল বাঁচাতে করণীয় : চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ধুঁকতে থাকা চলনবিলের প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চলনবিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জলাশয় সৃষ্টি ও প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী বড়াল দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফেরাতে হবে। বাঁধ অপসারণ, অন্যান্য নদী পুনঃখনন, অপ্রয়োজনীয় স্লুইসগেটগুলো অপসারণ ও ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনতে হবে চলনবিলের প্রধান নদ-নদী। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। নদী দখলমুুক্ত করে পানির প্রবাহ ফেরানো গেলে আবারও চলনবিল প্রাণ ফিরে পাবে।’

চলনবিল ও এখানকার বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছেন বাস্তুতন্ত্র গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যপক ড. মো. মনিরুজ্জামান সরকার। চলনবিলকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে তা সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এই গবেষকের। তিনি মনে করেন, চলনবিল শুধু একটি বৃহত্ বিল-ই নয়, এটি একটি বৃহত্ জলজ বাস্তুতন্ত্রের আধার। এই বিলের প্রাণ ফিয়ে আনা সম্ভব। চলনবিলকে বাঁচাতে হলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। একই সঙ্গে বিল অঞ্চলে নতুন করে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করতে না দেওয়া। তাছাড়া চলনবিলে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্র গবেষকদের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিলকে যথেচ্ছভাবে দূষণরোধে সরকারিভাবে কর্মসূচি নিয়ে, প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, “চলনবিল উদ্ধার, সংরক্ষণ ও রক্ষায় একটি ‘চলনবিল কর্তৃপক্ষ’ গঠন করতে হবে। অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইসগেট অপসারণ এবং সিএস নকসা অনুযায়ী চলনবিল এলাকার সব নদী, খাল ও জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ করে দখল ও দূষণমুক্ত করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। খুব দ্রুত বন্ধ করতে হবে চলনবিলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা।”

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বছরখানেক আগে ‘বড়াল নদীর অববাহিকায় পানি সম্পদ পুনরুদ্ধার’ নামে একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়ে ২ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বড়াল নদীর ১০৪ কিলোমিটার, নারোদ নদীর ৪৩ কিলোমিটার এবং মুসাখাঁ নদীর ৬ কিলোমিটার খননের কথা বলা হয়েছে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মো. রিফাত করিম  ইত্তেফাককে জানান, বড়ালের উত্সমুখে নির্মিত স্লুইসগেটটি বর্তমানে কোনো কাজে আসছে না। স্লুইসগেটটি অপসারণ করে বড়াল খনন করা হলে চলনবিল ও অন্যান্য নদী বড়ালের পানিতেই প্লাবিত হবে। দূর হবে চলনবিলের সংকট।

সম্প্রতি বড়াল নদীর চারঘাট এলাকা পরিদর্শনে এসে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নদীগুলোতে এতো দিনের দখল-দূষণ স্বল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি বিভাগের একটি করে নদী দখল-দূষণ মুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন তারা। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায়ও একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার রূপরেখা করা হবে।’

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চলনবিল প্রাণ হারাচ্ছে

আপডেট সময় ০৯:৩৮:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

চলনবিল দেশের বৃহত্তম বিল; যা বর্তমানে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা জুড়ে বিস্তৃত। থই থই পানি, পাখ-পাখালি আর নানা দেশীয় প্রজাতির মাছে একসময় ভরপুর থাকত এই বিশাল জলাভূমি। বিশেষ করে মাছ ও ধান উত্পাদনে এই বিলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দখল-দূষণে নদীনালার পানিপ্রবাহ হ্রাস ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন, কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ, বিলের বুক চিরে সড়ক-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও পলি ভরাট হয়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে চলনবিল।

পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেছে চলনবিলকেন্দ্রিক আত্রাই, নন্দকুঁজা ও গুমানী, বড়ালসহ ২২টি নদনদী। নানা পন্থায় শাসনের ফলে ৮০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে পানিসম্পন্ন এই বিল গত ৫ দশকে মাত্র ৬৬ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বিলের জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের বহু মানুষ। ভয়াবহ বিপর্যয় ধেয়ে আসলেও চলনবিলের উন্নয়নে সরকারের কার্যত কোনো প্রকল্প নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মো. রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে— প্রায় তিন দশক আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছর জুড়েই ৬ থেকে ১২ ফুট পানি থাকত। ফলে সারা বছর নৌচলাচল করত। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে বিস্তীর্ণ বিল আর প্রবহমান নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর ২২২১ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রবেশ করে। পানি নেমে গেলে ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বর্ষায় চলনবিল ত্যাগ করে। অবশিষ্ট ২১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদনদীসহ চলনবিলে রয়ে যায়।

সিইজিআইএসের গবেষণা বলছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে চলনবিলে পোল্ডারের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে ১৪তে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে পানি নিয়ন্ত্রণের স্থাপনার সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয় ১৮০। ফলাফল হিসেবে ২৩০ বর্গকিলোমিটার কমে ঐ বছরের শুষ্ক মৌসুমে চলনবিলের মাত্র ৮০ বর্গকিলোমিটারে পানি ছিল। ২০১৫ সালের দিকে পোল্ডারের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়। পানি নিয়ন্ত্রণমূলক স্থাপনার সংখ্যা হয় ২১৫। ‘বদ্ধ পানিতে মাছ চাষ’ পদ্ধতি অবলম্বন করে গড়ে তোলা হয় হাজার হাজার অপরিকল্পিত পুকুর। ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে চলনবিলে পানি ছিল মাত্র ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

বড়ালের মুখে সরু স্লুইসগেটে বড় সর্বনাশ :নদীটির নাম বড়াল। পদ্মায় জন্ম আর যমুনায় বিলীন। ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর পেট চিরে জন্মেছে নদীনালা, খাল-বিল। পদ্মা-যমুনার পানি এই নদী হয়েই গড়িয়ে পড়ত দেশের সর্ববৃহত্ চলনবিলে। অথচ ৫০০ ফিট প্রস্থের নদীটির উত্সমুখে ১৯৮৪ সালে নির্মিত হয়েছে তিন কপাটের একটি সরু স্লুুইসগেট। সেই থেকে বড়াল তার যৌবন হারিয়েছে। একই সঙ্গে চলনবিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ২২টি নদী, শ দুয়েক নালা এবং অন্তত ২৫০টি বিল মৃতপ্রায় হয়ে গেছে। ১৯৮৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে মিলিয়ে গেছে বেশকিছু নদীর চিহ্ন।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব এস এম মিজানুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, বড়াল নদীতে অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে ৩৮ বছরে ২২০ কিলোমিটার নদীর মধ্যে বড়ালের ১২০ কিলোমিটার বেদখল হয়েছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাব পড়েছে চলনবিলে। চারঘাট পৌরসভা বড়াল নদীর ১৪০০ ফিট দখল করে মার্কেট-স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এছাড়া পাবনার আটঘরিয়া থেকে বনপাড়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নদী দখল করে সরকারি অফিসসহ ব্যক্তিমালিকানায় বহু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

নতুন সমস্যা চলনবিলে বিশ্ববিদ্যালয় :সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া এলাকায় পূর্ব চলনবিলের শেষ অংশে এসে খাল, বিল, বড়ালসহ অর্ধশত নদীর পানি মিলেমিশে একাকার। অন্তত শতাধিক উত্স থেকে আসা পানির সম্মিলিত প্রবাহ যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। অথচ উন্মুক্ত পানির সেই প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে অধিক ব্যয়ে এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে চায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালবিল আর নদীর মিলনস্থলে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পানির প্রবাহ বন্ধ হবে, যা চলনবিলের জলজ বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, অন্যদিকে পানির এই শক্তিশালী প্রবাহ বাধা পেলে তা আশপাশের এলাকার জন্য জলাবদ্ধতা ও বন্যার প্রকোপ বাড়িয়ে তুলবে।

খনন হলেও ফেরেনি নাব্যতা : চলনবিলের বুক চিড়ে যে কয়টি নদীর প্রবাহ তার মধ্যে অন্যতম বড়াল, আত্রাই, গুমানী ও তুলশীগঙ্গা। বাঘাবাড়ী থেকে উত্তর জনপদের প্রায় আটটি জেলাতে নৌ চলাচলের মাধ্যম ছিল এসব নদী। জৌলুশ ফেরাতে বছর দুয়েক আগে এই চারটি নদীর কিছু কিছু অংশ খনন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল নদীর প্রস্থ ও গভীরতা বৃদ্ধি এবং নাব্যতা ফেরানো। যাতে নৌ-চলাচলে গতি বাড়ে, বিল এলাকার মানুষ নদীর পানিতে সেচ সুবিধা পান এবং উন্মুক্ত জলরাশিতে মাছ শিকার করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই হয়নি। নদী খনন করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নাব্যতা ফেরেনি। খননের উচ্ছিষ্ট মাটিতেই আবার সংকুচিত হয়েছে এসব নদী। নদী পাড়ের বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিটি নদী খননের ক্ষেত্রেই নানা অনিয়ম অসঙ্গতি ফুটে উঠে। কোনো নদীই ঠিকঠাক খনন করা হয়নি। ফলে বিল আর নদীতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় ভূগর্ভস্ত পানির স্তরও আশঙ্কাজনকহারে নিচে নেমেছে।

নদী রক্ষা আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দখলের কবলে পড়ে চলনবিল এবং নদী নালায় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া চলনবিল অঞ্চলের কয়েকটি শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য বড়াল, নন্দকুঁজাসহ কয়েকটি নদীর পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করায় পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও।

জেলেদের দুর্দিন ও পেশা বদল : স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী সংলগ্ন এলাকায় ফসলহানি, নদী ও বিলের পানি দূষণ করায় দুর্গন্ধ-রোগবালাই ছড়াচ্ছে। একশ্রেণির ভূমিদস্যু দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখায় জলাশয় ও ফসলি জমি কমছে। এতে করে জেলে-কৃষক, ব্যবসায়ীরা বেকার ও দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের চলনবিল মত্স্য প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ হতে ২০০৬ সালের মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা যায়—১৯৮২ সালে মোট ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬১ জন জেলে চলনবিল এবং নদ-নদী ও খাল জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পর্যায়ক্রমে কমতে কমতে ২০০৬ সালে জেলের সংখ্যা ৭৫ হাজারে দাঁড়ায়। বর্তমানে চলনবিলের জেলেরা পেশা বদলেছেন। যারা এই পেশায় আছেন খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দুর্দিন পার করছেন।

চলনবিল রক্ষায় আন্দোলন : বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বড়াল রক্ষা আন্দোলন, চলনবিল রক্ষা আন্দোলন, নাগরিক সমাজ নামের বিভিন্ন সংগঠন ২০০৮ সাল থেকে চলনবিল ও নদ-নদী রক্ষায় আন্দোলনে নামে। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে নদী পাড়ের চার জেলার আট উপজেলার মানুষ নিয়ে রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা নদীর উত্স মুখ থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীঘাট পর্যন্ত ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথিবীর বৃহত্তম মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির ডিএম আলমগীর ইত্তেফাককে জানান, চলনবিলের দূষণ রোধ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বড়াল নদী চালু ও তা রক্ষার জন্য জনদাবির মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাস্কফোর্স গঠন করে। নদী বিষয়ক টাস্কফোর্স এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় বড়াল নদীর সব বাধা অপসারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে বিলের জৌলুশ ফেরাতে এবং নদী উদ্ধারে এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি।

চলনবিল বাঁচাতে করণীয় : চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক এস এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ধুঁকতে থাকা চলনবিলের প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। চলনবিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, জলাশয় সৃষ্টি ও প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী বড়াল দখলমুক্ত করে নাব্যতা ফেরাতে হবে। বাঁধ অপসারণ, অন্যান্য নদী পুনঃখনন, অপ্রয়োজনীয় স্লুইসগেটগুলো অপসারণ ও ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় আনতে হবে চলনবিলের প্রধান নদ-নদী। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। নদী দখলমুুক্ত করে পানির প্রবাহ ফেরানো গেলে আবারও চলনবিল প্রাণ ফিরে পাবে।’

চলনবিল ও এখানকার বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছেন বাস্তুতন্ত্র গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যপক ড. মো. মনিরুজ্জামান সরকার। চলনবিলকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে তা সংরক্ষণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি এই গবেষকের। তিনি মনে করেন, চলনবিল শুধু একটি বৃহত্ বিল-ই নয়, এটি একটি বৃহত্ জলজ বাস্তুতন্ত্রের আধার। এই বিলের প্রাণ ফিয়ে আনা সম্ভব। চলনবিলকে বাঁচাতে হলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। একই সঙ্গে বিল অঞ্চলে নতুন করে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করতে না দেওয়া। তাছাড়া চলনবিলে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্র গবেষকদের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিলকে যথেচ্ছভাবে দূষণরোধে সরকারিভাবে কর্মসূচি নিয়ে, প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

তিনি বলেন, “চলনবিল উদ্ধার, সংরক্ষণ ও রক্ষায় একটি ‘চলনবিল কর্তৃপক্ষ’ গঠন করতে হবে। অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইসগেট অপসারণ এবং সিএস নকসা অনুযায়ী চলনবিল এলাকার সব নদী, খাল ও জলাশয়ের সীমানা নির্ধারণ করে দখল ও দূষণমুক্ত করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। খুব দ্রুত বন্ধ করতে হবে চলনবিলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা।”

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বছরখানেক আগে ‘বড়াল নদীর অববাহিকায় পানি সম্পদ পুনরুদ্ধার’ নামে একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়ে ২ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বড়াল নদীর ১০৪ কিলোমিটার, নারোদ নদীর ৪৩ কিলোমিটার এবং মুসাখাঁ নদীর ৬ কিলোমিটার খননের কথা বলা হয়েছে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মো. রিফাত করিম  ইত্তেফাককে জানান, বড়ালের উত্সমুখে নির্মিত স্লুইসগেটটি বর্তমানে কোনো কাজে আসছে না। স্লুইসগেটটি অপসারণ করে বড়াল খনন করা হলে চলনবিল ও অন্যান্য নদী বড়ালের পানিতেই প্লাবিত হবে। দূর হবে চলনবিলের সংকট।

সম্প্রতি বড়াল নদীর চারঘাট এলাকা পরিদর্শনে এসে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নদীগুলোতে এতো দিনের দখল-দূষণ স্বল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি বিভাগের একটি করে নদী দখল-দূষণ মুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন তারা। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায়ও একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার রূপরেখা করা হবে।’